ফের প্রশ্নে দমকলের পরিকাঠামো
পাতকুয়ো থেকে তিন ঘণ্টা পরে উদ্ধার, প্রৌঢ়ের মৃত্যু
বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের পরিকাঠামো বাড়ানো অনেকটা যে কথার কথা, ফের তার প্রমাণ মিলল।
পাতকুয়োয় পড়ে যাওয়া একটা মানুষকে উদ্ধার করতে সময় লেগে গেল প্রায় তিন ঘণ্টা। কিন্তু উদ্ধার করার পরে দেখা গেল তিনি মৃত।
খোদ হাওড়া শহরের ঘটনা। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ শিবপুরের
প্রেমা রাই।
আন্দুল রোড সংলগ্ন নস্করপাড়া লেনে পাশের বাড়ির পাতকুয়োয় স্নান করতে গিয়ে তার মধ্যে পড়ে যান প্রেমা রাই (৪২) নামে এক ব্যক্তি। প্রেমাবাবু মৃগী রোগী ছিলেন। বেশ গভীর পাতকুয়াটির উপরের বেড় ছিল খুব নিচু। অন্যান্য দিনের মতো এ দিনও প্রেমাবাবুর সঙ্গে স্নান করছিল তাঁর ছোট ছেলে রঘু। সে-ই পুলিশকে জানায়, বাবা স্নান করার সময় মৃগী রোগে আক্রান্ত হয়ে তার সামনেই পাতকুয়োয় পড়ে যান। রঘুই বাড়ির এবং পাড়ার লোকজনকে খবর দেয়। খবর যায় দমকলে। দুপুর ১২টার মধ্যে দমকল এসে উদ্ধারকার্যে নামে।
এলাকাবাসীদের অভিযোগ, দমকলকর্মীরা এসে প্রথম থেকেই একটি দড়ির মুখে লোহার কাঁটা লাগিয়ে ওই ব্যক্তির গায়ে বিঁধিয়ে উপরে টেনে তোলার চেষ্টা শুরু করেন।
কিন্তু কোনও দমকলকর্মীই পাতকুয়োয় নেমে ওই ব্যক্তিকে উদ্ধারের চেষ্টা করেননি। পরে স্থানীয় জনতার চাপে পাম্প বসিয়ে পাতকুয়ো থেকে দমকল জল তুলতে শুরু করে বলে এলাকার বাসিন্দাদের দাবি। তাতেও কোনও বিশেষ লাভ না হওয়ায় শেষে খবর দেওয়া হয় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরকে। ততক্ষণে কেটে গিয়েছে প্রায় দু’ঘণ্টা। পুলিশ জানায়, এর পরে দুপুর আড়াইটে নাগাদ ঘটনাস্থলে আসেন বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা। তাঁরা পাতকুয়োয় নেমে ওই ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেন।
এলাকার বাসিন্দা রমেন বৈদ্যর অভিযোগ, “ঘটনাস্থলে পৌঁছেই দমকলকর্মীরা যদি পাতকুয়োয় নেমে ওই ব্যক্তিকে উদ্ধারের ব্যাপারে সচেষ্ট হতেন, তা হলে ওই ব্যক্তিকে বাঁচানো যেত। তা না করে দমকল শুধু লোহার কাঁটা দিয়ে খুঁ্চিয়ে ওঁকে ক্ষতবিক্ষত করেছে।”
দমকলকর্মীরা পাতকুয়োয় নেমে উদ্ধার না করে লোহার কাঁটা দিয়ে উদ্ধারের চেষ্টা করলেন কেন?
ঘটনাস্থলে আসা হাওড়া দমকল দফতরের সাব অফিসার তাপস কুশারি নিজেদের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে বলেন, “আমাদের যন্ত্রপাতি যা রয়েছে, তা দিয়ে পাতকুয়োয় নামা যায় না। এর জন্য গ্যাস মুখোশ অথবা পাতকুয়োয় নামার মতো প্রশিক্ষিত লোক লাগে। তা আমাদের নেই। তাই আমরা পারিনি।”
প্রশ্ন হল, এত ঘটনার পরেও পাতকুয়োয় পড়ে যাওয়া কাউকে উদ্ধারের ব্যাপারে দমকলের পরিকাঠামোর উন্নতি হল না কেন? বিশেষত যখন গত বছর ২৫ জুন হাওড়ার লিলুয়ার লক্ষ্মণপুরে রোশন মণ্ডল নামে এক কিশোরের মৃতদেহ পাতকুয়ো থেকে ৭ ঘণ্টা বাদে উদ্ধারের ঘটনার পরে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল খুব দ্রুত উন্নত করা হবে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের পরিকাঠামো। ঠিক হয়েছিল, রাজ্যের প্রতিটি দমকল কেন্দ্রে পাতকুয়োর মিস্ত্রি নিয়োগ করা হবে।। কিন্তু ন’মাসেও তা কার্যকর হল না কেন?
দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান বলেন, “আমরা ৮ জন কুয়োমিস্ত্রিকে ইতিমধ্যে নিয়েছি। আসলে ওঁদের চাকরিতে নিতে গিয়ে কয়েক জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকায় সিভিল ডিফেন্সের আইন পরিবর্তন করতে হয়েছে। প্রশিক্ষণ দিতে হচ্ছে। তাই এই দেরি।” মন্ত্রী জানান, দমকলের জন্য ইতিমধ্যে গা্যস মুখোশ ও অন্যান্য সরঞ্জামও এসে গিয়েছে। খুব শীঘ্রই তা রাজ্যের বিভিন্ন দমকল কেন্দ্রগুলিতে পাঠানো হবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.