জামাতে ইসলামির প্রাক্তন আমির গোলাম আজমের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ায় বারে বারে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল বাংলাদেশের জনপ্রিয় গীতিকার-সুরকার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলকে। নিরাপত্তার কারণে গত সাত মাস ধরে কার্যত গৃহবন্দি রয়েছেন বুলবুল। শনিবার রাতে তাঁর ভাইয়ের মৃতদেহ মিলল ঢাকার খিলখেতে রেল লাইনের ধারে। পুলিশ জানিয়েছে, শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে বুলবুলের ভাই মিরাজুদ্দিন আহমেদকে।
এর আগে শুক্রবার নারায়ণগঞ্জে গণজাগরণ মঞ্চের প্রধান সংগঠক রফিউর রাব্বির কিশোর ছেলে তনভিরকে অপহরণ করে খুন করা হয়েছিল। এ বার দশম শ্রেণির পরীক্ষায় পদার্থবিদ্যায় গোটা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে তনভির। রবিবার ঢাকার উপকণ্ঠে উত্তরায় বিশাল জন সমাবেশ করে শাহবাগের তরুণ আন্দোলনকারীরা এই দুই খুনের জন্য জামাতে ইসলামির ‘খুনে বাহিনীকে’ দায়ী করেছে। এর আগে বিএনপি-র রাজাকার নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার পরে গত ২২ ফেব্রুয়ারি খুন হয়েছিলেন চট্টগ্রামের সৈয়দ ওয়াইদুল আলম নামে এক জন। |
শাহবাগের জনসভায় মেয়েরা। ছবি: রয়টার্স। |
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু রবিবার জানিয়েছেন, দেশজুড়ে হামলা, অগ্নিসংযোগের কর্মসূচি নিয়ে জামাতে ইসলামি ও তার সংগঠন ছাত্র শিবির নিজেদের সন্ত্রাসবাদী ও জঙ্গি দল হিসেবে প্রমাণ করেছে। তারা সাধারণ মানুষ, কর্তব্যরত পুলিশ এবং সংখ্যালঘুদের নিশানা করেছে। ইনু জানান, বাংলাদেশের ‘সন্ত্রাস-বিরোধী আইন২০০৯’ অনুযায়ীই তাদের নিষিদ্ধ করা ও দ্রুত বিচারের জন্য ট্রাইবুনাল গঠন করা যায়। এর জন্য বিশেষ আইন প্রণয়নের দরকার নেই। সরকার কি এই আইনে জামাতকে নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে? এই প্রশ্নের উত্তরে তথ্যমন্ত্রী জানান, বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। আপাতত সন্ত্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করার বিষয়টিকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে প্রশাসন। ইনু বলেন, মৌলবাদী দুষ্কৃতীরা ঝটতি হামলা করায় মোকাবিলা করা কঠিন হচ্ছে। তবে সাধারণ মানুষ ও প্রশাসন মিলে সংখ্যালঘু-প্রধান এলাকাগুলিতে এখন দিনরাত পাহারার ব্যবস্থা করেছে। রবিবারও খুলনায় জামাতের কর্মীরা থানায় হামলা চালিয়ে এক পুলিশকে খুন করেছে।
শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের বিক্ষোভকারীরা আজ ঢাকার উপকণ্ঠ উত্তরায় বিরাট জনসভা করে জামাতের হিংসা প্রতিরোধের ডাক দেয়। শুক্রবার শাহবাগের নারী সমাবেশে বোমা হামলার জন্য জামাতকেই দায়ী করা হয়। ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টের আহ্বায়ক ইমরান সরকার বলেন, শাহবাগ আন্দোলন দ্বিতীয় পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। ঢাকার বাইরে আজ উত্তরার পরে ১৩ তারিখে চট্টগ্রামে সমাবেশ হবে। ইমরান বলেন, “৫ ফেব্রুয়ারি জামাতের এক হিংস্র হরতালের দিনে কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে কয়েকশো তরুণ শাহবাগের রাস্তায় নেমেছিল। সম্পূর্ণ অহিংস সেই আন্দোলন আজ বাংলাদেশের ঘরে ঘরে ছড়িয়ে গিয়েছে। সর্বত্র গড়ে উঠেছে গণজাগরণ মঞ্চ। চট্টগ্রামে মৌলবাদীরা এই মঞ্চ ভেঙে দিয়েছিল। সমাবেশের দিনেও তারা হরতাল ডেকেছে। মানুষের ঢলে সেই হরতাল মুছে যাবে।” এ দিনের সমাবেশেও মহিলা ও শিশুদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। |