সম্পাদকীয় ১...
উভয়সঙ্কটে ভারত
শ্রীলঙ্কা লইয়া ভারত উভয়সঙ্কটে পড়িয়াছে। সঙ্কটের একদিকে রহিয়াছে রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার পরিষদে অনুষ্ঠেয় সম্মেলন, যেখানে শ্রীলঙ্কা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নিরস্ত্র ও অসামরিক তামিলদের গণহত্যা ও গণধর্ষণের অভিযোগে এবং সরকারের বিরুদ্ধে সেই অভিযোগের তদন্ত না করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আনা নিন্দা-প্রস্তাবে ভারতের অবস্থান। অন্য দিকে রহিয়াছে এই প্রতিবেশী রাষ্ট্রটির সহিত দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নিবিড় করার তাগিদ, গণপ্রজাতন্ত্রী চিনের সহিত কলম্বোর ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতার কারণে যাহা অপরিহার্য হইয়া উঠিয়াছে। পরিস্থিতি এমন যে ভারতীয় বিদেশমন্ত্রকের পক্ষে দীর্ঘ কাল ধরি-মাছ-না-ছুঁই-পানি মনোভাব আঁকড়াইয়া থাকা ক্রমেই কঠিন হইয়া পড়িতেছে। পরিস্থিতি জটিলতর হইয়াছে ভারতের অভ্যম্তরীণ রাজনীতিতে তামিল খণ্ডজাতীয়তাবাদী আবেগের উৎসারে। কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন ইউপিএ সরকারের শরিক ডিএমকে এবং তামিলনাড়ুর শাসক দল এডিএমকে উভয়েই সমস্বরে শ্রীলঙ্কা সরকারের প্রতি কঠোর মনোভাব অবলম্বনের জন্য চাপ দিতেছে।
এলটিটিই-র সর্বাধিনায়ক ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণের নাবালক পুত্রের কয়েকটি ছবি (যাহাতে তাহাকে বসাইয়া খাবার খাওয়ানো এবং তাহার পর ঠান্ডা মাথায় কাছ হইতে একাধিক গুলিতে ঝাঁঝরা করিয়া হত্যা করার প্রমাণ স্পষ্ট) গৃহযুদ্ধের অন্তিম পর্বে শ্রীলঙ্কা সেনাবাহিনীর পরিকল্পিত তামিল-নিধনের বর্বরতাকে নূতন করিয়া সামনে লইয়া আসে। প্রেসিডেন্ট মহিন্দা রাজাপক্ষে ও তাঁহার পরিবারের প্রবল অস্বীকার সত্ত্বেও অসামরিক ও নিরস্ত্র তামিলদের মানবাধিকার উল্লঙ্ঘনের তদন্তের দাবি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আন্দোলনে উত্তরোত্তর প্রবল হইয়াছে। ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলি স্বভাবতই রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার পরিষদকে ব্যবহার করিয়া শ্রীলঙ্কা সরকারকে তদন্তে বাধ্য করিতে উদ্যোগী। এই উদ্যোগে ইতিপূর্বে ভারতকেও তাহারা সঙ্গে পাইয়াছে। কিন্তু তাহাতে রাজাপক্ষে সরকার নয়াদিল্লির উপর বিষম ক্ষুব্ধ হয়। আরও একবার একই ভাবে ভারত তামিল গণহত্যার প্রশ্নে শ্রীলঙ্কাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাইলে ওই দেশের আরও বেশি করিয়া চিনের দিকে ঝুঁকিয়া পড়ার আশঙ্কা। নয়াদিল্লির এই কূটনৈতিক আশঙ্কাকে কলম্বো পূর্ণ মাত্রায় কাজেও লাগাইতেছে। হাম্বানতোতায় চিনা বিনিয়োগে বন্দরনগরী গড়িয়া ওঠার পর আরও বহু চিনা অনুদান শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির জন্য অপেক্ষা করিয়া আছে। এ সবই শ্রীলঙ্কায় সম্ভাব্য চিনা রণনৈতিক ঘাঁটি গড়িয়া ওঠার প্রস্তুতি হইতে পারে। অন্তত ইহা যে ভারতকে চার দিক হইতে ঘিরিয়া ফেলার (মায়ানমার, চট্টগ্রাম এবং পাকিস্তানের গদর বন্দরে ঘাঁটি গাড়ার পর) রণনৈতিক লক্ষ্য সিদ্ধ করিতে কার্যকর হইবে, তাহাতে সন্দেহ নাই। ভারতের শঙ্কা অমূলক নয়। আবার সেই কারণে তামিল প্রশ্নটিকে উপেক্ষা করাও অনুচিত, মানবাধিকারের বৃহত্তর নিরিখে তো বটেই, ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সংকীর্ণ স্বার্থেও। এলটিটিই-কে দমন করা আর দ্বীপরাষ্ট্রে তামিলদের স্বায়ত্তশাসন মঞ্জুর করা দুইটি স্বতন্ত্র বিষয়। রাজাপক্ষে সরকার তাহার পূর্বসূরিদের যাবতীয় প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করিয়া তামিল স্বশাসনের প্রশ্নটিকে কার্যত উড়াইয়া দিয়াছে। বিপরীতে চলিয়াছে দমন-পীড়ন, শোষণ, ভিটেমাটি হইতে উৎখাত করিয়া অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তামিল জনগোষ্ঠীকে ঠেলিয়া দিবার প্রক্রিয়া। পক প্রণালী পার হইয়া ভারতে তাহার প্রতিক্রিয়া হইতেছে, তামিলনাড়ুর রাজনীতিও উত্তপ্ত হইতেছে। ভারতের পক্ষে ইহা উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। নয়াদিল্লি তাই আপাতত মধ্যপন্থা অবলম্বনের সিদ্ধান্ত লইয়াছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার পরিষদে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে আনীত মার্কিন প্রস্তাবকে ভারত সমর্থন করিবে, যদি তাহা শ্রীলঙ্কার অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ হইতে বিরত থাকে। অর্থাৎ শ্রীলঙ্কাকে তদন্তে বাধ্য করিতে বাহির হইতে কোনও অভিযান চালানোর বিরোধী ভারত। মনে হয়, নয়াদিল্লির এই অবস্থানই পরিস্থিতি-বিচারে শ্রেষ্ঠ পন্থা। ইহাতে সাপ না-মরুক, অন্তত লাঠি ভাঙিবে না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.