জেলের সামনেই পেট্রোল পাম্প। সেই পাম্পের যাবতীয় কাজকর্ম সামলাচ্ছেন সাজাপ্রাপ্ত বন্দিরা।
এমন দৃশ্য খুব শীঘ্রই দেখা যাবে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের লাগোয়া চত্বরে। ইন্ডিয়ান অয়েলের সহায়তায় ওখানে পেট্রোল পাম্প তৈরির প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্যের কারা দফতর। ওই সংস্থার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে পেট্রোল পাম্পের যাবতীয় কাজকর্ম করবেন বন্দিরাই। উপার্জন ছাড়াও একটি বিশেষ বিষয়ে বন্দিদের দক্ষতা বাড়ানো এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য। যাতে মুক্তির পরে তাঁরা তা কাজে লাগাতে পারেন।
কারা দফতর সূত্রের খবর, অন্ধ্রপ্রদেশের একটি জেলে বন্দিদের নিয়ে ইন্ডিয়ান অয়েলের এমন একটি পেট্রোল পাম্প ইতিমধ্যেই খোলা হয়েছে। অন্ধ্র মডেলেই আলিপুর জেলের সামনে একেবারে রাস্তার উপরে পাম্প চালু করতে আলোচনা চলছে ইন্ডিয়ান অয়েলের সঙ্গে। ওই তেল সংস্থার এক কর্তা জানান, অন্ধ্রপ্রদেশে ভাইজাগ বা বিশাখাপত্তনম ডিভিশনের অধীনে বন্দিদের নিয়ে একটি পাম্প খোলা হয়েছে। সেটি খুব ভাল চলছে। তাই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছ থেকে এই ধরনের প্রস্তাব পেয়ে তাঁরা উৎসাহিত। আলিপুরের ওই এলাকায় কোনও পেট্রোল পাম্প নেই। তাই ওখানে পাম্প করলে তা ভাল চলবে বলেই মনে করছে তেল সংস্থাটি।
আইজি (কারা) রণবীর কুমার বলেন, “প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, লিজ চুক্তিতে তেল সংস্থাকে জমি দেবে জেল। তার বদলে ওরা পেট্রোল পাম্প তৈরি ও তা চালানোর যাবতীয় দায়িত্ব নেবে।” আইজি (কারা) জানান, পাম্প থেকে যা উপার্জন হবে, কারা দফতর ও তেল সংস্থা তা ভাগ করে নেবে। তবে ভাগাভাগির অনুপাত কত হবে, সেটা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
অপরাধীদের সংশোধনের প্রক্রিয়া হিসেবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কাজকর্ম এবং হস্তশিল্পের সঙ্গে যুক্ত করার প্রক্রিয়া নতুন নয়। ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন জেলের বন্দিদের নাটক, তাঁদের আঁকা ছবির প্রদর্শনী যথেষ্ট প্রশংসা পেয়েছে। জেলের বাইরে, মুক্ত পরিবেশে বন্দিদের অভিনয় করার, ছবি আঁকার অনুমতিও দিচ্ছে কারা দফতর। বন্দিদের নিয়ে তৈরি হয়েছে ফুটবল, কবাডির দলও। দু’বছর ধরে কবাডির দলটি রাজ্য স্তরে প্রতিযোগিতায় যোগ দিচ্ছে। এ বার সেই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বন্দিদের নিয়ে জেলের চৌহদ্দির বাইরে পেট্রোল পাম্প খোলার প্রয়াস।
কিন্তু এ ক্ষেত্রে দু’টি প্রশ্ন বড় হয়ে উঠছে।
• পাম্পে কাজের সুযোগ নিয়ে কোনও বন্দি যদি উধাও হয়ে যায়?
• জেলের বাইরে বন্দিদের দিয়ে দাহ্য পদার্থ ব্যবহারের এই পরিকল্পনা নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠবে না তো? রাজ্যের এক পুলিশকর্তার মতে, “পেট্রোল পাম্পে কাজ করতে দেওয়া মানে বন্দিদের হাতে সহজে দাহ্য পদার্থ চলে আসা। এটা অবশ্যই চিন্তার বিষয়। কেউ চাইলে সহজেই পেট্রোল পাম্পে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। সে-ক্ষেত্রে জেলের সামগ্রিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।”
কারা দফতরের এক কর্তার দাবি, নিরাপত্তার দিকটি খতিয়ে দেখার পরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তা ছাড়া পাম্প হবে জেলের ‘কোর এরিয়া’ বা মূল এলাকা থেকে অনেক দূরে। তিনি জানান, নাশকতার আশঙ্কা মাথায় রেখে জেল এবং এলাকার বাড়িঘরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই পাম্পের জায়গা ঠিক করা হবে। ওই কর্তা বলেন, “বন্দিদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে সব সময়েই নিরাপত্তার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। লালগোলায় মুক্ত সংশোধনাগার তৈরির সময়েও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু ওই মুক্ত সংশোধনাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া বা সেখানে কোনও দুষ্কর্ম ঘটানোর নজির নেই।” |