ভরদুপুরে ঘরের কাজ করছিলেন রানিকুঠি তিলকনগরের রায়চৌধুরী পরিবারের লোকজন। আচমকাই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল টালির ছাদের একাংশ। বুধবার আকস্মিক এই ঘটনার পরে সম্বিত ফিরে পেতেই তাঁরা শুনলেন ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ বলে চেঁচাচ্ছে একটি মেয়ে।
পুলিশ জানায়, লাগোয়া বহুতলের পাইপ বেয়ে নামতে গিয়ে হাত ফস্কে ওই বাড়ির টালির ছাদের উপরে পড়ে যায় ওই কিশোরী। অভিযোগ, মেয়েটির শ্লীলতাহানি করতে গিয়েছিল ওই বহুতলেরই মালিকের ছেলে কুন্তল মজুমদার। তার হাত থেকে বাঁচতেই পাইপ বেয়ে নামতে যায় ওই কিশোরী। আহত অবস্থায় তাকে এম আর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, মেয়েটির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। দুই কনুই ও পায়ের গোড়ালিতে
|
ধৃত কুন্তল মজুমদার |
অল্প চোট রয়েছে। কুন্তলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওই বহুতলে কুন্তলদের ভাড়াটে রাজেশ বৈদ নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে মেয়েটি কাজ করে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এ দিন এম আর বাঙুর হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের শয্যায় শুয়ে থরথর করে কাঁপছিল ওই কিশোরী। কথা বলতে-বলতে বারবার কেঁদে ফেলছিল। ভাঙা হিন্দিতে ওই কিশোরী জানিয়েছে, অসমের গ্রাম থেকে অভাবের জ্বালায় কলকাতায় কাজ করতে এসেছে সে। মেয়েটির কথায়, “দুপুরে জামাকাপড় কেচে, স্নান করে ছাদে কাপড় মেলতে গিয়েছিলাম। নামার সময়ে বাড়িওয়ালার ছেলে ছাদের দরজা আটকে দাঁড়াল। কিছু বোঝার আগেই আমাকে জাপটে ধরল।” ওই কিশোরীর অভিযোগ, ভয়ে চিত্কার করে উঠতেই তার মুখ চেপে ধরে কুন্তল। মেয়েটির কথায়, “আমি সর্বশক্তি দিয়ে ছেলেটাকে এক ধাক্কায় সরিয়ে দৌড়ে ছাদের ধারে চলে এলাম। কী যে করব, ভয়ে তখন বুঝতে পারছিলাম না। ওর হাত থেকে বাঁচতে ছাদ টপকে পাইপ বেয়ে নামতে গেলাম। কিন্তু পড়ে গেলাম।” তবে কুন্তল এর আগে তাকে কখনও বিরক্ত করেনি বলেই জানিয়েছে ওই কিশোরী।
জনবহুল পাড়ায় এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে তিলকনগর এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কুন্তলের আচরণ ভাল নয়। এর আগেও পাড়ার কয়েক জনের সঙ্গে তার গোলমাল হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, মেয়েটি রাজেশ বৈদের বাড়িতে বেশ কয়েক বছর ধরে কাজ করছে। কোনও দিন তার আচরণে খারাপ কিছু লক্ষ করেননি তাঁরা। মেয়েটিকে টালির ছাদে পড়তে দেখেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা অলকা বসু। অলকাদেবী জানান, তিনি দুপুরে রান্না করছিলেন। হঠাত্ই মেয়েটিকে টালির ছাদে পড়তে দেখেন। তাঁর চিত্কারেই পাড়ার লোকেরা জড়ো হন বলে তাঁর দাবি।
তবে অভিযুক্ত কুন্তল মানসিক রোগী বলে তাঁর পরিবারের তরফে দাবি করা হয়েছে। কুন্তলের মা অঞ্জনা মজুমদার বলেন, “আমার ছেলে মানসিক অবসাদে ভোগে। ওর চিকিত্সা চলছে।” এর আগে সে এক বার আত্মহত্যার চেষ্টা করে বলেও অঞ্জনাদেবীর বক্তব্য। তাঁর দাবি, এ দিন দুপুরে কুন্তল ছাদে গেলে ওই কিশোরী তাকে চোর অপবাদ দেয়। এর পরেই কুন্তল মেয়েটির গলা টিপে ধরে। |