নিজস্ব সংবাদদাতা • সিঙ্গুর |
‘মাস্টারমশাই’য়ের গলায় নরম সুর শোনা যাচ্ছে কিছু দিন ধরেই। কিন্তু তাঁর ‘রাজনৈতিক শিষ্য’ তাঁকে খোঁচা দিতে ছাড়ছেন না।
বুধবার সিঙ্গুরের মল্লিকপুরে রাজ্য সরকারের প্রস্তাবিত ‘ট্রমা সেন্টার’-এর শিলান্যাস অনুষ্ঠানে ফের কৃষি প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্না নাম না করে খোঁচা দিলেন দলের ‘বিদ্রোহী’ বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে। বেচারামবাবু বলেন, “অনেকেই মমতার উন্নয়ন নিয়ে কটাক্ষ, সমালোচনা করেন। কেউ কেউ এমনও বলেন, তিনি তার আদর্শ নন। কিন্তু আমি জোর গলায় বলতে চাই, রাজ্য জুড়ে মমতার নেতৃত্বে যে কর্মযজ্ঞ চলছে, তাতে তিনিই আমার আদর্শ।”
মাস কয়েক আগে কৃষিমন্ত্রীর পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দেন রবীন্দ্রনাথবাবু। দলের একাংশের তোলাবাজির বিরুদ্ধেও তিনি সরব হন। সিঙ্গুরের ‘মাস্টারমশাই’ রবীন্দ্রনাথবাবু তখন এ-ও বলেছিলেন, “মমতা আমার আদর্শ নন।” তার পরে পাল্টা রবীন্দ্রনাথবাবুর ছেলের বিরুদ্ধেই তোলাবাজির অভিযোগ তোলেন বেচারামবাবু। এ নিয়ে দু’পক্ষের চাপান-উতোরে রাজনৈতিক তরজা জমে ওঠে। তার পরে বুধবারই ‘গুরু-শিষ্য’ এক মঞ্চে পাশাপাশি দাঁড়ালেন। কৃষি প্রতিমন্ত্রী মঞ্চ থেকেই বলেন, “কেউ কেউ মাথায় গামছা জড়িয়ে, ধানের আঁটি নিয়ে কৃষক-দরদি সাজছে। কিন্তু আমাদের দলনেত্রী যে প্রকৃতই কৃষক-দরদি সেটা বোঝাতে কৃষকদের জন্য কাজকেই হাতিয়ার করেছেন।” প্রসঙ্গত, মাথায় গামছা দেওয়া রবীন্দ্রনাথবাবুর ছবি সংবাদমাধ্যমে আগে দেখা গিয়েছিল। |
সিঙ্গুরে ‘ট্রমা সেন্টার’-এর শিলান্যাসে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা
ভট্টাচার্য, মন্ত্রী বেচারাম মান্না ও রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। ছবি: দীপঙ্কর দে |
তবে, ‘রাজনৈতিক শিষ্যে’র এ হেন আক্রমণে এ দিন পাল্টা আক্রমণে যাননি রবীন্দ্রনাথবাবু। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “কই, আমায় তো কেউ আক্রমণ করেনি।” তাঁর মুখে শোনা গিয়েছে রাজ্য সরকারের প্রশংসাই। তিনি বলেন, “এই কল্যাণকর ডাকে সাড়া দিয়ে আমি আনন্দিত। এই সরকার যে স্বাস্থ্য উন্নয়নে বদ্ধপরিকর এ দিনের কর্মসূচি তারই প্রমাণ। এ বছরের স্বাস্থ্য বাজেটে ২১ শতাংশ বরাদ্দ বৃ্দ্ধি করা হয়েছে।”
বস্তুত, রবীন্দ্রনাথবাবুর নরম সুর কিছু দিন আগেই শোনা গিয়েছে। বিধানসভার অধিবেশনের যোগ দেওয়ার জন্য খাতায়-কলমে রাজ্যের পরিসংখ্যান ও পরিকল্পনা দফতরের মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথবাবুকে কিছু দিন আগে চিঠি পাঠানো হলেও তিনি যোগ দেননি। তবে, তখনই তিনি জানিয়েছিলেন, তাঁকে বিধায়ক হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হলে যাবেন। এমনকী, তাঁকে অন্য দফতর দেওয়া হলে তিনি মন্ত্রিত্বের বিষয়টিও বিবেচনা করবেন। দিন কয়েক আগে তিনি সিঙ্গুরে একটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উদ্বোধনও করেন।
অনুষ্ঠানে তিনি বিধায়ক হিসেবেই উপস্থিত ছিলেন বলে রবীন্দ্রনাথবাবু জানিয়েছেন। তবে, ফলকে রবীন্দ্রনাথবাবুকে ‘পরিসংখ্যান ও পরিকল্পনা দফতরের মন্ত্রী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য প্রস্তাবিত ট্রমা সেন্টারটির শিলান্যাস করে জানান, কোনও দুর্ঘটনায় আহতদের দ্রুত চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার লক্ষ্যেই এই কেন্দ্রটি গড়া হবে। এ জন্য ৩ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা প্রাথমিক ভাবে বরাদ্দ হয়েছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে মোট ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে। |