নামটা বীরেন্দ্র সহবাগ বলেই ওর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটজীবন সাতই মার্চ, দু’হাজার তেরোয় শেষ হয়ে গেল বলতে পারছি না। কারণ সহবাগের ব্যাটিং কোনও ব্যাকরণের ধার ধারে না। ফলে ওর দুর্ধর্ষ ফর্মের যেমন পুরোপুরি ক্রিকেটীয় ব্যাখ্যা নেই, তেমনই অফ ফর্মেরও নেই। একটা শূন্য করার পরের ইনিংসেই ও ডাবল সেঞ্চুরি মারতে পারে। তা সত্ত্বেও সহবাগের ফের টেস্ট খেলা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। বলতে পারেন, এ বছরের শেষে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সহবাগকে দেখলে আমি অবাকই হব। যে কিনা এক যুগ আগে দক্ষিণ আফ্রিকার পিচেই অভিষেকে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে টেস্ট জীবন শুরু করেছিল।
সহবাগের বেশ কিছু দিন ব্যাটিং ফর্ম যে শুধু খারাপ যাচ্ছে তাই নয়। ও তার থেকে বেরোবার চেষ্টাটাও করছে না। এটাই আমার কাছে সবচেয়ে আশ্চর্যের লেগেছে। সহবাগের খেলাটা চোখ আর হাতের কো-অর্ডিনেশনে। দৃষ্টিশক্তিতে ইতিমধ্যেই সামান্য গণ্ডগোল হয়েছে। চশমা পরে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম দু’টো টেস্টে ব্যাট করল। অথচ সেটায় অভ্যস্ত হওয়ার জন্য কোনও প্র্যাক্টিস ম্যাচ খেলল না। সটান নেমে পড়ল টেস্টে। |
ব্যাটসম্যানের কাছে রান এমন একটা মহার্ঘ ব্যাপার যে, সেটা যখন পরের পর ইনিংসে আসে না, ক্রিজে পা এমনিতেই চলবে না। আবার পরপর ইনিংসে বড় রান এলে পা আপনাই চলতে থাকে। সচিনেরও ইংল্যান্ড সিরিজে ক্রিজে পা ঠিকঠাক চলছিল না। রান পাচ্ছিল না। ও কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে রঞ্জি, ইরানি খেলে ভাল রকম ম্যাচ প্র্যাক্টিস করে নিয়েছিল। সহবাগেরও সেটা করা উচিত ছিল। কিন্তু ও ইদানীং ঘরোয়া ম্যাচ খেলছে কই? ইরানিতে ওকে অবশিষ্ট ভারতের অধিনায়ক পর্যন্ত করা হয়েছিল। কিন্তু সহবাগ ম্যাচের আগে পেটে ব্যথা করছে বলে খেলল না!
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্ট্যান্ডার্ডে সহবাগ ফিটনেসেও আমার মতে পিছিয়ে পড়েছে। উনচল্লিশে সচিনের এখন যে ফিটনেস আছে, সহবাগের চৌত্রিশ বছরেই সেটা নেই। আউটফিল্ডে আগের গতি নেই ওর মধ্যে। ক্লোজ ইনে একটা ক্যাচ ধরলে দুটো ছাড়তে দেখা যাচ্ছে।
যদিও সহবাগের হাতে সময় রয়েছে সমস্যাগুলো সমাধানের। কারণ অস্ট্রেলিয়া সিরিজের পর ভারতের আর প্রায় গোটা বছর কোনও টেস্ট ম্যাচ নেই। সেই দক্ষিণ আফ্রিকা সফর। তা হলেও আমার মনে হয়, ওপেনিংয়ে এখন সহবাগের প্রতিযোগীর সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়ে গিয়েছে। মুরলী বিজয় ভাল খেলছে। গৌতম গম্ভীর অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ওয়ার্ম আপ ম্যাচে সেঞ্চুরি করেও বাইরে বসে আছে। শিখর ধাওয়ান গত দু’বছর ঘরোয়া টুর্নামেন্টে রান করে আসছে। মোহালিতে ওর টেস্ট অভিষেক যথার্থই প্রাপ্য। শিখর পরের দু’টো টেস্টে ভাল রান করে দিলে সহবাগের ফেরা আরওই কঠিন হয়ে উঠবে। এমনিতেই ওকে ভারতের ওয়ান ডে আর টি-টোয়েন্টি থেকে কার্যত ছেঁটে ফেলেছেন নির্বাচকেরা। বৃহস্পতিবারের পর মনে হচ্ছে, টেস্ট ক্রিকেটের দরজাও প্রায় বন্ধ হয়ে গেল। |
|
শেষ দু’বছরে দেশে সহবাগ
টেস্ট ১১, রান ৬৫৩, সর্বোচ্চ ১১৭, গড় ৩৬.২৭, সেঞ্চুরি ১।
শেষ দু’বছরে বিদেশে সহবাগ
টেস্ট ৬, রান ২৩৯, সর্বোচ্চ ৬৭, গড় ১৯.৯১।
ম্যাথু হেডেন: ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি সহবাগের বাদ পড়ায় অস্ট্রেলিয়া খুশিই হবে। সহবাগকে নিয়ে কখনওই কিছু বলা যায় না। পরের টেস্টেই হয়তো তিনশো করে দিত!
সুনীল গাওস্কর: মোহালিতে আরও একটা সুযোগ দেওয়া যেতে পারত সহবাগকে। কারণ মোহালির উইকেটে বল খুব ভাল ব্যাটে আসে। যা-ই হোক, বাদ পড়ে সহবাগের টেস্ট কেরিয়ার একেবারে শেষ হয়ে গেল বলে মনে করি না।
|
|