অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল প্রাথমিকের সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের শিক্ষামূলক ভ্রমণের জন্য। কিন্তু ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের বদলে উপবাজার চত্বরে মাইক বাজিয়ে পিকনিক করার অভিযোগ উঠেছে। বরাদ্দ টাকায় পড়ুয়াদের সঙ্গে ভুরিভোজে সামিল হন শিক্ষক-শিক্ষিকা সহ শিক্ষাকর্মী ও কর্তারা। ঐতিহাসিক ভ্রমণ বলে ফেস্টুন ঝুলিয়ে সোমবার মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের তুলসিহাটা উপবাজার চত্বরে ঘটনাটি ঘটে। সেখানে অংশ নেন তুলসিহাটা চক্রের ৬৫টি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। ওই ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে চক্রের স্কুল পরিদর্শকের বিরুদ্ধে। শিক্ষামূলক ভ্রমণের বদলে উপবাজারে যেভাবে সারাদিন মাইক বাজিয়ে বনভোজন করা হয়েছে তাতে ক্ষুব্ধ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ। টেলিফোনে অভিযোগ পেয়ে সর্বশিক্ষা মিশনের পাশাপাশি জেলা প্রসাসনও ঘটনার তদন্তে নেমেছে।
সর্বশিক্ষা মিশনের জেলা প্রকল্প আধিকারিক চিন্ময় সরকার বলেন, “জেলা প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। জেলা প্রশাসনের তরফে চক্রের স্কুল পরিদর্শকের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” জেলার সমস্ত চক্রের পাশাপাশি তুলসিহাটা চক্রেরও স্কুলগুলির তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পড়ুয়াদের শিক্ষামূলক ভ্রমণের জন্য ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ করে সর্বশিক্ষা মিশন। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, দিনকয়েক আগে পরিদর্শকের দফতর থেকে প্রত্যেকটি স্কুলে চিঠি পাঠানো হয়। বলা হয়, আগামী ৪ মার্চ তুলসিহাটা উপবাজার চত্বরে সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের ঐতিহাসিক জায়গা ভ্রমণের দিন স্থির করা হয়েছে। চিঠির নীচে লেখা ছিল, প্রকাশ থাকে যে দুপুরে আহারের ব্যবস্থা থাকবে। সেই হিসেবে এদিন উপবাজারে পড়ুয়াদের নিয়ে হাজির হন স্কুলগুলির শিক্ষক-শিক্ষিকারা। শুধু সংখ্যালঘুরা নয়। তফশিলি জাতি ও উপজাতি মিলিয়ে স্কুল পিছু ১০ জন করে পড়ুয়াকে নিয়ে হাজির হন শিক্ষকরা।
তুলসিহাটা চক্র সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই টাকা কীভাবে খরচ করা হবে তা নিয়ে শিক্ষক সংগঠনগুলিকে নিয়ে আলোচনার পরে স্কুল পরিদর্শক সিদ্ধান্ত নেন। সেখানে নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা সমিতি, তৃণমূল শিক্ষা সেল সহ বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতৃত্ব হাজির ছিলেন। উপবাজারে খাওয়া-দাওয়ার বিষয়টি নিয়ে তাদের কেউ আপত্তি তোলেননি বলে অভিযোগ। বাইরে খুদে পড়ুয়াদের নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ঝুঁকি রয়েছে বলে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এবিপিটিএ-র চক্র সম্পাদক মন্টু দাস, তৃণমূল শিক্ষা সেলের চক্র সভাপতি মহম্মদ জসিমুদ্দিন বলেন, “পড়ুয়াদের সুবিধার কথা ভেবে মিলিতভাবে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।” তৃণমূল শিক্ষা সেলের সভাপতি বিষয়টিকে পড়ুয়াদের স্বার্থের কথা ভেবে করা হয়েছে বলে দাবি করলেও তুলসিহাটা অঞ্চল তৃণমূলের তরফে বিষয়টি নিয়ে হইচই করা হয়। দলের তুলসিহাটা অঞ্চল সভাপতি মনোজ রাম বলেন, “উপবাজার চত্বর কি ঐতিহাসিক জায়গা! যেভাবে সরকারি অর্থ নয়ছয় করা হল সেটা মেনে নেওয়া যায় না।” তুলসিহাটা চক্রের ভারপ্রাপ্ত স্কুল পরিদর্শক শুভঙ্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “সবাই ছোট। তাদের গাড়ি করে বাইরে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ঝুঁকির কথা বিবেচনা করেই ওই সিদ্ধান্ত।” |