হেরিটেজ খেতাব হারাতে পারে ভাঙাচোরা টয় ট্রেন
দার্জিলিং হিমালয়ান রেলের হেরিটেজ মর্যাদা কার্যত খাদের কিনারায়। ভেঙেচুরে তিন বছর ধরে অচল থাকা ওই লাইনটির হেরিটেজ খেতাব ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে ইউনেস্কো।
নিউ জলপাইগুড়ি থেকে দার্জিলিং রোমান্টিক রেল সফর এখন অতীত। এক সময় ৫৫ নম্বর জাতীয় সড়কের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দৌড়োনো ন্যারো গেজের ছোট্ট লাইন উপড়ে গিয়েছে নানা জায়গায়। তিনধরিয়া ও পাগলাঝোরায় ধস নামায় নিউ জলপাইগুড়ি থেকে দার্জিলিং এই গোটা রুটটির বদলে ভাগ ভাগ করে ট্রেন চালাতে বাধ্য হয়েছে রেল। মন্ত্রক জানিয়েছে, বর্তমানে দার্জিলিং ও ঘুমের মধ্যে ৪টি ও দার্জিলিং এবং কার্শিয়াঙের মধ্যে দু’টি ট্রেন চলে। এ ছাড়া ‘জঙ্গল সাফারি’ নামে একটি ট্রেন এখন চলছে শিলিগুড়ি ও রুংটং-র মধ্যে। ফলে দার্জিলিঙে আসা পর্যটকদের এখন দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে হচ্ছে। কিন্তু তার থেকেও বড় সমস্যা হল, বেশি দিন যে ওই লাইনের হেরিটেজ খেতাব ধরে রাখা যাবে না, তা বেশ বুঝতে পারছে রেল মন্ত্রক। তাই আজ রেল বাজেট বিতর্কে অবিলম্বে ওই লাইনটি মেরামত করার জন্য কেন্দ্রীয় পরিবহণ মন্ত্রকের কাছে আবেদন করেন রেলমন্ত্রী পবন বনশল।
প্রথমে ২০১০-এ পাগলাঝোরায় এবং এর পরের বছর তিনধরিয়ায় ধস নেমে টয় ট্রেনের লাইন উপড়ে খাদে চলে যায়। ফলে ৮৮ কিলোমিটার ওই লাইন এখন কার্যত তিন ভাগে বিভক্ত। ধস নামার পরে কেটে গিয়েছে প্রায় তিন বছর। কিন্তু ১৯৯৯ সাল থেকে ইউনেস্কোর হেরিটেজ তালিকায় থাকা ওই লাইনের মেরামতি কে করবে, তা নিয়ে বিবাদ এখনও মিটিয়ে উঠতে পারেনি রাজ্যের পূর্ত দফতর ও কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক। রাজ্য সরকারের গা-ছাড়া মনোভাবকেই এ জন্য দায়ী করেছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতারা। হড়কা বাহাদুর ছেত্রী বলেন, “পাহাড়ের প্রতি রাজ্য সরকারের অবহেলামূলক মনোভাবই ফুটে উঠেছে এই ঘটনায়। অন্য কোনও রাজ্যে বোধহয় এমন জিনিস ঘটে না।” ওই লাইনটির হেরিটেজ খেতাব নিয়ে আশঙ্কিত মোর্চা নেতৃত্বও।
সম্প্রতি রেলের হেরিটেজ দফতরের সঙ্গে ইউনেস্কোর এক দফা আলোচনা হয়েছে। রেলকে যে বার্তা দেওয়া হয়েছে, তাতে এখনই মেরামতি না হলে ওই লাইনটিকে হেরিটেজ তালিকা থেকে বিপজ্জনক তালিকায় সরিয়ে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ইউনেস্কো। সুন্দরবন ও দার্জিলিং হিমালয়ান রেল, সাকুল্যে পশ্চিমবঙ্গের এই দু’টি দ্রষ্টব্যই ইউনেস্কোর হেরিটেজ মর্যাদাসম্পন্ন। তাদের মধ্যে একটি বিপজ্জনক তালিকায় চলে গেলে তা শুধু পশ্চিমবঙ্গই নয়, গোটা দেশের পর্যটন শিল্পের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
কিন্তু রেল কেন টয় ট্রেনের লাইন সারাই করছে না? মন্ত্রক জানিয়েছে, ওই লাইনটি ৫৫ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর দিয়েই গিয়েছে। ওই সড়ক যত ক্ষণ না ঠিক হচ্ছে, রেল লাইন সারানোর কাছে হাত দিতে পারছে না রেল। সম্প্রতি রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান বিনয় মিত্তল সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের সচিব এ কে উপাধ্যায়কে বিষয়টি সবিস্তার জানিয়ে একটি চিঠিও লেখেন। তাতে বর্ষার আগে ওই সড়ক মেরামত করে ফেলার অনুরোধ করা হয়েছে। মিত্তলের বক্তব্য, সড়ক মেরামত না করা পর্যন্ত লাইন পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।
শুধু টয় ট্রেন বন্ধে হওয়ার জন্যই দার্জিলিঙে পর্যটকদের সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে বলে অভিযোগ মোর্চা নেতৃত্বের। ওই লাইন পুনর্নির্মাণের বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে সরব রয়েছে মোর্চা নেতৃত্ব। তৃণমূলের হাতে রেল মন্ত্রক থাকার সময়ে মমতা ও দীনেশ ত্রিবেদীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন গোর্খা নেতারা। কাজের কাজ কিছু হয়নি। সম্প্রতি ফের রেলমন্ত্রী পবন বনশল ও প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর সঙ্গেও বৈঠক করেন রোশন গিরিরা। পরে অধীর চৌধুরী বলেন, “ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় পরিবহণ মন্ত্রক প্রায় ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। আশা করি এ বার দ্রুত ওই সড়ক মেরামত হবে। না হলে টয় ট্রেনের পক্ষে হেরিটেজ খেতাব ধরে রাখাটা সত্যিই কঠিন হবে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.