বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তের জন্মভিটে সংরক্ষণে উদ্যোগী হল রাজ্য সরকার। মঙ্গলবার জেলাশাসক ওঙ্কারসিংহ মিনার নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট দফতরের বাস্তুকার ও অন্যান্য আধিকারিকেরা খণ্ডঘোষের উঁয়ারি গ্রামে তাঁর জন্মভিটে পরিদর্শনে যান। জেলাশাসক জানান, খুব দ্রুত কাজ শুরু হয়ে যাবে।
১৯১০ সালে উঁয়ারি গ্রামে বটুকেশ্বরের জন্ম। পড়াশোনার জন্য তিনি বাবা গোষ্ঠবিহারী দত্তের কাছে কানপুরে চলে যান। ১৯২৫ সালে কানপুর থেকেই তিনি ম্যাট্রিক পাশ করেন। এরপরেই তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেন। ভগৎ সিংহ ও চন্দ্রশেখর আজাদের বিপ্লবী সংগঠন ‘হিন্দুস্থান সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান আর্মি’তে যোগ দেন তিনি। দিল্লির কেন্দ্রীয় বিধান পরিষদে (সেন্ট্রাল অ্যাসেম্বলি) বোমা ছোড়ায় ভগৎ সিংহের সঙ্গী ছিলেন তিনি। ১৯২৯ সালের ৮ এপ্রিল পুলিশের হাতে ধরা পড়েন তাঁরা। তার আগে বৃটিশ পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করেছিলেন। তিন দিনের জন্য দু’জনে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন উঁয়ারি গ্রামে বটুকেশ্বরের বাড়ি সংলগ্ন একটি গোপন ডেরায়। বিচারে ভগৎ সিংহের ফাঁসি হয়। বটুকেশ্বরকে পাঠানো হয় আন্দামানে সেলুলার জেলে। ছাড়া পাওয়ার পরে তিনি ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যোগ দেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি পটনার একটি স্কুলে শিক্ষকতা করতে শুরু করেন। এক বার বিহার বিধান পরিষদের সদস্যও নির্বাচিত হন। ১৯৬৫ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। |
গ্রামের বাসিন্দাদের দীর্ঘ দিনের অভিযোগ, ওই বাড়ি সংরক্ষণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। স্থানীয় বিপ্লবী বটুকেশ্বর সেবা সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক মধুসূদনচন্দ্র থেকে শুরু করে পটনার একটি কলেজের শিক্ষক বটুকেশ্বরের মেয়ে ভারতী বাগচি, সবারই আক্ষেপ ছিল একটাই, বিপ্লবীর বাস্তুভিটেটি সরকার সংরক্ষণ করুক। ভারতীদেবীর কথায়, “দিল্লি বা পটনায় বাবার নামে রাস্তা রয়েছে, গ্রন্থাগার রয়েছে। অথচ নিজের জন্মস্থানই বাবাকে কোনও সম্মান দিল না।” এত দিনে তাঁর সেই আক্ষেপ মিটল। বিপ্লবীর জন্মভিটে সংরক্ষণে উদ্যোগী হল রাজ্য সরকার।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে,এর আগেও একবার সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাড়ির শরিকি বিবাদে তা এগোয়নি। তবে এখন আর তেমন সমস্যা নেই। জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা জানান, জন্মেভিটের সংস্কারের পাশাপাশি একটি দ্বিতল সংরক্ষণশালা গড়ে তোলা হবে। পুরো এলাকা ঘেরা হবে পাঁচিল দিয়ে। বসানো হবে বিপ্লবীর একটি মূর্তিও। তিনি বলেন, “বাজেট ধরা হয়েছে প্রায় ৮৫ লক্ষ টাকা। তার মধ্যে পর্যটন দফতর ইতিমধ্যেই ৫০ শতাংশ বরাদ্দ করে দিয়েছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হয়ে যাবে।” ‘বিপ্লবী বটুকেশ্বর সেবা সঙ্ঘের’ সাধারণ সম্পাদক মধুসূদনবাবু বলেন, “এক সময় হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। এখন ভালো লাগছে।” |