একে খানাখন্দে ভরা রাস্তা। তার উপরে প্রায়দিন সন্ধ্যার পরে রাস্তায় উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের (এনবিএসটিসি) বাস না থাকায় ভোগান্তি চরমে উঠেছে কোচবিহার-তুফানগঞ্জ রুটের নিত্যযাত্রীদের। শুধু তাই নয়। মাঝেমধ্যে বেসরকারি বাসও অমিল হওয়ায় অফিস টাইমে বিপাকে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। অনেকে ছোট গাড়ি ভাড়া করে কর্মস্থলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। সমস্যা ক্রমশ বেড়ে চললেও প্রশাসনের হেলদোল নেই বলে অভিযোগ। নিত্যযাত্রীদের সংগঠন কোচবিহার-তুফানগঞ্জ ডেইলি প্যাসেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মানস চক্রবর্তী বলেন, “দীর্ঘদিন থেকে রাস্তা চলাচল অযোগ্য। দুর্ঘটনা লেগেই আছে। রুটে পর্যাপ্ত বাস চলে না। উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের যে সমস্ত বাস চলছে সেগুলির অবস্থাও ভাল নয়। নিগম কর্তাদের সমস্যার কথা জানানো হয়েছে। মার্চ মাসের মধ্যে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আন্দোলনের কথা ভাবতে হবে।”
নিত্যযাত্রীরা জানান, ছয় মাস আগেও কোচবিহার থেকে তুফানগঞ্জ রুটে অন্তত ১০টি সরকারি বাস চলত। এছাড়াও অফিস যাত্রীদের জন্য সকাল ১০টায় কোচবিহার থেকে তুফানগঞ্জে চলত সরকারি সুপার বাস। সকাল ৯টায় তুফানগঞ্জ থেকে কোচবিহারে পৌঁছতে আরও একটি সুপার বাস ছিল। ওই বাস শিকেয় উঠেছে। সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে নিগমের বাসের সংখ্যা ৩টি থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১টিতে। তার উপরে রাস্তার বেহাল দশার জন্য সময় মত গন্তব্যে পৌঁছতে পারছে না যাত্রীরা। সন্ধ্যের পরে বেসরকারি বাস মিলবে ঠিক নেই। |
কারণ মাঝেমধ্যে বেশিরভাগ বাস রাস্তায় থাকে না। ফলে বাড়ি ফেরা নিয়েও ভোগান্তি বেড়েছে। নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, সড়ক মেরামতের জন্য জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে কয়েকবার বলা হয়েছে। কিন্তু লাভ হয়নি। এনবিএসটিসির পরিচালন বোর্ডের কর্তারা সমস্যার কথা অস্বীকার করেননি। তাঁরা জানান, বেহাল রাস্তার জন্য ভাল বাস কয়েকদিনে বিকল হচ্ছে। তবু পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। সংস্থার চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “যাত্রীদের চাহিদা ও নিগমের বাসের সংখ্যার মধ্যে অনেক তফাৎ রয়েছে। তবে ওই দাবি নিয়ে বোর্ডের বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
নিত্যযাত্রীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, তুফানগঞ্জ থেকে প্রতিদিন ১২ হারের মানুষ কোচবিহারের যাতায়ত করে। তার মধ্যে সকাল ৯টা থেকে ১০টায় অফিস টাইমে দুই শহরের বিভিন্ন স্ট্যান্ডে ভিড় উপচে পড়ে। রুটের যাত্রী শৈলেন বর্মা বলেন, “সুপার বাস পরিষেবা বন্ধ থাকায় অফিস টাইমে সরকারি বাস মেলে না। রাস্তায় যানজট লেগেই থাকে। নাজেহাল দশা হয়েছে। বাড়িতে ফেরার সময় বেসরকারি বাস রাস্তায় না থাকায় দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়।” যদিও সন্ধ্যার পরে বাস না চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করেন কোচবিহার জেলা মিনিবাস মালিক সমিতির সহকারী সম্পাদক সন্তোষ সাহা। তিনি বলেন, “বিয়ে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের মত পরীক্ষার সময় ছাড়া নিয়ম মেনে বাস চলে। রাস্তার অবস্থা এতটাই খারাপ যে প্রতিদিন ১৫টি থেকে ২০টি বাস বিকল হচ্ছে। তাই সমস্যা হচ্ছে।” রাত ৮টা ২০ মিনিটে শেষ বাস তুফানগঞ্জ থেকে কোচবিহারে রওনা হয়। কোচবিহার থেকে সওয়া ৯টার পরে তুফানগঞ্জে যাওয়ার বাস নেই। নিত্যযাত্রীদের দাবি সরকারি বাসের সংখ্যা বাড়ানো হোক। দিনে আধ ঘন্টা অন্তর বাস চালানো হোক। অফিস শুরু ও শেষের সময় দুটি করে নন স্টপ বাস চালাতে উদ্যোগী হোক এনবিএসটিসি। সংস্থার চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “চাহিদা ও নিগমের বাসের সংখ্যার মধ্যে ফারাক রয়েছে। তবে ওই সমস্ত দাবি নিয়ে পরিচালন বোর্ডের বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” |