ডাক্তার দুষলেন ব্লাড ব্যাঙ্ককে
রক্ত দেওয়ার পর নার্সিংহোমে মৃত্যু প্রসূতির
রকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া রক্তের জন্যই এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করলেন এক চিকিৎসক। চিকিৎসায় গাফিলতিতে ওই প্রসূতির মৃত্যুর পরে অভিযোগের আঙুল উঠেছে বর্ধমান শহরের একটি নার্সিংহোমের ওই চিকিৎসক তপন মণ্ডলের বিরুদ্ধেই। তিনি অবশ্য পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, রক্ত দেওয়ার পরেই অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় ওই প্রসূতির। এবি নেগেটিভ গ্রুপের সেই রক্ত নিয়ে আসা হয়েছিল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে।
তপনবাবুর অভিযোগ, সম্ভবত ভুল গ্রুপের বা সংক্রামিত রক্ত দেওয়ার ফলেই শিপ্রা মণ্ডল (১৯) নামে বাঁকুড়ার মধুবন-কঙ্কাবাটির কোটালপুরের বাসিন্দা ওই মহিলার মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে প্রসববেদনা নিয়ে বর্ধমানের বড়বাজারে ওই নার্সিংহোমে ভর্তি হন তিনি। শনিবার রাত ৮টা নাগাদ সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর বাবা, রায়নার গোপীনাথপুরের সচ্চিদানন্দ ঘোষ বর্ধমান থানায় নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ করেন। তার পরেই চিকিৎসক তপনবাবু থানায় একটি আবেদনপত্র জমা দেন। তাতে তিনি অভিযোগ করেন, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে আনা রক্ত প্রসূতিকে দেওয়ার পরেই বিপত্তি বাধে। মৃতদেহের ময়না-তদন্তেরও আবেদন করেন তিনি। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে রবিবার পুলিশ দেহ ময়না-তদন্তেও পাঠিয়েছে।
তপনবাবু জানান, শিপ্রাদেবীকে দেখে অস্ত্রোপচার করে তাঁর প্রসবের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ানোর জন্য দুই ইউনিট রক্ত দেওয়া হবে বলেও ঠিক হয়। তপনবাবু বলেন, “প্রথম পাউচ থেকে রক্ত দেওয়ায় কোনও সমস্যা হয়নি। কিন্তু পরের পাউচ থেকে রক্ত দিতেই প্রসূতির অস্বস্তি ও বুকে ব্যথা শুরু হয়। এক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ পরীক্ষা করে তাঁকে শীঘ্র আইসিইউ-তে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন। সেই বন্দোবস্ত চলাকালীনই প্রসূতির মৃত্যু হয়।” তাঁর অভিযোগ, “দ্বিতীয় পাউচে যে রক্ত ছিল, ১১ মার্চ তার মেয়াদ ফুরোনোর কথা। সম্ভবত রক্তটি সংক্রামিত বা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তাই প্রসূতির মৃত্যু হয়। পাউচের মধ্যে ভুল গ্রুপের রক্তও থেকে থাকতে পারে। তাই আমি পুলিশের কাছে ময়না-তদন্তের আবেদন জানাই।”
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, রবিবার রাত পর্যন্ত তাঁরা অভিযোগ হাতে পাননি। হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক স্নেহাংশু মণ্ডলকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি। হাসপাতালের সুপার অসিতবরণ সামন্ত শুধু বলেন, “অভিযোগ হাতে পেলেই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারব।” তবে ডেপুটি সুপার তাপস ঘোষের বক্তব্য, “ভুল গ্রুপের রক্ত দিলে রোগীর মৃত্যু হতে পারে। তবে ১১ মার্চ যে রক্তের মেয়াদ ফুরনোর কথা, তা ৯ মার্চ দিলে মৃত্যু হবে না। অভিযোগ পেলে ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হবে।”
মৃতের আত্মীয় বাপ্পাদিত্য ঘোষের অবশ্য দাবি, “আমাদের সন্দেহ, নার্সিংহোমের কর্মীদের ভুলেই অন্য কোনও গ্রুপের রক্ত দিয়ে দেওয়া হয়েছে। শনিবার রাতে অভিযোগ করা সত্ত্বেও পুলিশ নার্সিংহোম বা সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি।” তপনবাবুর বিরুদ্ধে অবশ্য এর আগেও গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কিছু দিন আগে ওই নার্সিংহোমে তাঁর অধীনে প্রসবের পরে এক সদ্যোজাতকে মৃত ঘোষণা করা হয়। পরে বাড়ির লোকজন দেখেন, শিশুটি জীবিত। শনিবারের ঘটনা প্রসঙ্গে বর্ধমান থানার আইসি দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “অভিযোগ পেলেই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, এমন নিয়ম নেই। গাফিলতি ছিল কি না, প্রথমে তার প্রমাণ পেতে হবে।”
আইসি দিলীপবাবু জানিয়েছেন, জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে মেডিক্যাল বোর্ড বসিয়ে এই মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানের জন্য লিখিত আবেদন করা হবে। তিনি বলেন, “তাতে কারও গাফিলতি রয়েছে প্রমাণ হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.