|
|
|
|
ভাল কাজের মন্ত্রে ভুল ভোলাতে চান মোদী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
গোধরা-পরবর্তী দাঙ্গার ক্ষত মুছে ফেলতে তিনি যে মরিয়া, প্রসঙ্গ না তুলেও তা একাধিক বার বুঝিয়ে দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। বুঝিয়ে দিয়েছেন, সেই কাজে উন্নয়নকেই মূল মন্ত্র করতে চান তিনি। আরও একবার সেই কথারই পুনরাবৃত্তি করলেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী। রবিবার বিজেপির প্রবাসী শাখার উদ্যোগে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নিউ জার্সি ও শিকাগোয় বসবাসকারী ভারতীয়দের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মোদীর মন্তব্য, “সরকার নিঃস্বার্থ ভাবে ভাল কাজ করলে মানুষ তার পুরনো ভুল ক্ষমা করে দেয়।”
সাম্প্রদায়িকতার প্রসঙ্গ তুলে ক’দিন আগেই আমেরিকার হোয়ার্টন স্কুলে তাঁর বক্তৃতা বাতিল হয়েছিল। সেই মার্কিন মুলুকেই রবিবার নিজের বক্তব্য পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন মোদী। সেই সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহারও করেছেন তিনি। প্রবাসীদের কাছে বক্তব্যে নিজের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি তুলে ধরার চেষ্টা চালিয়ে গেলেন। হোয়ার্টন স্কুলে তাঁর সাম্প্রতিক বক্তৃতা বাতিলের প্রসঙ্গ না তুললেও এ দিন ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গীতে বিরোধীদের সমালোচনার জবাব দিতে চেয়েছেন মোদী। তাঁর কথায়, “ধর্মনিরপেক্ষতার সংজ্ঞাটা আমার কাছে খুব সরল। আগে এবং সবার আগে ভারত।” |
|
ভিডিও কনফারেন্সে বক্তৃতা। |
উন্নয়ন নিয়ে মোদী অনেক বার অনেক মঞ্চেই আলোচনা করেছেন। কিন্তু ‘বিকাশপুরুষ’ হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে গোধরা পরবর্তী দাঙ্গার যে ভূত এখনও তাঁকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে, তাকে কাঁধ থেকে নামানোই এখন মোদীর প্রধান উদ্দেশ্য। তাই নিজের পুরনো ভাবমূর্তি ঝেড়ে ফেলতে ধর্মনিরপেক্ষতার উপরেই এ দিন বেশি জোর দিয়েছেন তিনি। আগাগোড়া সতর্ক বক্তৃতায় গোধরা-প্রসঙ্গ না তুললেও উন্নয়নের মন্ত্রেই যে সেই বিতর্ককে চাপা দিতে চান, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি।
তাঁর পঞ্চাশ মিনিটের বক্তব্যে উঠে এসেছে যুবদের উন্নয়ন, আর্থিক বৃদ্ধি-সহ একাধিক বিষয়। এই প্রসঙ্গেই কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেটের সঙ্গে গুজরাতের বাজেটের তুল্যমূল্য বিচার করে পরোক্ষে বিঁধেছেন মনমোহনকে। “আমি কোনও সরকারের সমালোচনা করতে চাই না,” বললেও কেন্দ্রের সঙ্গে দৃষ্টিভঙ্গীর ফারাক বোঝাতে মোদী বলেন, “যুবদের দক্ষতার উন্নয়নের জন্য কেন্দ্র যখন এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে, তখন একই খাতে ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে গুজরাত!”
স্বাভাবিক ভাবেই মোদীর এ দিনের মন্তব্য নিয়ে সরব হয়েছে কংগ্রেস। মোদীর ‘পুরনো ভুল ক্ষমা করে দেওয়া’র প্রসঙ্গ টেনে তাঁকে পাল্টা আক্রমণ করতে ছাড়েনি তারা। কংগ্রেসের শীর্ষ স্তরের এক নেতার কথায়, “যা-ই বলুন, গোধরা ওঁর পিছু ছাড়বে না! শুধু উন্নয়নের কথা বললেই কি কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যুর দায় এড়ানো যায়? ”
বস্তুত লোকসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, বিজেপির অঘোষিত মুখ নরেন্দ্র মোদী ততই নিজেকে সব স্তরে গ্রহণযোগ্য করে তোলার মরিয়া চেষ্টা করছেন। দেশের গণ্ডী ছাড়িয়ে অন্য দেশগুলির কাছেও নিজেকে তুলে ধরতে মরিয়া তিনি। আর তাই তিনিই এই মুহূর্তে কংগ্রেসের প্রধান লক্ষ্য। মোদীর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন খোদ মনমোহন সিংহ। গত সপ্তাহেই সংসদে মনমোহন যথেষ্ট আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে বিজেপিকে বিঁধেছেন। জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে মোদী যে ভাবে মনমোহনকে কটাক্ষ করেছেন, তারও জবাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দিল্লির শ্রীরাম কলেজে মোদীর মতোই উন্নয়ন নিয়ে বক্তব্য রাখার আমন্ত্রণও পেয়েছেন তিনি। যদিও সংসদের অধিবেশন চলায় তিনি সেখানে যেতে পারবেন না বলে জানানো হয়েছে।
কংগ্রেস মোদীকে নিশানা করায় পাল্টা আসরে নেমেছে বিজেপিও। এবং তাদের লক্ষ্য মনমোহনই। দলের এক নেতার কথায়, “দেশকে এই বেহাল আর্থিক দশার মুখে দাঁড় করিয়ে প্রধানমন্ত্রী যদি উন্নয়নের খতিয়ান দিতে চান, তা হলে তো তাঁর দুর্নীতির খতিয়ানও দেওয়া উচিত। মন্দার অজুহাতে ভারতের অর্থনীতির হাল ফেরাতে পারেননি অর্থনীতিবিদ মনমোহন, অথচ দেশের বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি এই অবস্থাতেও আর্থিক বৃদ্ধি ধরে রেখেছে! মোদীর সঙ্গে যতই টেক্কা নেওয়ার চেষ্টা করুন মনমোহন, উনি পারবেন না!” |
|
|
|
|
|