ওদের কেউ কোনওদিন সমুদ্রই দেখেনি। এত জল! এত ঢেউ! আনন্দে আত্মহারা পাহাড়ি মেয়েরা আর আসতেই চায় না। তাতেই কি মুগ্ধতার শেষ! এরপর আবার জনসমুদ্রর বুক চিরে চলে যাওয়া লম্বা গাড়ি-দর্শন। যার নাম ট্রাম! পাহাড়ের গায়ে বসা হাটই যাদের কাছে এক পৃথিবী পসরার সমান, আধুনিক শপিং মলের সামনে দাঁড়িয়ে তাদের কী অবস্থা হতে পারে? মাটির তলা দিয়েও একশো কিলোমিটার বেগে ছুটে চলা পাতাল রেলের চেপে আতঙ্কে-আনন্দে সিঁটিয়ে থাকে তারা। আরও কত কী না অপেক্ষা করে ছিল ১৫ টা মেয়ের জন্য। এক জীবনে, একসঙ্গে এত বিস্ময়ের সামনা-সামনি হতে পারবে কোনওদিনও ভাবতে পারেনি তারা। আজ, ঘরে ফেরার পথে তাদের আর মন সরে না। |
তাওয়াং মাউন্টেন ব্রিগেডের ব্রিগেডিয়ার জে এস রাজপুরোহিত জানান, ২৩ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনীর একটি দল, দুই শিক্ষিকা ও দুই সেনাকর্তার স্ত্রী অরুণাচলের তাওয়াং সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলের ১৫ জন ছাত্রীকে নিয়ে ‘অপারেশন সামারিটান’ শুরু করেন। উদ্দেশ্য ছিল, পাহাড়ের বাইরের ভারত কী রকম তা ঘুরিয়ে দেখানো। যাতে, ফিরে এসে, তারা ভারতের সেই ছবি অন্য বন্ধু, আত্মীয়, পড়শিদের জানাতে পারে। তেজপুর হয়ে গুয়াহাটি আসে তারা। সেখানে কামাখ্যা মন্দির, চিড়িয়াখানা দেখে মুগ্ধ। এরপর, ট্রেনে চড়ে তারা ট্রামের শহর কলকাতায় আসে। ঘুরে দেখে ফোর্ট উইলিয়াম। ছুঁয়ে দেখে সামরিক ট্যাঙ্ক, অস্ত্রশস্ত্র। ইস্টার্ন কম্যান্ডের জিওসি লেফটেন্যান্ট জেনারেল দলবীর সিংহকে দুই ছাত্রী জানিয়েই দেয়, তারা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে ইচ্ছুক।
পরবর্তী গন্তব্য ঝাড়খণ্ড। রাঁচিতে রাজভবনে রাজ্যপালের সঙ্গে আড্ডা হয়। তাঁর সঙ্গে খোলা মেলা কথা বলে খুব খুশি তারা। সেনা ছাউনিতে মনপা মেয়েদের ট্যাঙ্কে চড়িয়ে ঘোরানো হয়। অরুণাচলের দেদার ট্যাঙ্ক দেখেছে। ছাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে তাওয়াং থেকে আসা মেজর সুন্দর সিংহ চাহাল বলেন, “এখানে যারা এসেছে, তাদের কেউ টেঙ্গার বাইরেই কোনওদিন পা রাখেনি। কোনার্কের সূর্যমন্দির, পুরীর জগন্নাথ মন্দির বা বঙ্গোপসাগর দেখে ওদের যে কী অবস্থা বলে বোঝানো যাবে না।” কিন্তু, সব স্বপ্নেরই শেষ থাকে। তাই, গতকাল ফের তাওয়াং-এ ফিরল মেয়েরা। ১৪০০০ ফুট উঁচুতে উঠে এসেও সোয়াং দ্রেমা, লাম ইয়ানচেনদের মন পড়ে রয়েছে ফেলে আসা সমুদ্রের পারে। |