হাতি মৃত্যু ঠেকাতে সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত ডুয়ার্স লাইনে ৫০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানোর নির্দেশ দিয়েছে উত্তর-পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার আরএস ভিরদি। রবিবার শিলিগুড়ি জংশনের কাছে ডিজেল লোকোমেটিভ শেডের স্বর্ণজয়ন্তী পূর্তি উৎসবে যোগ দেন ভরিদি। সেখানে তিনি জানান, শিলিগুড়ি থেকে আলিপুরদুয়ার পর্যন্ত ট্রেন চলাচলে গতি নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “চালকদের স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে ওই লাইনে ট্রেন চালাতে হবে।”
এ ছাড়াও হাতি মৃত্যু রোধে আরও সিদ্ধান্তের কথা তিনি জানান। তাতে হাতির করিডরগুলি বেছে নিয়ে তিনটি জায়গায় আন্ডারপাস তৈরি করা হবে। সেগুলি মূলত হাতিদের চলাচলের সুবিধের জন্য করা হবে। এর মধ্যে একটি গুলমার কাছে করা হবে। বাকি দুটি রাজাভাতখাওয়া ও মালবাজারে করা হতে পারে বলে রেল দফতর সূত্রের খবর। জিএম বলেন, “হাতিদের চলাচলের জন্য আন্ডারপাসের কাজ শুরু করা হয়েছে। তা দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।” পাশাপাশি রেল লাইন ঘেঁষে ফেন্সিং তৈরির উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। রেল রর্তাদের দাবি, ফেন্সিং তৈরি করা হলে হঠাৎ করে কোনও হাতি রেল লাইনে উঠতে পারবে না।
জিএম এ দিন দাবি করেন, রেল চলাচলের আগে লাইনের কাছে হাতির দল রয়েছে কি না তা জানতে ওয়াকি টকির ব্যবহার শুরু করে দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। তিনি এ দিন বলেন, “বন দফতরের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে। রেল কর্মীরা ওয়াকি টকির মাধ্যমে বনরক্ষীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তাতে হাতির দলের গতিবিধি জানতে দু’পক্ষেরই সুবিধে হচ্ছে।”
বন দফতর সূত্রের খবর, ২০১১ সালের পর থেকে শিলিগুড়ি-আলিপুরদুয়ার রেল লাইনে ট্রেনের ধাক্কায় ১১টি হাতির মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে ২০১৩ সালে ৬টি হাতির মৃত্যু হয়েছে। গত জানুয়ারি মাসে বক্সায় ঝাঝা এক্সপ্রেসের ধাক্কায় ৫টি হাতির মৃত্যু হয়েছে। ৫ মার্চ বক্সাতেই সম্পর্কক্রান্তি এক্সপ্রেসের ধাক্কায় ১টি হাতির মৃত্যু হয়। রেলের জেনারেল ম্যানেজার এদিন দাবি করেন, ৫ মার্চ দুর্ঘটনায় রেল চালকের কোনও গাফিলতি নেই। তিনি বলেন, “ওই হাতিটি ট্রেনটিকে ধাওয়া করছিল। তা নজরে পড়ায় চালক গাড়ির গতি কমিয়ে দেয়। কিন্তু হাতিটি গিয়ে ইঞ্জিনে ধাক্কা দেয়। তাতেই তার মৃত্যু হয়েছে।” পরিবেশপ্রেমী সংস্থাগুলি অবশ্য দাবি করেছেন, ওই লাইনে অপ্রয়োজনীয় তীব্র গতির ট্রেনগুলির চলাচল বন্ধ না করলে হাতির মৃত্যু রোধ করা যাবে না। হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, “রেল কর্তৃপক্ষ বহুদিন ধরে নানা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছেন। কিন্তু ওই সব ব্যবস্থায় হাতি মৃত্যু রোধ করা যাবে না। অপ্রয়োজনীয় ট্রেনগুলিকে প্রথমে ডুয়ার্সের লাইনে চলাচল বন্ধ করতে হবে।”
এদিন সেখানে উপস্থিত ছিলেন উত্তর-পূর্ব রেলের প্রাক্তন জেনারেল ম্যানেজার তথা মেকানিক্যাল রেলওয়ে বোর্ডের সদস্য কেশব চন্দ্র উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, দার্জিলিং-ঘুম যে টয় ট্রেন চলাচল করছে তাতে আয় বৃদ্ধি হয়েছে। ৫৫ নম্বর জাতীয় সড়কে ধস নামার কারণে কয়েক বছর ধরে রংটং-কার্শিয়াং লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সেই লাইন কবে নাগাদ চালু হতে পারে তা নিয়ে স্পষ্ট কিছু জানাতে পারেননি তারা। এদিন একটি নতুন লোকোশেডের উদ্বোধন করা হয়। এ ছাড়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। |