|
|
|
|
ফের বামে ঝুঁকে ইয়েচুরির সঙ্গে বৈঠকে রাহুল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
আগামী লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে নতুন জোট শরিকের সন্ধানে নেমেছেন রাহুল গাঁধী। সেই লক্ষ্যে তিনি ঘনঘন সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গেও বৈঠক করছেন। এক দিকে যখন তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের রাজনৈতিক দূরত্ব বাড়ছে, তখন রাহুল-ইয়েচুরি বৈঠক ২০১৪ সালে বামেদের সমর্থন নিয়ে তৃতীয় ইউপিএ-সরকার গঠনের সম্ভাবনাই আরও উস্কে দিচ্ছে।
জানুয়ারিতে কংগ্রেসের চিন্তন বৈঠকে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শর্তে আর জোট করবে না কংগ্রেস। তাঁর বক্তব্য ছিল, কংগ্রেস যেখানে দুর্বল, সেখানে অবশ্যই জোট করতে চায়। কিন্তু তা করতে গিয়ে দলের নিজস্ব শ্রীবৃদ্ধির সঙ্গে সমঝোতা করবে না তারা। ঠিক যে জায়গায় মমতার বিরুদ্ধে বারবার সরব হয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। তাঁরা বারবারই দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে বলে এসেছেন, তৃণমূল নেত্রী পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসকে অপ্রাসঙ্গিক করে দিতে চাইছেন। মমতা ইউপিএ-সরকার থেকে বেরিয়ে আসায় এবং পশ্চিমবঙ্গে জোট ভেঙে যাওয়ার পরে মমতার সরকারের বিরুদ্ধে প্রবল ভাবে ময়দানে নেমেছে প্রদেশ কংগ্রেস। কিন্তু তার পরেও ভবিষ্যতে জোট সম্ভাবনার দরজা খুলে রাখতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কংগ্রেস শীর্ষনেতৃত্ব কখনওই সে ভাবে সুর চড়াননি। বরং তৃণমূল ও সিপিএম এই দু’টি সম্ভাবনার দরজাই খোলা রাখতে চান কংগ্রেস হাইকম্যান্ড।
পশ্চিমবঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা অবশ্য দাবি করছেন, তৃণমূলের সঙ্গে ফের জোটের কোনও সম্ভাবনা নেই। সনিয়া গাঁধীরও তাই মত। আজ দিল্লিতে সনিয়ার সঙ্গে দেখা করেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান ও মান্নান হোসেন। কংগ্রেস সভানেত্রীর কাছে তাঁরা জানতে চেয়েছিলেন, লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের সঙ্গে ফের জোটের সম্ভাবনা রয়েছে কি না? দুই কংগ্রেস নেতার দাবি, সনিয়ার জবাব, ‘এমন কিছু হবে না।’ বাম শিবিরেও এ নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। সংসদের লবিতে অধীর চৌধুরীর সঙ্গে দেখা হলে গুরুদাস দাশগুপ্ত জানতে চাইছেন, আবার কংগ্রেস-তৃণমূল জোট হচ্ছে কি না। কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, সংসদে তৃণমূল যে ভাবে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আক্রমণ শাণাচ্ছে, রাজ্যসভায় রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা নিয়ে বিতর্কে ডেরেক ও’ব্রায়েন সরাসরি গাঁধী-পরিবারকে নিশানা করছেন, তার পরে ফের কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের সম্ভাবনা ক্রমশ কমছে।
এখানেই ইয়েচুরির সঙ্গে রাহুলের ঘনঘন বৈঠক তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠছে। সিপিএম সূত্রের খবর, সংসদের অ্যানেক্স ভবনে পরিবহণ-পর্যটন মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে ইয়েচুরির যে অফিস রয়েছে, সেখানেই রাহুল একাধিক বার হাজির হয়েছেন। দুই নেতার বৈঠকও হয়েছে। বিভিন্ন
বিষয়ে সিপিএমের কোথায় কেন আপত্তি রয়েছে, তা বুঝতে চেয়েছেন রাহুল। সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য সরকারি ভাবে একে বাড়তি কোনও রাজনৈতিক গুরুত্ব দিতে নারাজ। দলের নেতাদের বক্তব্য, সংসদের দুই সদস্যের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মত বিনিময় হয়েই থাকে। এর সঙ্গে রাহুলের জোট-শরিক সন্ধানের কোনও সম্পর্ক নেই।
কিন্তু এমন যুক্তি মানতে রাজি নন রাজনীতির কারবারিরা। রাহুল সম্প্রতি যাঁদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, তার মধ্যে রয়েছেন এনসিপি-র শরদ পওয়ার, ডিএমকে-র কানিমোঝি, কেরলের আইইউএমএল-এর ই আহমেদ। এঁরা প্রত্যেকেই বর্তমানে ইউপিএ-র শরিক। আবার লালুপ্রসাদ যাদব, রামবিলাস পাসোয়ানের মতো নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন রাহুল, যাঁরা প্রথম ইউপিএ-সরকারের শরিক ছিলেন। ঘুরেফিরে তাই প্রথম ইউপিএ-সরকারের মডেলই উঠে আসছে, যেখানে বামেরা বাইরে থেকে সমর্থন করেছিলেন সরকারকে। আরও একটি বিষয় মনে করিয়ে দিচ্ছেন কংগ্রেস নেতারা। তা হল, বামেদের পক্ষে কোনও ভাবেই বিজেপিকে সমর্থন করা সম্ভব নয়। কংগ্রেস মুখপাত্র পি সি চাকোর কথায়, “সিপিএমকে বুঝতে হবে যে, সর্বভারতীয় রাজনীতিতে তাদের আসল শত্রু বিজেপি। কংগ্রেস নয়।”
সিপিএমের মধ্যে সীতারাম ইয়েচুরির ভূমিকাও এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পলিটব্যুরোর সদস্য হিসেবে তিনিই অতীতে কংগ্রেসের সঙ্গে রাজনৈতিক যোগাযোগ রক্ষার কাজটি করতেন। পরমাণু চুক্তি প্রশ্নে ইউপিএ-সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের বিষয়ে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের নেতাদের মতো তাঁরও আপত্তি ছিল। কেন্দ্রে সমর্থন প্রত্যাহারের ফলেই পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট হয় এবং বিরোধী ভোট বিভাজনের সুযোগ হারিয়ে রাজ্যে বামেরা পর্যুদস্ত হয়, দলের মধ্যে এই মতের শরিক ছিলেন ইয়েচুরিও। এখন সেই ইয়েচুরির সঙ্গেই রাহুলের বৈঠক এবং বিভিন্ন বিষয়ে বামেদের অবস্থান নিয়ে কথা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। কংগ্রেসের এক নেতা আবার বলছেন, “মনে রাখা দরকার, রাহুল কিন্তু তৃণমূলের কোনও নেতার সঙ্গে এখনও বৈঠকে বসেননি।”
কংগ্রেস সূত্র বলছে, দলের মধ্যে একটি ভাবনা জোরালো হয়ে উঠছে যে, তৃণমূলের থেকে শরিক হিসেবে বামেরা অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য। আর যা-ই হোক, তাঁরা মমতার মতো খামখেয়ালি নন। তাঁদের সঙ্গে পরমাণু চুক্তির মতো বিষয়ে মতাদর্শগত বিরোধ হতে পারে, কিন্তু তৃণমূলের মতো তাঁরা একেক বার একেক রকম অবস্থান নেন না। পি সি চাকো-ও বলছেন, “কংগ্রেস-বিরোধী অবস্থান নিলেও বামেরা কিন্তু আমাদের সঙ্গে অনেক প্রশ্নেই সহমত হয়ে চলতে পারেন।” |
|
|
|
|
|