দমকল ও পুলিশকর্মীদের সামনেই নীচে পড়ে মারা গেলেন প্রায় দেড় দিন ধরে তিন তলা বাড়ির চিলেকোঠায় উঠে থাকা এক মানসিক অবসাদগ্রস্ত যুবক।
এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার উপযুক্ত পরিকাঠামো প্রশাসনের কাছে রয়েছে কি না, শনিবার রাতে পুরুলিয়া শহরের ওই ঘটনা সে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও মৃতের আত্মীয়দের আক্ষেপ, নীচে একটা জাল পাতা থাকলেই অমিতকুমার সিং (৩০) নামে ওই যুবককে বাঁচানো যেত। কিন্তু এ রাজ্যে দমকলের কাছে তেমন জাল নেই বলে জানিয়েছেন খোদ দমকলমন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খান। তিনি বলেন, “ঘটনার কথা শুনেছি। জেলায় জেলায় দমকলকেন্দ্রগুলিতে জাল পাঠানোর ব্যবস্থা করব। দমকলের ডিজি-র কাছে পুরো ঘটনার রিপোর্ট চেয়েছি।” দমকলের এডিজি গোপাল ভট্টাচার্য বলেছেন, “শুধু জেলা নয়, কলকাতাতেও দমকলের কাছে ওই ধরনের জাল নেই।” |
পরিবার সূত্রের খবর, পুরুলিয়া জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ রামবিষ্ণু সিং-এর সম্পর্কিত নাতি অমিত কয়েক বছর ধরে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। আড়শা থানার মুদালি গ্রামে তাঁর বাড়ি। ডাক্তার দেখানোর জন্য শুক্রবার তাঁকে গ্রাম থেকে পুরুলিয়া শহরের সাহেববাঁধ রোডে জেলা পরিষদের অতিথি নিবাসে আনা হয়। রামবিষ্ণুবাবু জানান, ওই দিন বিকেলে অমিত অতিথি নিবাসের ছাদে উঠে গিয়ে দরজা আটকে দেন। বহু সাধাসাধির পরেও আর ছাদের দরজা খোলেননি।
শনিবার খবর যায় দমকল এবং পুলিশে। কিন্তু পুলিশ এবং দমকলকর্মীরা ছাদে উঠেও অমিতকে বাগে আনতে পারেননি। তিনি চিলেকোঠা থেকে শুরু করেন ইট-বৃষ্টি। পুলিশ জানায়, ইটের ঘায়ে দুই এনভিএফ ও এক পুলিশকর্মী জখম হন। দমকলকর্মীরা মই লাগিয়ে চিলেকোঠায় ওঠার চেষ্টা করলে অমিত সে মই ঠেলে ফেলে দেন। দমকলকর্মীরা জল ছেটালেও তিনি নামেননি। আচমকা চিলেকোঠার ন্যাড়া ছাদ থেকে প্রায় ৪০ ফুট নীচে পড়ে যান অমিত। গুরুতর আহত অবস্থায় বোকারোর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।
পুরুলিয়ার জেলা সভাধিপতি বিলাসীবালা সহিস বলেন, “এ ধরনের ঘটনায় উদ্ধারকার্যের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা যাতে আগে থেকে তৈরি রাখা যায়, প্রশাসনিক বৈঠকে আমি সে প্রস্তাব রাখব।”
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পুরুলিয়া জেলা পরিষদের নির্বাহী বাস্তুকার কান্তি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “নীচে একটা বড় জাল পাতা থাকলে, ছেলেটা তাতে আটকে যেত। বেঁচেও যেত। মোবাইলের টাওয়ার কিংবা উঁচু বাড়ির ছাদে এ রকম কেউ উঠে পড়লে, তাঁকে বাঁচানোর কোনও উপায়ই কি নেই?” |