নিজস্ব সংবাদদাতা • শ্রীরামপুর |
ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হলেন এক মহিলা। পরে জানা গেল, তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন। কোনও শিশু চুরির ঘটনাও ঘটেনি। গোটাটাই গুজব!
বুধবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে শ্রীরামপুরে। গত কয়েক দিন ধরেই ছেলেধরা বেরিয়েছে বলে গুজব ছড়িয়েছে শহর জুড়ে। দিন তিনেক আগেও এক নিরীহ যুবককে ছেলেধরা সন্দেহে মারধর করা হয়। কারা, কী উদ্দেশে এমন গুজব ছড়াচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্তারা। এলাকার মানুষকে শান্ত ও সংযত থাকারও পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
শ্রীরামপুরের এসডিপিও রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “শিশু চুরির কোনও ঘটনাই ঘটেনি। মনে হচ্ছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। পুলিশ নজর রাখছে। যারা গুজব ছড়াচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করে পুলিশ কড়া ব্যবস্থা নেবে।” বিষয়টি নিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় পুর-কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠকও করেন শ্রীরামপুর থানার আইসি তথাগত পাণ্ডে।
কী হয়েছিল এ দিন?
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবক, বেলা পৌনে ৩টে নাগাদ শহরের ঝাউতলায় মাঝবয়সী ওই মহিলাকে ঘিরে ধরে আচমকাই মারধর শুরু করে কিছু লোক। তাদের দাবি, ওই মহিলা এক শিশুকে নিয়ে পালানোর চেষ্টায় ছিলেন। কয়েকশো মানুষের ভিড় ঘিরে থাকলেও কেউ প্রতিবাদ করতে এগিয়ে আসেনি। মহিলা যে মানসিক ভারসাম্যহীন, তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়নি কারও মধ্যে। ঘটনাচক্রে সে সময়ে ওই এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন বাসুদেব আচার্য নামে শ্রীরামপুর থানার এক এএসআই। তিনি ওই মহিলাকে উত্তেজিত জনতার হাত থেকে উদ্ধার করেন। আরও পুলিশ আসে। মহিলা যে মানসিক ভারসাম্যহীন, তা ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়েই স্পষ্ট হয়ে যায়। নিমেষে পাতলা হতে থাকে ভিড়। গুঞ্জন ভেসে আসে, “এ হে, এটা তো আগে ভেবে দেখা দরকার ছিল।”
মহিলাকে উদ্ধার করে শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। কিন্তু জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁর চিকিৎসা করতে রাজি হননি বলে অভিযোগ। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে একপ্রস্থ বচসা হয় তাঁর। শিপ্রা মণ্ডল নামে ওই চিকিৎসক দাবি করেন, আগে ‘রিক্যুইজিশন’ জমা করতে হবে। পুলিশ অফিসারেরা তাঁকে বলেন, ওই মহিলা মানসিক ভারসাম্যহীন। তাঁর পরিচয় পাওয়া যায়নি। মহিলার কথাবার্তাও ভাল বোঝা যাচ্ছে না। এ দিকে তাঁর অবিলম্বে চিকিৎসার প্রয়োজন। পুলিশই তাঁকে ভর্তির দায়িত্ব নেবে। তা সত্ত্বেও ওই চিকিৎসক কিছু শুনতে চাননি বলে অভিযোগ। শেষমেশ পুলিশ ওই মহিলাকে থানায় নিজেদের হেফাজতে নিয়ে আসে। চিকিৎসারও ব্যবস্থা করা হয়। শিপ্রাদেবী পরে দাবি করেন, “ওই মহিলাকে পরীক্ষা করব না, এমন কথা আমি বলিনি।” |