তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় এসে সরকারি আইনজীবীদের যে-তালিকা তৈরি করেছিল, তাতে নাম নেই নবকুমার ঘোষের। তাই গার্ডেনরিচে হাঙ্গামার মামলায় সরকারি আইনজীবীর ভূমিকায় আর দেখা যাবে না ওই আইনজীবীকে। বুধবার এমনটাই জানিয়ে দিলেন রাজ্যের আইন ও বিচার মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সিআইডি-র পক্ষ থেকে নববাবুকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, তাঁকে আর গার্ডেনরিচ মামলায় সরকারি আইনজীবীর ভূমিকা পালন করতে হবে না। তাঁকে হঠাৎই ওই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হল কেন, সেই ব্যাপারে সিআইডি নববাবুকে কিছু না জানানোয় আইনজীবী মহলে নানা প্রশ্ন ওঠে। নববাবু সরকারি আইনজীবী থাকলে ওই মামলায় মূল অভিযুক্ত মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্নার জামিন পেতে সমস্যা হতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকেই ওই সিদ্ধাম্ত নেওয়া হল কি না, তা নিয়েও আইনজীবী মহলে জোর আলোচনা শুরু হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতেই আইন ও বিচার মন্ত্রী বুধবার এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের ভূমিকা পরিষ্কার করে দেন।
কী বলেছেন মন্ত্রী?
চন্দ্রিমাদেবী বলেন, “নবকুমার ঘোষ আমাদের সরকারের প্যানেলভুক্ত আইনজীবী নন। উনি বামফ্রন্টের জমানায় সরকারি প্যানেলভুক্ত আইনজীবী ছিলেন। আমাদের সরকার ক্ষমতায় আসার পরে উনি আর সরকারি প্যানেলভুক্ত আইনজীবী নন। সেই জন্যই গার্ডেনরিচ কাণ্ডের মামলায় সরকারি কৌঁসুলি হিসেবে তাঁকে রাখা হল না।” কিন্তু গার্ডেনরিচ মামলায় নববাবুকে স্পেশ্যাল পাবলিক প্রসিকিউটার নিযুক্ত করেছিল কে? আইন ও বিচার দফতরের এক অফিসার জানান, সিআইডি ভুল করে তাঁকে নিয়োগ করে ফেলেছিল।
তবে গার্ডেনরিচে পুলিশ অফিসার হত্যা মামলার সরকারি আইনজীবী হঠাৎ বদল হয়ে যাওয়ায় সিআইডি অফিসারদের একাংশও বিস্মিত। আবার আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য, তৃণমূল সরকার যে সব কিছুকেই রাজনীতির আয়নায় দেখছে, এই ঘটনায় তা আরও এক বার প্রমাণিত হল।
আইন ও বিচার মন্ত্রী অবশ্য তা মনে করেন না। তিনি বলেন, “মামলা চলতে চলতে আইনজীবী পাল্টানো যেতেই পারে। এটা কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। এক জনকে নিয়োগ করা হয়েছিল। পরে তাঁর জায়গায় অন্য এক জনকে বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। তাতে কী হয়েছে?”
যাঁকে সরিয়ে দেওয়া হল, কী বলছেন সেই নববাবু?
সরকারি প্যানেলভুক্ত হওয়ার বাধ্যবাধকতাটা বিবেচ্য নয় বলেই মনে করেন নববাবু। তাঁর বক্তব্য, ফৌজদারি দণ্ডবিধির ২৪ (৮) ধারা অনুসারে কোনও মামলায় সরকার পক্ষের বিশেষ আইনজীবী হিসেবে যাঁকে নিয়োগ করা হবে, তাঁর সরকারি প্যানেলভুক্ত আইনজীবী হওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। ১০ বছর মামলা লড়ার অভিজ্ঞতা আছে, এমন যে-কোনও আইনজীবীকেই নিয়োগ করা যেতে পারে। “কাজেই আমি এই জমানায় সরকারি প্যানেলভুক্ত আইনজীবী কি না, সেটা এখানে অন্তত আইনগত দিক থেকে বিবেচ্য হতে পারে না,” বলছেন নববাবু। নববাবুর বদলে এ বার গার্ডেনরিচে এসআই খুনের মামলায় সরকারের হয়ে লড়বেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রধান সরকারি কৌঁসুলি শ্যামাদাস গঙ্গোপাধ্যায়। তৃণমূল সরকারের আমলে তৈরি হওয়া সরকারি আইনজীবীর তালিকায় তাঁর নাম রয়েছে। তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম জামিন চেয়ে আলিপুর জেলা ও দায়রা জজের আদালতে পাঁচ বার আবেদন করেছিলেন। কিন্তু সরকারি আইনজীবী হওয়া সত্ত্বেও শ্যামাদাসবাবু এক বারও তার বিরোধিতা করেননি বলে আইনজীবী মহলেরই অভিযোগ।
গার্ডেনরিচ মামলায় মুন্নার ক্ষেত্রেও নতুন সরকারি আইনজীবীর ভূমিকা তেমনটাই হতে যাচ্ছে কি না, আইনজীবী মহলের প্রশ্ন সেটাই। আইন ও বিচার মন্ত্রী বলছেন, “আগে দেখুন, সরকারি কৌঁসুলি আদালতে কী করেন। সরকারি কৌঁসুলি জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করবেন কি না, তার উপরে কিছু নির্ভর করে না। আদালতে বিচারকই সব সিদ্ধান্ত নেন।”
এ দিনও বুকে ব্যথা হচ্ছে বলায় মুন্নাকে ফের এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়। হাসপাতালের সুপার তমালকান্তি ঘোষ বলেন, “প্রথমে কার্ডিওলজিস্ট এবং পরে মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকদের দিয়ে আমরা পরীক্ষা করাই। তবে মুন্নার শারীরিক কোনও গোলমাল ধরা পড়েনি। তাই তাঁকে ভর্তি না-করে সিআইডি-র হাতেই দেওয়া হয়েছে।” |