সম্পাদকীয় ২...
বিচারপ্রার্থীর সঙ্কট
লিকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণকুমার মিশ্র আদালতে কর্মসংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করিতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু তাঁহার এই প্রয়াস বানচাল করিতে উদ্যত ব্যক্তি বা গোষ্ঠীরও অভাব নাই। কোনও রাজনৈতিক দল ধর্মঘট ডাকিলেই যেমন ঘরে বসিয়া ছুটি উদ্যাপনের ঐতিহ্য রাজ্যে কায়েম হইয়াছে, তেমনই আনন্দে কিংবা শোকে, যে কোনও উপলক্ষে আদালতে কর্মবিরতি পালনের রেওয়াজও আইনজীবীরা চালু করিয়াছেন। প্রধান বিচারপতিকে সম্বর্ধনা জানাইবার আয়োজন হাইকোর্টে ছুটি দিয়া পালন করা হয় প্রধান বিচারপতির আপত্তি সত্ত্বেও। আবার তরুণ সহকর্মীর মৃত্যুজনিত শোক পালনের জন্যও আইনজীবীরা হাইকোর্টে কর্মবিরতি পালন করেন। এ ভাবে উপলক্ষ-নির্বিশেষে কর্মবিরতি পালন যে কর্মসংস্কৃতির পরিপন্থী প্রধান বিচারপতির সেই বক্তব্যে কেহ কর্ণপাত করিতেছেন না।
অথচ কলিকাতা হাইকোর্টেই ৩ লক্ষ ৪৭ হাজার মামলা মীমাংসার অপেক্ষায়, আর রাজ্যের নিম্ন আদালতগুলিতে বকেয়া মামলার সংখ্যা ২৬ লক্ষের বেশি। এই অবস্থায় কথায়-কথায় কর্মবিরতি বকেয়া মামলার পাহাড়টিকে আরও ভারী করিয়া তোলে। ন্যায় বিচার পাওয়ার যে অধিকার জনসাধারণের আছে, তাহা লইয়াও ছিনিমিনি খেলা হয়। আইনজীবীরা নিজেদের অধিকার বিষয়ে আঠারো আনা সচেতন। সেখানে সামান্যতম বিচ্যুতিও তাঁহারা বরদাস্ত করিতে নারাজ। অথচ বিচারপ্রার্থী জনতার ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার অনায়াসে দলিত করিতে পারেন। প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে মঙ্গলবার একটি মামলার শুনানির সময় অনতিদূরে সমবেত আইনজীবীদের চিৎকার-চেঁচামেচি সহ ক্ষোভপ্রকাশে বিরক্ত প্রধান বিচারপতি যখন আদালতের ভিতর ‘গুণ্ডামি বরদাস্ত করা হইবে না’ বলিয়া মন্তব্য করেন, তখন তাঁহাদের মানে লাগে। দূর-দূরান্ত হইতে শুনানির দিন আদালতে হাজির বিচারপ্রার্থী জনতাকে যখন উৎসব কিংবা শোক পালনের অজুহাতে আইনজীবীরা ফিরাইয়া দেন, তখন তাঁহারা অপমানিত হন না?
আইনজীবীরা কিংবা তাঁহাদের সংগঠন বার কাউন্সিল ক্রমেই প্রবল হইয়া উঠিতেছে। কোনও-কোনও রাজ্যে পুলিশ প্রশাসনের সহিত তাঁহাদের সংঘাতও হইতেছে। আর বিচারপতিদের এজলাস যথেচ্ছ নিয়ন্ত্রণ করার অস্বাস্থ্যকর প্রবণতাও মাথা চাড়া দিতেছে। প্রায়শ দেখা যাইতেছে, বিচারপতিরা এজলাস খুলিয়া শুনানি শুরুর অপেক্ষা করিতেছেন, মক্কেলরাও উপস্থিত, কিন্তু আইনজীবীরা গরহাজির। বার কাউন্সিলের অনুষ্ঠান থাকিলে এই গরহাজিরা যৌথ ও সংঘবদ্ধ। কখনও বিচারপতিদের না জানাইয়া, কখনও বিচারপতিদের আপত্তি অগ্রাহ্য করিয়া সংঘশক্তির জোরে আইনজীবীরা তাঁহাদের কর্মবিরতি পালনের অধিকার সংশ্লিষ্ট সকলের উপর আরোপ করিতেছেন। যূথবদ্ধতাই কিন্তু কোনও অন্যায় কাজকে ন্যায়সঙ্গত করিয়া দেয় না। সকলে মিলিয়া কোনও অন্যায় সিদ্ধান্ত চাপাইয়া দিলে তাহাতে যে জোর থাকে, সেটা যূথের জোর, বৈধতার শক্তি তাহাতে নাই। সমাজের প্রতি আইনজীবীদেরও কিছু কর্তব্য আছে বোধহয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.