আর পরীক্ষামূলক বা উদ্বোধন নয়, রবিবার রাতে কলকাতার নতুন টার্মিনাল থেকে চালু হল নিয়মিত উড়ান। যদিও এখনও শেষ হয়নি কাজ। জেট এয়ারওয়েজের কলকাতা-ব্যাঙ্কক রুটের যে বিমানটি রবিবার রাত দেড়টায় ছাড়ল, তার যাত্রীরা ব্যবহার করলেন ২৩০০ কোটি টাকা খরচে তৈরি নতুন এই টার্মিনাল। উদ্বোধনের দিন যা দেখে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন, “বিশ্ব-মানের।”
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, এখনও নতুন টার্মিনালের গেট নম্বর ১এ, ১বি-র দিকে কাজ চলছে। ফলে, ওই দিকটি এখন চালু করতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ। শহর থেকে এসে যাত্রীরা ওই দু’টি গেট ছাড়িয়ে পরের গেট দিয়ে টার্মিনালে ঢুকবেন। পুরনো টার্মিনালে পাঁচতারা হোটেল সংস্থার যে রেস্তোরাঁ রয়েছে, নতুন টার্মিনালে তারা অসমাপ্ত অংশে জায়গা পাওয়ায় সেখানে সরতে তাদের আরও ১০ দিন লাগবে। সেই রেস্তোরাঁ যেমন থাকবে না, তেমনই থাকবে না দামি ব্র্যান্ডের দোকানও। এ সব শেষ হতে এখনও বেশ কিছু সময় লাগবে বলে বিমানবন্দর সূত্রে খবর। তবে, রবিবার সন্ধ্যায় কলকাতা বিমানবন্দরের অধিকর্তা বি পি শর্মা বলেন, “যাত্রীদের জন্য খাবারের দোকান, কফি, বিদেশি মুদ্রা বিনিয়োগের কাউন্টার এমনকী কর-মুক্ত বিপণিও চালু করে দেওয়া হয়েছে।”
এর আগে বার বার দিনক্ষণ ঘোষণা করেও নানাবিধ কারণে নতুন টার্মিনালের কাজ শেষ করতে, তা উদ্বোধন করতে এবং চূড়ান্ত ভাবে চালু করতে গিয়ে পিছিয়ে যেতে হয়েছে কর্তৃপক্ষকে। এ বার অনেকটা মরিয়া হয়েই শুরু হয়েছে টার্মিনাল চালুর কাজ। রবিবার রাত থেকে পর্যায়ক্রমে এক একটি বিমানসংস্থা তার উড়ান সরিয়ে নিয়ে যাবে নতুন টার্মিনালে। |
বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল। —ফাইল চিত্র |
কর্তৃপক্ষের দাবি, শুক্রবার, ১৫ মার্চ থেকে কলকাতার সমস্ত উড়ানের যাত্রীই নতুন টার্মিনাল ব্যবহার করতে পারবেন। ১৬ তারিখ থেকে তাই নতুন টার্মিনাল ব্যবহারের জন্য প্রতিটি যাত্রীর কাছ থেকে ইউজার্স ডেভেলপমেন্ট ফি (ইউডিএফ) নেওয়া হবে বলেও ঘোষণা করা হয়েছে।
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, নতুন টার্মিনালে যাত্রীদের মালপত্র বিমানে যে ব্যবস্থার মাধ্যমে পৌঁছনো হবে, তার জন্য সংশ্লিষ্ট পরিষেবা-সংস্থার সঙ্গে বিমানসংস্থাগুলির চুক্তি আর্থিক কারণে রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি। বিমানসংস্থার এক কর্তার কথায়, “ওই ব্যবস্থা ছাড়া প্রতি দিন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের হাতে গোনা কয়েকটি উড়ানে কর্মীদের দিয়ে উতরে দেওয়া যাবে। কিন্তু, অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রের অতগুলি উড়ান ওই ব্যবস্থা ছাড়া চালানো সম্ভব নয়।” ঠিক হয়েছিল ১১ মার্চ জেট এয়ারওয়েজের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উড়ান নতুন টার্মিনালে সরানো হবে। কিন্তু এখন ঠিক হয়েছে জেট-এর শুধু আন্তর্জাতিক উড়ান সরবে ১১ তারিখ। আশা করা হচ্ছে, ওই পরিষেবা-সংস্থার সঙ্গে চুক্তি আগামী তিন দিনে চূড়ান্ত হবে। বি পি শর্মার কথায়, “ওই ব্যবস্থা এখনই ব্যবহার করতে পারবে বিমানসংস্থাগুলি। আর্থিক বিষয়টি পরেও মীমাংসা করে নিতে পারে।”
বিমানসংস্থাগুলির আশঙ্কা, ইন্ডিগো, জেট, এয়ার ইন্ডিয়া এবং স্পাইসজেটের এতগুলি অভ্যন্তরীণ উড়ান শুক্রবারের মধ্যে সরানো নিয়েও সমস্যা হতে পারে। হয়তো আরও দিন তিনেক সময় লাগবে। সে ক্ষেত্রে নতুন টার্মিনাল আর এখনকার অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল একই সঙ্গে কাজ করবে। এখানেও সমস্যা আছে। সোমবার থেকেই নতুন টার্মিনালে পুরোমাত্রায় কর্মী নিয়োগ করতে হচ্ছে বিমানসংস্থাগুলিকে। সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স (সিআইএসএফ)-এর জওয়ানেরা শনিবার থেকে নতুন টার্মিনালে পাহারার কাজ শুরু করেছে। শুক্রবারের মধ্যে সমস্ত উড়ান নতুন টার্মিনালে না সরলে সিআইএসএফ এবং বিমানসংস্থার কর্মী দিয়ে এক সঙ্গে দু’টি টার্মিনাল সামলানো মুশকিল হবে বলে মনে করা হচ্ছে। দেশের অন্যান্য নতুন বিমানবন্দরে ঢোকার পরে যাত্রীরা সোজা চেক-ইন কাউন্টারে পৌঁছে মালপত্র তুলে দেন বিমানসংস্থার হাতে। সেখান থেকে ‘ইন-লাইন ব্যাগেজ সিস্টেম’ মারফৎ ব্যাগ পৌঁছয় বিমানে। তার মধ্যে এক্স-রে মারফৎ ব্যাগ পরীক্ষা হয়। কলকাতায় তা চালু না হওয়ায় পুরনো বিল্ডিংয়ের মতোই নতুন টার্মিনালে ঢুকেই এক্স-রে মেশিনের সামনে দাঁড়াতে হবে যাত্রীদের। ব্যাগ এক্স-রে করে তবে চেক-ইন কাউন্টারে যেতে পারবেন। এয়ারলাইন্স অপারেটিং কমিটির চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন সর্বেশ গুপ্ত রবিবার বলেন, “পুরনো বিল্ডিংয়ে জায়গা কম ছিল। মেশিন ছিল ৫টি। এখানে জায়গা বেশি। ৭টি মেশিন বসবে। যাত্রীদের অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।” |