সম্পাদকীয় ১...
বিচিত্র জেহাদ
ঞ্চায়েত নির্বাচন লইয়া রাজ্যের নির্বাচন কমিশনার এবং শাসক দলের বিরোধ তুঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রী চাহিয়াছিলেন নির্বাচন কয়েক মাস আগাইয়া আনিতে। কিন্তু ভোটার তালিকার সংশোধন অসম্পূর্ণ থাকিবে এবং বিভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষার নির্ঘণ্টের সহিত দ্বন্দ্ব বাধিবে বলিয়া কমিশন নির্ধারিত সময়ে অর্থাৎ এপ্রিল-মে মাসেই ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত লয়। একই সঙ্গে ভোটগ্রহণ তিন দফায় এবং কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠানের পরামর্শও দেওয়া হয়। অতীতে বিরোধী পক্ষে থাকা কালে তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বের কণ্ঠে এ ধরনের দাবিই শোনা গিয়াছে। এখন সরকারে আসিয়া দল কমিশনের এই ধরনের পরামর্শে ‘রাজনৈতিক অভিসন্ধি’ খুঁজিয়া পাইয়াছে। নির্বাচন কমিশনার বিরোধী দল সিপিআইএমের হইয়া কাজ করিতেছেন, এমন অভিযোগও তুলিয়াছেন এই বঙ্গীয় দলটির ‘সর্বভারতীয় সভাপতি’। তিনি নির্বাচন কমিশনের এক্তিয়ার লইয়াও প্রশ্ন তুলিয়াছেন এবং রাজ্য সরকার একতরফা ভাবে ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করিয়া দিবে, এমন হুমকিও দিয়াছেন।
শাসক দলের নেতৃত্বের দ্বারা অভিযুক্ত হইতে কিংবা হুমকি পাইতে অবশ্য নির্বাচন কমিশনাররা অভ্যস্ত। অতীতে টি এন শেষন যখন কমিশনকে শাসক দলের তল্পিবাহক রূপে ব্যবহার না করিয়া একটি কার্যকর সাংবিধানিক সংস্থা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করিতে উদ্যোগী হন, তখন হইতেই এই প্রবণতার শুরু। সিপিআইএম সহ বামপন্থীরা, বিজেপি, এমনকী ক্ষেত্রবিশেষে কংগ্রেসও এবং অবশ্যই রাজ্যে-রাজ্যে প্রতিটি আঞ্চলিক, প্রাদেশিক, জাতপাতভিত্তিক দল কমিশনের নিরপেক্ষতাকে ‘পক্ষপাত’ রূপে বিবৃত করিয়া ভোটের হাওয়া গরম করিতে চাহিয়াছে। কিন্তু নির্বাচনী বিধি চালু করা হইতে শুরু করিয়া প্রার্থী বাছাই, ভোটগ্রহণ, ফলপ্রকাশ সহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অবাধ ও সুষ্ঠু করিয়া তুলিতে কমিশনের ভূমিকা ভারতীয় গণতন্ত্রকেই উত্তরোত্তর সমৃদ্ধ করিয়াছে। যখন যে দল ক্ষমতায়, তখনই কমিশনের নিরপেক্ষতা তাহার চক্ষুশূল। তথাপি নির্বাচনের ব্যাপারে কমিশনের সার্বভৌম এক্তিয়ার ক্রমে প্রতিষ্ঠিত। পঞ্চায়েত ভোটের ক্ষেত্রে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা ও এক্তিয়ার কতটা, তাহা সিপিআইএম পরিচালিত বাম সরকারের ২০০৩ সালের পঞ্চায়েত আইনে নির্দিষ্ট। আজ বাম জমানার সেই আইন দেখাইয়া তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যের নির্বাচন কমিশনারের উপর সরকারের অভিপ্রায় চাপাইতে উদ্গ্রীব। রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের মতো সাংবিধানিক দায় পালনে নিযুক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে শাসক দলের নেতার মন্তব্য যে দুর্ভাগ্যজনক, সেটা এমনকী রাজ্যপালও উল্লেখ না করিয়া পারেন নাই।
তৃণমূল নেতৃত্ব এই নীতিগত প্রশ্নটিকে আইনগত খুঁটিনাটি দিয়া বানচাল করিতে উদ্যত। কিন্তু আদালতে গেলে কী হইবে, বলা কঠিন। মানবাধিকার কমিশনের যেমন সুপারিশ করারই এক্তিয়ার আছে, সরকারকে নির্দেশ দেওয়ার নয়—সরকারের এই যুক্তি কলিকাতা হাইকোর্ট শিরোধার্য করে নাই। যে-সুপারিশ মানিতে সরকার বাধ্য নয়, তাহা করার দরকার কী, সে জন্য একটি কমিশনেরই বা কী প্রয়োজন, এমন পাল্টা প্রশ্নও উঠিয়াছে। নির্বাচন কমিশনের সুপারিশের এক্তিয়ার লইয়া শাসক দলের আঁকিয়া দেওয়া লক্ষ্মণরেখাও আদালতের বিচারে শেষ পর্যন্ত টিকিবে কি না, তাহাও সংশয়াতীত নহে। বিধিবিধান কেবল আইনসভার কক্ষে গৃহীত ভোটাভুটিতে রচিত হয় না। আদালতের বিচারপতিদের ব্যাখ্যা, বিশেষত সাংবিধানিক বেঞ্চের সংযোজন, পরিমার্জন ও সংশোধনও আইনসভায় প্রণীত আইনকে পূর্ণতা দিতে পারে, প্রায়শ দিয়া থাকে। পঞ্চায়েত ভোট লইয়া জেদের লড়াই চালাইবার সময় কথাটা খেয়াল রাখা উচিত। ভোট আগাইয়া আনার তৃণমূলি জেদের বিরোধিতা ভোটপর্বকে বিলম্বিত করা নয়। বরং অকারণ আগাইয়া আনার প্রস্তাবেই রাজনীতির গন্ধ প্রকট। জেলাশাসকদের কাছে প্রাপ্ত রিপোর্টের ভিত্তিতেই সুষ্ঠু ভোটগ্রহণের স্বার্থে তিন দফায় এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুপারিশ। পরিবর্তনের সরকারের কেন কমিশনের এই সুপারিশ মানিতে অসুবিধা, সেটাই বরং রহস্যময়। কে জানে, হয়তো দাপট দেখানোই একমাত্র লক্ষ্য।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.