শাহবাগের জয় দেখতে চান প্রণব
মুকুল-চন্দনকে আকুল আর্জি হাসিনার
ভারতের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতির বাংলাদেশ সফরে তিস্তার জল কি একটুও গড়াল? ছিটমহলের ৫৫ হাজার বাসিন্দা ন্যূনতম নাগরিক অধিকারটুকু পাওয়ার ব্যাপারে এ বার কি আশার আলো দেখতে পারেন?
মৌলবাদী জামাতের সঙ্গে জোট বেঁধে বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে চূড়ান্ত শক্তিপ্রদর্শনে নেমেছে বিএনপি। শাহবাগের গণবিক্ষোভ গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ে শেখ হাসিনার সরকারের পালে যে হাওয়া জুগিয়েছে (হাসিনার দলের প্রতীকও পাল তোলা নৌকা), তাকে ধরে রাখতে তিস্তার জলের ভাগ নিয়ে ভারতের সঙ্গে বোঝাপড়া করে ফেলাটা বিশেষ প্রয়োজন। স্থলসীমান্ত নিয়ে সমস্যাটা মিটিয়ে ফেললেও ভোটারদের কাছে যাওয়াটা সুবিধাজনক হবে। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করা প্রণব মুখোপাধ্যায় বিলক্ষণ বোঝেন শেখ হাসিনার এই রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা। কিন্তু তিনি রাষ্ট্রপতি। আর সক্রিয় রাজনীতিতে নেই। তবু ঢাকায় সঙ্গে এনেছেন তৃণমূল সাংসদ মুকুল রায় আর বিজেপির চন্দন মিত্রকে। আর এক সঙ্গী সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি জানাচ্ছেন, প্রথমে প্রতিনিধি দলে মুকুল-চন্দনের নাম ছিল না। ছিলেন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী, অসমের কংগ্রেস সাংসদ ভুবনেশ্বর কলিতা আর ইয়েচুরি নিজে। একেবারে শেষ মুহূর্তে ওঁদের নেওয়া হয়েছে।
ভারতের পাঠানো ব্রডগেজ ইঞ্জিনের যাত্রার সূচনা প্রণব ও হাসিনার হাতে। ঢাকায়, মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র
কিন্তু এই অন্তর্ভুক্তির তাৎপর্য যে কম নয়, সেটা হাসিনাও বুঝেছেন। মুকুলের দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রাচীর হয়ে দাঁড়ানোয় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরেও তিস্তা চুক্তি হয়নি। যা হাসিনা সরকারের ব্যর্থতা বলেই প্রচার করে বিরোধীরা। আর বিজেপি-র বিরোধিতাতেই স্থল-সীমান্ত চুক্তির বিল পাশ হচ্ছে না সংসদে।
গত কাল রাষ্ট্রপতির স্ত্রী শুভ্রাদেবীকে নিজের বাড়ি গণভবনে দুপুরে খাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন হাসিনা। সঙ্গে ডেকেছিলেন রেল প্রতিমন্ত্রী ও সাংসদদের। তার পরে এক ফাঁকে মুকুল ও চন্দনকে ডেকে নেন একেবারে নিজের ঘরে। প্রায় দেড় ঘণ্টা খোলামেলা আলোচনায় শুনতে চান দুই চুক্তি নিয়ে আপত্তির কারণগুলো। নিজের বাধ্যবাধকতার কথাও সবিস্তার জানান। এই দুই চুক্তি হয়ে গেলে এ দেশের মানুষের কাছে ভারতের ভাবমূর্তি যে অনেক উজ্জ্বল হবে, দুই সাংসদকে বলেন সে কথাও। হাসিনার অনুরোধ রেখে নিজের নিজের দলের নেতৃত্বের কাছে সেই বার্তা জানাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মুকুল, চন্দন। হাসিনা আশাবাদী। আর এই সুযোগ করে দেওয়ার জন্য প্রণববাবুকেই সব চেয়ে বেশি ধন্যবাদ দিচ্ছেন তিনি।
ফেরার পথে ‘এয়ার ইন্ডিয়া ওয়ানে’ এই প্রথম সাংবাদিক বৈঠক করলেনরাষ্ট্রপতি প্রণববাবু। গোড়ায় পড়লেন লিখিত বিবৃতি। তার পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বললেন। বললেন শুধু দুই দেশ নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার উন্নতির জন্যই এটা দরকার। ভারত গণতান্ত্রিক, স্বাধীন, ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ দেখতে চায়। বাংলাদেশের তরুণরা যে ভাবে এই সব বিষয়ে সচেতনতার পরিচয় দিচ্ছেন, তারও ভূয়সী প্রশংসা করেন প্রণববাবু। তবে বিদেশসচিব রঞ্জন মাথাই যে বলেছিলেন, এই সফরে রাজনীতির গন্ধ নেই। এই সফর একান্তই সৌহার্দ্যের? প্রণববাবুর বিবৃতি তো পুরোমাত্রায় রাজনৈতিক।
তাঁর প্রেসসচিব বেণু রাজামণি মুচকি হাসলেন। যেন বলতে চাইলেন, আরে বাবা সারা জীবন যে মানুষটা রাজনীতি করলেন, তাঁর কথায় রাজনীতি না-থেকে যায় কী ভাবে? মুখে অবশ্য প্রণববাবু বলছেন, “ওদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বিষয়ে আমি কেন কথা বলব?” শাহবাগের গণআন্দোলনে তো দলীয় রাজনীতি নেই। তা নিয়ে আপনি কী ভাবছেন? রাষ্ট্রপতির জবাব, “আমার বিবৃতিতে কিছু কথা আছে, তা থেকেই ধারণা করে নিতে পারবেন।” তার পরে একটু থমকে বললেন, “আমি ওদের সাফল্য দেখতে চাই!” তাঁর দফতরের এক অফিসার জানালেন, ঢাকায় এসে শাহবাগ নিয়ে জানতে ছটফট করেছেন বর্ষীয়ান রাষ্ট্রপতি। নিজে যেতে পারেননি বলে আফশোস করেছেন। কিন্তু লোক পাঠিয়েছেন, ওখানে কী হচ্ছে তা জেনে আসতে। যাঁঁরা গিয়েছিলেন, তাঁদের কাছে জেনেছেন খুঁটিনাটি প্রতিটি বিষয়। তার পর বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এই তরুণরাই আশা জাগাচ্ছেন, এক দিন সোনার বাংলা গড়ে উঠবেই!’



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.