কাউন্সিলরের মৃত্যুতে দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে কার্যত অভিভাবকহীন আসানসোলের দু’টি ওয়ার্ড।
কী অবস্থা সেখানকার পুর-পরিষেবার, কেনই বা উপ-নির্বাচন হচ্ছে না, খোঁজ নিল আনন্দবাজার। |
নর্দমা উপচে রাস্তায় পৌঁছেছে নোংরা জল। যেখানে সেখানে আবর্জনার স্তূপ। কোথাও পানীয় জল সরবরাহের পাইপ ফেটে গিয়েছে। সাফাই বা পাইপ সারানোর ব্যবস্থার নাম নেই বহু দিন ধরেই। হওয়ার কথাও নয়। কারণ, যাঁকে গিয়ে ধরলে এ সব বন্দোবস্ত হতে পারে, সেই কাউন্সিলরই তো নেই। এক দিন-দু’দিন নয়, আসানসোল পুরসভার ৬ ও ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডে এই পরিস্থিতি চলছে দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে।
বছর চারেক আগে কংগ্রেস ও তৃণমূল জোট গড়ে আসানসোল পুরসভায় যখন ক্ষমতায় আসে, ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী হয়েছিলেন আরএসপি-র গৌতম মাজি। এর বছরখানেক পরেই তাঁর মৃত্যু হয়। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর তথা পুরসভার সাফাই দফতরের মেয়র পারিষদ বিনয় সরকার মারা যান বছর দুয়েক আগে। নিয়ম অনুযায়ী, ছ’মাসের মধ্যে উপ-নির্বাচন করে জন প্রতিনিধি আনার কথা। কিন্তু এই দুই ওয়ার্ডে এখনও তা হয়নি। তার প্রভাব কতটা পড়েছে, এলাকা ঘুরে দেখলেই বোঝা যায়। |
৪৭ নম্বর ওয়ার্ডে সাতাডাঙাল, নিমতলা লাগোয়া বস্তিতে গিয়ে দেখা যায়, বড় কাঁচা নালার পাশে নীচু জমিতে বসবাস শতাধিক পরিবারের। নালার দু’পাড়ে সরু লোহার পাত দিয়ে অস্থায়ী সাঁকো গড়ে বাসিন্দারা যাতায়াত করেন। বিভিন্ন কারখানা ও আশপাশের অঞ্চলের নোংরা জল এই নালা দিয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা সোনা দেবী, বিমলা দেবী, ঊমা চট্টোপাধ্যায়েরা জানান, নালাটি সাফাই করার কোনও বালাই নেই। প্রায়ই আবর্জনা আটকে থাকে। নোংরা জল নর্দমা ছাপিয়ে ঘরে ঢুকে পড়ে। তাঁরা বাধ্য হয়ে নিজেরাই নালা সাফ করতে নামেন। সামান্য বৃষ্টিতেই এলাকা কার্যত নরকের চেহারা নেয় জানিয়ে তাঁরা বলেন, “সেই সময়ে বাচ্চারাও জলে ভেসে যায়।” এলাকার আর এক বাসিন্দা ছোট্টু মণ্ডলের দাবি, “শহরের মেয়র আমাদের এই সমস্যার কথা জানেন। এসে দেখেও গিয়েছেন। ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ এখনও কিছু হয়নি।” এই ওয়ার্ডেরই আনন্দনগর, তুড়িপাড়া, নিচুপাড়া-সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলে জল, রাস্তা, নিকাশির ব্যবস্থা বেশ সঙ্গীণ। পোকামাকড়, মশা, আবর্জনা নিয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ। স্থানীয় বাসিন্দা অসিত বাগের মন্তব্য, “একটা নৈরাজ্যে বাস করছি।”হুবহু একই ছবি দেখা গিয়েছে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে। সেখানকার একটা বড় অংশে উচ্চবিত্ত মানুষজন বাস করেন। হিলভিউ, চেলিডাঙার বাসিন্দারা গাঁটের কড়ি খরচ করে এলাকা সাফসুতরো রাখেন। রাস্তায় আলো লাগানো, পানীয় জলের ব্যবস্থাএ সব নিজেরাই করে নিয়েছেন। কিন্তু একটা বড় অংশ রয়ে গিয়েছে অন্ধকারেই। লোয়ার চেলিডাঙা, লোরেটা পাড়া, হুচুক পাড়া, ডোমপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, রাস্তা ও গলি অপরিচ্ছন্ন, যেখানে সেখানে আবর্জনার স্তূপ। এখানেও নর্দমার জল রাস্তা দিয়ে বইছে। সেপটিক ট্যাঙ্ক ফেটে দুর্গন্ধ ছড়ায়। পানীয় জলের পাইপ ফেটে গিয়ে সেখান দিয়ে নর্দমার জল ঢোকে। এলাকার বাসিন্দা বেরোনিকা হেমব্রম বলেন, “আমাদের দেখার কেউ নেই। খুব কষ্টে আছি।” |
প্রাক্তন শিক্ষক রামজি দুবের অভিযোগ, “প্রায় দু’বছর হতে চলল পুরসভার সাফাইকর্মীদের দেখিনি।” সুরেশ শর্মা নামে আর এক জন বলেন, “সাফাই ও পানীয় জলের জন্যই বেশি কষ্ট হচ্ছে। ব্যবস্থা নিতে বলব কাকে, কাউন্সিলরই তো নেই।” তাঁর দাবি, “মেয়রের কাছে গিয়ে বলেছি। লাভ যে কিছু হয়নি, তা তো দেখেই বুঝতে পারছেন।”
এমন পরিস্থিতি থেকে তাঁদের রেহাই দিতে পারে উপ-নির্বাচন, বলছেন বাসিন্দারা। কিন্তু দীর্ঘ দিন পেরিয়ে গেলেও তো তা হচ্ছে না। কেন হচ্ছে না উপ-নির্বাচন, সে নিয়েও চলছে চাপান-উতোর।
|