সৌরভ কী,
নিজের ভাইকেও তাই করতাম

প্রথম শর্ত, ভারতীয় দলে থাকাকালীন তাঁর চাকরি নিয়ে কোনও প্রশ্ন করা যাবে না।
দ্বিতীয় শর্ত, সৌরভ নিয়ে কোনও প্রশ্নের উত্তর দেবেন না।
তৃতীয় শর্ত, বিতর্কিত কোনও বিষয় নিয়ে খোঁচাখুঁচি করা যাবে না।


এ বারে আপনি কলকাতায় এলেন, চলে যাচ্ছেন। কোথাও কোনও ঝড়ঝঞ্ঝা নেই। কোনও মোর্চা কেউ বার করল না।

আমিও তো তাই ভাবছি। কুশপুতুল পোড়াত যে লোকেরা, তারা কি সব অন্য চাকরি নিয়েছে? আমি তো অবাক হয়ে যাচ্ছি এক আধটা মিনি কুশপুতুলও কেউ পোড়াল না।

কেমন লাগল এ বারের কলকাতা?
এ বারের গোটা সফরটাই অনেক রিল্যাক্সড ছিল। টিমের দায়িত্ব নিয়ে আসা মানে সব সময় সবার চোখের সামনে থাকা। সেটা একটা জিনিস। আর প্রাইভেট ক্যাপাসিটিতে আসা আর এক রকম। এ বারে বেশ শান্তিতে শহরের নানা জায়গায় গেলাম। চুটিয়ে সুস্বাদু বাঙালি খাবার খেলাম। তার পর উত্তরবঙ্গে চা বাগানে কাটিয়ে এলাম ক’দিন। খুব রিল্যাক্সড কাটালাম। একটা টি ফ্যাক্টরিতে গিয়েছিলাম। সেটা দারুণ অভিজ্ঞতা। মধ্যিখানে টাইগার স্মারক বক্তৃতা ছিল। যার জন্য আসা।

আপনি যাই বলুন, স্মারক বক্তৃতায় লোকে আপনার কাছে পুল বা হুক আশা করেছিল। আপনি কেমন মিড অনে পুশ করার মতো হালকা অন ড্রাইভ খেললেন।
(অস্বস্তির সঙ্গে নড়েচড়ে বসছেন আর তাকাচ্ছেন টেপ রেকর্ডারের দিকে)

ওটা কি বন্ধ করতে হবে?
করলে ভাল।

জানি ওটা বন্ধ করলে আপনি কী বলবেন। বলবেন যে ভারতে এসে বিতর্কিত কিছু বললেই মিস্টার শ্রীনিবাসনের ফোন আসবে জেমস সাদারল্যান্ডের কাছে। তখন উনি জানতে চাইবেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার চাকুরে হয়েও কেন আপনি এ সব বলতে গেলেন যাতে বিসিসিআই-এর সম্মানহানি হয়।
অনর্থক বিতর্ক তৈরি করে কী লাভ!

তার মানে সবার যেটা মনে হচ্ছে, সেটাই ঠিক?
সবার কী মনে হচ্ছে?

মনে হচ্ছে যে, গুরু গ্রেগও আপসি হয়ে গিয়েছেন, আর বয়সের সঙ্গে সঙ্গে রক্তের জোর কমেছে।
আমি বদলে গিয়েছি এটাই যদি কাহিনির উপসংহার হয়, তাহলে কাহিনিটা ভুল। কম্প্রোমাইজ সবাই করে। আমাকেও করতে হয়েছে। তার মানে এই নয় যে কাল কোচের কাজ শুরু করলে আমি কম্প্রোমাইজ করব। এতটুকুও না। কোচ হিসাবে আমার কিছু কিছু জিনিস প্লেয়ারদের কাছে চাই-ই। সেগুলো প্রত্যেকটা তাদের দিতে হবে। সংশয়াতীত ভাবে দিতে হবে। শৃঙ্খলার ব্যাপারে কোনও রকম গাফিলতি বরদাস্ত করা যাবে না।


আপনি একটা ইন্ডিয়ান টিম দেখেই ঘাবড়ে গেলেন। ইমরান খানকে কী ভাবে ম্যানেজ করতেন? যিনি টিমের সঙ্গে অনেক সময় এক হোটেলে থাকেননি। বা ভিভকে। যিনি বরাবরের মূর্তিমান ঔদ্ধত্য...
আমার মনে হয় না ভিভ বা ইমরান কোনও রকম সমস্যা হত বলে। আমার ইস্যুগুলো কে ক’টায় ঘুমোতে যাচ্ছে সেটা নিয়ে নয়। আমার কথা হল তুমি ট্রেনিং-এ টাইমে রিপোর্ট করছ কি না? তোমার চেষ্টায় পুরো সততা আছে কি না? টিম মেট আর সাপোর্ট স্টাফদের প্রতি তোমার শ্রদ্ধা আছে কি না? তোমার ফিটনেস ঠিকঠাক আছে কি না? সবচেয়ে বড় কথা এক্সেলেন্সে পৌঁছনোর প্যাশন অবশিষ্ট আছে কি না তোমার?
এগুলোর একটার উত্তরও যদি সন্তোষজনক না হয়, সে আমার কোচিংয়ে খেলবে না। ব্যস। কোনও আলোচনা নেই। এটা অনমনীয় উপত্যকা! সুপারস্টারদের কথা বলছিলেন তো? আমার জীবনে এমন অনেক টিম দেখেছি, মাঠে এমন অনেক প্লেয়ার দেখেছি, যারা নিজেদের মধ্যে মাঠের বাইরে কথা বলে না। অথচ ধারাবাহিক এক্সেলেন্স ছোঁয়ার জন্য মাঠের মধ্যে কী সমবেত কমিটমেন্ট!

যেমন?
উদাহরণগুলো অপ্রাসঙ্গিক। যে পয়েন্টটা বলতে চাইছি সেটা প্রাসঙ্গিক।

আবার ভারতীয় দলের কোচ হিসাবে ফেরত এলে কী কী ভুল শোধরাবেন?
(আবার টেপ রেকর্ডারের দিকে অস্বস্তির চাউনি)

আরে ক্রিকেটীয় প্রশ্নেও জবাব দিতে এত ভয় পাচ্ছেন কেন?
ভারতের কোচ হয়ে আমার মনে হয়েছিল, আমার দায়বদ্ধতাটা নিছক বিসিসিআই-এর কাছে নয়। আমার দায়বদ্ধতা যে আমায় কোচ হতে সাহায্য করেছে তার কাছেও নয়। আমার দায়বদ্ধতা এই ক্রিকেটপাগল দেশের প্রতিটি ক্রিকেটপ্রেমীর কাছে। এই টিমটা দ্রাবিড়ের নয়। ধোনির নয়। চ্যাপেলের নয়। এই টিমটা একান্ত ভারতীয় জনগণের। আমি ভেবেছিলাম এই প্রেমীদের ধরব মিডিয়ার মাধ্যমে। ভারতীয় মিডিয়ার সঙ্গে তাই শুরুর দিকটা আমি অনবরত যোগাযোগ রেখেছি। চেয়েছি তাদের মাধ্যমে জনগণের কাছে ঠিক ছবিটা পৌঁছোক যে, আমরা ঠিক কী করতে চাইছি। দুর্ভাগ্যবশত এই ইনফরমেশন দিতে চাওয়াটাই আমার বিপক্ষে চলে গেল। সেগুলোকেই ব্যবহার করা হল আমার ক্ষতি করতে। আমার বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসাবে। গোটা ব্যাপারটা ব্যাক ফায়ার করল। আবার কোচ হলে আমি মিডিয়ার সঙ্গে সময় না কাটিয়ে এনার্জিটা প্লেয়িং গ্রুপের পিছনে খরচ করব।

আর কী কী বদলাতেন? শুনেছি ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, সচিন তেন্ডুলকরের সঙ্গে নিজের ব্যবহার আরও নরম করতেন?
(একটু চুপ) সচিন একবার চেন্নাইতে আমার সঙ্গে দীর্ঘ কথা বলেছিল। ও তখন টেনিস এলবো সারিয়ে সবে টিমে ফেরত এসেছে। মেন্টালি বেশ নরম ছিল। নিজের সম্পর্কে বোধহয় সংশয় তৈরি হচ্ছিল। আমি তখন ওকে বলি, তোমাকে নিজেকে আবার সেই ষোলো বছরের উৎসাহী মননে ফেরত যেতে হবে। ওকে বোঝাই, মানুষ যত অভিজ্ঞ হয়, পেশায় তার সঙ্কটও তত বাড়ে। তখন সে জেনে যায়, তার পেশায় কোথা থেকে কী গড়বড় হতে পারে। প্রতিবার কঠিন পরীক্ষায় পড়ে সেই ভীতির রিঅ্যাকশনগুলো তার মনের মধ্যে ফিরে ফিরে আসে। আমি সচিনকে বলেছিলাম, মানুষের মন হল টেপ রেকর্ডারের মতো। চাইলে এবং তীব্র মনোসংযোগ করলে সে অভিজ্ঞতাগুলোকে ইরেজ করে মনকে আবার স্টার্টিং পয়েন্টে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে। যেখানে তার ভয়ডর নেই। যেহেতু কোনও অভিজ্ঞতা স্টোরড নেই। আর উৎসাহ প্রচুর। সে যে নতুন করে শুরু করছে। সচিনকে পরামর্শ দিয়েছিলাম, তোমার তাই করা উচিত। ও হোটেলের ঘরে ফিরে রাতে আবার আমাকে ফোন করে বলেছিল, “গ্রেগ আমার জীবনে কোনও দিন এত ভাল ক্রিকেট সেশন কাটাইনি।” ভারতীয় দলের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার অনেক দিন বাদে অস্ট্রেলিয়ায় বসে ওয়েবসাইটে সচিনের একটা সাক্ষাৎকার পড়েছিলাম। তাতে ও নিজের সাম্প্রতিক সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে এই টেকনিকটার কথা বলেছিল। আমার নাম হয়তো করেনি। আমায় হয়তো কৃতিত্ব দেয়নি। তাতে কোনও আক্ষেপ নেই। টেকনিকটাকে স্বীকার করেছিল তো। সেটাই যথেষ্ট।

শুনেছি সচিনকে আপনি রাগিয়ে দেন খুব রূঢ়ভাবে চার নম্বরে খেলার কথা বলে!
আসলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাঠটা অনেকটা শ্রীলঙ্কার মতো। ২০০৭ বিশ্বকাপের জন্য যখন স্ট্র্যাটেজি করছিলাম আমি আর রাহুল একমত হই যে ইনিংসের ২০ থেকে ৪০ ওভারের মধ্যে ম্যাচের জেতা-হারা নিস্পত্তি হবে। ওখানকার উইকেটে শুরু থেকে ধুমধাম মারের খেলায় কাজ হবে না। বরঞ্চ ওই সময় খেলার জন্য যদি কোনও স্ট্রোকমেকার পাওয়া যায় যে গোটা ইনিংসটা নিয়ন্ত্রণ করে নিয়ে যাবে, তাহলে সে একাই ম্যাচ জিতিয়ে দিতে পারে। আমরা প্রথমে বীরুর কথা ভাবি। যে কাজটা করতে চূড়ান্ত অনীহা দেখায়। বুঝিয়ে দেয় ওপেন ছেড়ে চার নম্বরে ও কিছুতেই খেলতে চায় না। তখন আমি সচিনকে অনুরোধ করি। ঘরে ডেকে বলি, টিমের স্বার্থে এই কাজটা তোমায় করতে হবে। ওরও মুখচোখ গম্ভীর হয়ে গিয়েছিল। সচিন ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর রাহুল আমায় বিস্ফারিত হয়ে বলেছিল, গ্রেগ! ভারতবর্ষে কেউ সচিন তেন্ডুলকরের সঙ্গে এই ভঙ্গিতে কথা বলে না। আমি উত্তর দিই, খারাপ তো কিছু বলিনি, বলেছি টিমের স্বার্থে কাজটা করে দিতে।

সচিন ভারতবর্ষের কাছে সেই ষোলো বছর বয়স থেকেই কী, সেটা আপনি আজ বুঝেছেন?
আমি তখনও জানতাম সচিন কী। টিম বাসে দেখতাম সামনের সিটে বসা মাত্র ও ওয়াকম্যানটা কানে দিয়ে দিচ্ছে। বাসের দু’ধারে যত দূর চোখ যায় জনতা। তারা শুধু সচিনের এক পলক তাকানোর অপেক্ষায় আছে। মনে হয়, সচিনের একটা দৃষ্টিতে তাদের গোটা দিনটা ভাল হয়ে যাবে। প্রথম প্রথম অদ্ভুত লাগত, এই লোকটা কিনা ডাইনে নয়, বাঁয়ে নয়, সোজা তাকিয়ে গান শুনছে। একবার তো অন্তত ঘোর। আজ বুঝি রূপকথা তুল্য জনপ্রিয়তার মধ্যে নিজের জীবনটা এভাবেই ও কাটছাট করে নিয়েছে। ওকে ঘিরে আশেপাশে সর্বক্ষণ কী ঘটছে, তার দিকে খেয়াল রাখতে গেলে ব্যাট করা দূরে থাক ও বোধহয় পাগল হয়ে যেত। ব্র্যাডম্যানের গড় অনেক ভাল। কিন্তু ওর দেশের লোক হয়েও আমি স্বীকার করতে বাধ্য, গোটা জাতির এই পরিমাণ চাপ ডনকে বইতে হয়নি।

আবার সুযোগ পেলে সচিন সম্পর্কে কি অনেক বেশি ধৈর্যশীল হতেন?
হয়তো হতাম। ভারতীয় দলের কোচ হিসাবে পাওয়া অগাধ অভিজ্ঞতা আমায় জীবন সম্বন্ধে অনেক বেশি শিক্ষিত করেছে। আমার স্ত্রীর সঙ্গে মাঝেমাঝেই আলোচনা হয়। হ্যাঁ, শেষটা যে ভাবে হওয়ার ছিল সে ভাবে হয়নি ঠিক। কিন্তু অভিজ্ঞতা তো হয়েছে। একটা আপ্রাণ চেষ্টা তো করেছিলাম! দিনের শেষে কোচিংও তো ক্রিকেট জীবনের মতোই, কিছু ম্যাচ আপনি জিতবেন, কিছু হারবেন।

আপনার ভাবমূর্তিটাই আসলে এমন একজন খিটকেল লোকের যে সহজে হাসে না। পান থেকে চুন খসলে বিরুদ্ধাচরণ করে। আর রেগে গেলে নৃশংস হয়ে যেতে পারে।
তা নয় কিন্তু। আমার ক্রিকেট খেলার ভাবমূর্তিটাই সোজা চলে এসেছে কোচিং জীবনে। যেটা খানিকটা নকল। আসলে আমাদের যে ভাবে খেলা শেখানো হয়েছিল, কাঠিন্যের জন্য সেটাই দায়ী। বাড়ির পিছনের উঠোনে বাবা যে ভাবে তৈরি করেছিলেন, সেটা এক রকম যুদ্ধের প্রস্তুতি। আমার দাদা ইয়ান, সেও প্রচণ্ড যোদ্ধা। ওই উঠোনের পরিবেশটা ছিল টেস্ট ক্রিকেট খেলার মতো। একবার একটা আউটের অ্যাপিল নিয়ে আমার সঙ্গে দাদার তর্ক হয়। দাদা তখন উত্তেজিত হয়ে আমার হাত পিছনে চেপে ধরে টানতে থাকে। ক্রমাগত এত জোরে টানছিল যে হাতটা শরীর থেকে আলাদা হয়ে যেতে পারত। আমার তখন বয়স মাত্র দশ।
দাদা বলছিল, স্বীকার করতেই হবে তোকে যে আউট হয়েছিস। আমি বলেছিলাম, হইনি। দাদা সেদিনই জেনে যায় বাড়িতে আরও একটা যোদ্ধা আছে। মাঠে খেলতামও সে ভাবে যে মনের মধ্যে যা ইচ্ছে হোক। বিপক্ষ যেন টের না পায়, আমি ভিতরে কী ভাবছি। লোকে সেই ইমেজারিটাই আসল ধরে নিয়েছে।

সহবাগ আপনার বাবার কাছে খেলা শিখলে কী হত?
হা হা হা, বীরু ওই উঠোনে গিয়ে পড়লে নির্ঘাত বদলে যেত। নাহ্, বাবাও ওর পাল্লায় পড়লে বদলে যেতে পারত। না, দু’জনেই মনে হয় কিছু কিছু বদলাত।

টিম ইন্ডিয়ার কোচ থাকার সময় আপনি যে কার্যত একনায়কতন্ত্র চালিয়েছেন, সেটা তো সত্যি? সেটা তো আর ইমেজারি নয়?
সেটাও সত্যি নয়। চূড়ান্ত ক্ষমতা আমার কাছে ছিলই না। নির্বাচক কমিটিতে আমার ভোটই ছিল না। একবার তো একটা ক্ল্যাসিকাল ঘটনা হল, ২০০৬-এর কলম্বো ফাইনালের পর। সৌরভ সাসপেন্ড থেকে পরে আসায় রাহুল ওটাতে ক্যাপ্টেন ছিল। ফাইনালের পর দিন রণবীর সিংহ মহেন্দ্র আমায় বললেন, কী বুঝছেন? আমি বললাম জিম্বাবোয়ে সফরে আমার মতে রাহুলকে ক্যাপ্টেন করা উচিত। তার আগে অবশ্য আমি মুম্বইয়ের সিলেকশন মিটিংয়ে যাওয়ার আমন্ত্রণ পেয়ে গিয়েছি। রণবীরের সঙ্গে দেখা হওয়ার দু’তিন দিন বাদে নতুন মেল পেলাম যে, আপনার নির্বাচনী বৈঠকে আসার দরকার নেই। এরকম ঘটনা কেউ কোথাও শুনেছে? আর একটা কথা বলার, আমি প্রত্যেকটা বৈঠকে নিজের মত জানিয়েছি ঠিকই। তবে কোনও কিছুই রাহুলের অনুমোদন ছাড়া ঘটেনি। আমি বলতে বাধ্য যে, রাহুল যথেষ্ট সাহস দেখিয়েছিল। কিন্তু সব সময় আমাদের পছন্দ অনুযায়ী কাজ হয়েছে কোথায়?
স্বৈরাচারী?
কাজ হয়নি কোথায়?
পাকিস্তানে যে টিমটা গিয়েছিল ২০০৬-তে, তাতে এমন একজন ব্যাটসম্যান ছিল যাকে আমরা চাইনি। নেওয়ার পর ম্যানেজার রাজ সিংহ এমনও বলেছিলেন, প্লেয়ারটাকে চূড়ান্ত এগারোয় খেলাতেই হবে। তেমনই নাকি নির্দেশ আছে। এর নাম করতে চাই না। ওই সফরেই তিনজন বাঁ-হাতি পেসার গিয়েছিল। শুধু প্রত্যেকের বলের লাইনই এক রকম নয়। বল ছাড়ার সময় এদের রিলিজিং পয়েন্ট অবধি এক। এটা কোনও কম্বিনেশন হতে পারে? এর পর বিশ্বকাপে যে টিমটা বাছা হল, তাতে পইপই করে আমরা চেয়েছিলাম এক ঝাঁক ভাল ফিল্ডার। বলেছিলাম তিন জনের বেশি স্লো মুভার যেন কিছুতেই না দেওয়া হয়। টেস্ট ক্রিকেট হলে স্লো
মুভমেন্টটা সমস্যা নয়। সেখানে আসল জিনিস হল ক্যাচিং। আপনি হয়তো সারাদিনে পাঁচটা বল গলিয়েছেন, কিন্তু সব ক’টা ক্যাচও ধরেছেন। ইজি পার পেয়ে যাবেন। ওয়ান ডে ম্যাচে ক্যাচিং নয়, গ্রাউন্ড ফিল্ডিংটাই হল আসল। সেখানে বল গলালে চলবে না। কাকে বোঝাব?

সৌরভের সঙ্গে আপনার সম্পর্কে কিন্তু চিরস্থায়ী ভাটা পড়ে গেল। অথচ আপনার কোচিং পেয়ে তিনি যখন ব্রিসবেন টেস্টে ব্যাট করতে নামছেন, তখন নাকি আপনি ভয়ঙ্কর টেনশনে ছিলেন। ডোনাকে পরে বলেওছিলেন আপনার স্ত্রী, গ্রেগকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন আমাদের ছেলেই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ব্যাট করতে নামছে।
সৌরভের সঙ্গে যা হয়েছে, সেটা একেবারেই কোনও ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটানোর ব্যাপার ছিল না। আমাদের দু’জনের দর্শনের তফাত ছিল। ও ভেবেছিল কোচের চাকরিটা করে দিয়েছে ভেবে ওর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ থাকব। আমার মনে হয়েছিল, কোচের চাকরিটা হয়েছে বলে ভারতীয় জনগণের প্রতি আমার কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। মনে হয়েছিল, কোচ হিসাবে আমার এমনই সৎ ভাবে চলা উচিত যাতে কোনও পক্ষপাতিত্ব না আসে।

সেটা সৌরভকে কি বোঝাতে পারেননি?
যথেষ্ট বুঝিয়েছিলাম যে, ক্যাপ্টেনসি তোমার ক্রিকেটকে গিলে ফেলছে। ব্যাটিং-এর জন্য তোমার কোনও এনার্জি অবশিষ্ট থাকছে না। এটা ছেড়ে দাও, তোমার ক্রিকেট জীবন তিন বছর বাড়বে। ও তখন শুনতে চায়নি। বাদ পড়ার পর যখন ফিরে এল, একেবারে অন্য মেজাজে এল। জাহিরও তাই। সেম কেস।

সেঞ্চুরিয়নে সৌরভের কামব্যাক ইনিংসটা মনে আছে?
সেঞ্চুরিয়ন নয়, ওয়ান্ডারার্সে। ওর স্কিল নিয়ে কোনও দিনই প্রশ্ন ছিল না। সাহসটা ওর বরাবর সলিড। ফিটনেস আরও ভাল করে ফেরত এসেছিল। ক্রিকেটজীবন যে আরও ভাল ভাবে তিন বছর টেনে দিল, তাতে আর আশ্চর্য কী। আমি তো এটাই প্রথম দিন বোঝাতে চেয়েছিলাম। যেটা সৌরভ বুঝতে না চাওয়ায় এত কাণ্ড ঘটে গেল।

সচিনের বেলায় যেমন আপনি স্বীকারই করলেন, প্রকাশভঙ্গিতে ভুল হয়েছিল। সৌরভের কেসটায় তেমন কোনও আফসোস হয় সাত বছর পর?
একটুও আফসোস হয় না। ব্যক্তিগত ভাবে আজও ওর বিরুদ্ধে আমার কিছু নেই। কিন্তু যে সব ইস্যুতে ও ধার্য মাপকাঠির নীচে পড়ছিল, তার সঙ্গে আপস করা সম্ভব নয়।
অস্ট্রেলিয়ার কিছু কোচ গিয়েছিল রাগবি ইউনিয়ন লিগে এক বিখ্যাত কোচের কাছে ট্রেনিং নিতে। ওরা ফিরে এসে বলেছিল অভিনব কিছু শেখেনি। বরঞ্চ কোচ একটা বাঁধা গতের বাইরে যেতেন না। বলতেন এটাতে কাজ হবে না। বেসিকসে থাকো। আমার শুনে অসাধারণ লেগেছিল। তার মানে লোকটা বোঝাতে চেয়েছে, যত বড় সাফল্যই পাও না কেন, মূল ব্যাপারটা থেকে সরে যেও না। আমিও তাই বলি মূল ব্যাপারটার সঙ্গে আপস কোরো না। ঘটনাচক্রে ওটা ছিল সৌরভ। যে
কেউ হতে পারত। অন্য কেউ হলেও আমার মনোভাব একই রকম হত। ট্রেভর চ্যাপেল হলেও বলতাম, যাও বেরোও। নিজেকে ঠিক করো। তার পর ফেরত এসো।

কোচ গ্রেগ চ্যাপেলের কি শোকগাথা লেখার সময় হয়ে গিয়েছে? নাকি আইপিএল-এর একটা দুর্দান্ত অফার তাঁকে ক্রিকেট মাঠে ফেরাতে পারে?
নির্ভর করছে অফারটা কতটা চ্যালেঞ্জিং হয়, তার উপর। আমার জীবনটাই গিয়েছে চ্যালেঞ্জের ঢেউ মোকাবিলা করতে গিয়ে। যত বড় ঢেউ, তত বড় চ্যালেঞ্জ। আবার যদি বড় ঢেউ সামনে পাই, কে বলতে পারে!

ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.