হিংসা-যুদ্ধ-লড়াইয়ে সব চেয়ে বেশি প্রভাবিত হয় শৈশব ও কৈশোর। এ কথা আক্ষরিক অর্থে সত্যি হয়ে উঠেছে সিরিয়ার যুদ্ধে। ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ নামের একটি ব্রিটিশ চ্যারিটি সংস্থার হিসেবে, গত দু’বছরে হিংসায় প্রাণ হারিয়েছে ৭০ হাজার শিশু। এ ছাড়া চরম অশান্ত পরিস্থিতির কারণে স্বাভাবিক শৈশব ও কৈশোর হারিয়ে ফেলেছে প্রায় ২০ লক্ষ শিশু। বন্ধ হয়ে গিয়েছে তাদের স্কুলে যাওয়া, খেলাধুলো। এমনকী যুদ্ধে কিশোরদের যোগদান করার সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে।
সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, খাবারের অভাব, চরম অপুষ্টি এবং ক্রমাগত অসুখে ভোগার কারণেই বাড়ছে শিশুমৃত্যু। শুধু তাই নয়, যৌন হিংসা রুখতে জোর করে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে অল্প বয়সে। ১৮ বছরের নীচে বহু অপ্রাপ্তবয়স্কই বাধ্য হচ্ছে বাহিনীতে নাম লেখাতে। সংস্থার এক মুখপাত্র বলেছেন, “মালপত্র বওয়ার কাজে বা তথ্য চালাচালির কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে তারা। কখনও নামতে হচ্ছে যুদ্ধক্ষেত্রেও। এমনকী, বিপক্ষ দলের আক্রমণের গতিবিধি আঁচ করার জন্য টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে তাদের।” অর্থাৎ প্রবল গোলাগুলির মুখে পড়ছে তারা। সংস্থার রিপোর্ট ‘চিলড্রেন আন্ডার ফায়ার’ জানাচ্ছে, প্রতি তিন জনের মধ্যে এক জন বালক হত হচ্ছে যুদ্ধে।
সংস্থার পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, বালকদের যুদ্ধে যোগ দেওয়ার ঘটনায় অবশ্য বেশ গর্বিত তাদের পরিবার। কিন্তু টানা যুদ্ধের ফলস্বরূপ ঘর ছেড়ে পার্কে, খামারে, গুহায় থাকতে বাধ্য হচ্ছে লক্ষাধিক শিশু। সংস্থার প্রধান অধিকর্তা ক্যারোলিন মাইলসের কথায়, “যুদ্ধের ভয়াবহতায় নিষ্পাপ শৈশব হিংস্র বাস্তবতার সম্মুখীন হচ্ছে।”
২০১১ সালের মার্চে রাষ্ট্রদ্রোহী ছবি আঁকার অপরাধে বেশ কিছু শিশু-কিশোরকে গ্রেফতার করে তাদের উপর অত্যাচার করা হয়। তখনই জ্বলে ওঠে বিদ্রোহের আগুন। আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে গণতন্ত্রকামী মানুষ। সেই থেকে টানা দু’ বছর ধরে যুদ্ধে জর্জরিত সিরিয়া। যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার অবস্থা ফেরাতে ব্রিটিশ সরকারের কাছে ১৫০ কোটি ডলার অর্থসাহায্যও চেয়েছে সংস্থাটি।
বুধবার, ব্রিটেনের রাজ দম্পতি যুবরাজ চার্লস ও ক্যামিলা পার্কার জর্ডনের আবদুল্লা পার্কের শরণার্থী শিবির দর্শন করেন। সিরিয়ার যুদ্ধে ঘর ছাড়া বহু নারী-পুরুষ-শিশুর আশ্রয় সেই শিবির ঘুরে স্তম্ভিত তাঁরা। সংবাদমাধ্যমকে ক্যামিলা জানান, এত কঠিন পরিস্থিতিতেও সকলের মনের জোর এবং আনন্দে থাকার ক্ষমতা আশ্চর্য করেছে তাঁকে। |