মহেন্দ্র জেনা • শান্তিনিকেতন |
“আমার পাশ্চাত্য মহাদেশে ভ্রমণকালে যাঁরা আমার সঙ্গী ও সঙ্গিনী ছিলেন, তাঁদের অনবধান বা ঔদাসীন্যবশত সাধারণের অবগতির জন্য আমার ভ্রমণ বৃত্তান্ত সংগ্রহ ও রক্ষা করেননি, এমন একটি অন্যায় অপবাদ প্রবাসীতে আমার দ্বারা প্রকাশিত হয়েছে-এ আমার পক্ষে অত্যন্ত লজ্জা ও অনুতাপের বিষয়... অগোচরে রয়ে গেছে। আজ তার আবিষ্কার হওয়াতে আমি আমার ভ্রমণ সহচরদের নিকটে আমার অজ্ঞানকৃত অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি...” একটি চিঠিতে জানিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯৪১ সালের ২৪ জুন তিনি চিঠিটি লিখেছিলেন প্রবাসীর সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়কে।
বস্তুত রবীন্দ্রনাথের চিন্তাদর্শনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হছে তাঁর চিঠিপত্র। সারা জীবনে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে প্রায় তিন হাজারের বেশি চিঠি আদানপ্রদান করেছেন রবীন্দ্রনাথ। সেই সব চিঠির নানা সংকলনও বিভিন্ন সময় বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এই প্রথম শুধুমাত্র চিঠিপত্র নিয়ে দু’দিনের আন্তর্জাতিক আলোচনাসভার আয়োজন করতে চলেছেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রভবনের উদ্যোগে আজ বৃহস্পতিবার থেকে শান্তিনিকেতনের লিপিকা প্রেক্ষাগৃহে শুরু হবে ‘চিঠিপত্রে রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক আলোচনা। রবীন্দ্রভবনের অধিকর্তা তপতী মুখোপাধ্যায় বলেন, “জীবনে অসংখ্য মানুষের সঙ্গে ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথের চিঠিপত্রের আদানপ্রদান ছিল। ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথের অন্য সত্তা খুঁজে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গুরুদেবের নতুন জীবনের গন্ধও উঠে আসবে এই আলোচনায়। এ যাবত রবীন্দ্রনাথের এই দিকটা নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয়নি। ফলে এই উদ্যোগ রবীন্দ্র গবেষক ও নতুন প্রজন্মের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান হবে।”
তবে শুধু আলোচনাতেই থেমে থাকছে না এই উদ্যোগ। আলোচকদের বক্তব্য বিশ্বভারতী বই আকারেও প্রকাশ করবে। ইতিমধ্যেই মাসিক একটি আলোচনাচক্র থেকে উঠে আসা বিষয়গুলি নিয়েও ‘রবীন্দ্র প্রবাহ’ নামে একটি সংকলন প্রকাশ করেছে বিশ্বভারতী। রবীন্দ্রভবনেরই উদ্যোগে রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাচিন্তা বিষয়ক ওই মাসিক আলোচনাচক্র শুরু হয়েছিল। গত জুন থেকে এখনও পর্যন্ত ওই আলোচনায় যোগ দিয়েছেন অধ্যাপক স্বপন মজুমদার, অধ্যাপক দেবনাথ বন্দোপাধ্যায়, সুপ্রিয় ঠাকুরের মতো বিশিষ্ট জন। তপতীদেবী জানিয়েছেন, ‘রবীন্দ্র প্রবাহ’-র ধাঁচেই অনালোচিত ও অচর্চিত রবীন্দ্রনাথের চিঠিপত্র নিয়েও গ্রন্থ প্রকাশ করা হবে। তাঁর আশা, “এই উদ্যোগ নতুনপ্রজন্ম ও রবীন্দ্র গবেষকদের কাছে অমূল্য সম্পদ হয়ে থাকবে।” |