এ দিন ঘুম থেকে ভোরেই উঠে পড়েছিলেন ছ’মাসের গর্ভবতী গাজলি বিবি। ঘুম থেকে উঠেই অন্য দিনের মতো ঘরের সামনের উঠানে ঝাঁট দিচ্ছিলেন। হঠাৎ নাতনি ঘুম থেকে উঠে জল খাওয়ার বায়না ধরে কাঁদতে শুরু করেছিল। ঝাঁট দেওয়া মাঝপথে বন্ধ করে দিয়ে নাতনির জন্য জল আনতে কলপাড়ে যেতেই শোনেন গুলির শব্দ। ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি বাড়ির দিকে ছুটে আসছে। গুলির হাত থেকে বাঁচতে কলপাড় থেকে পালাতে পারেননি গাজলি বিবি। একটা গুলি ছুটে এসে ডান দিকে বুকে লেগে পিঠ ফুঁড়ে বেড়িয়ে গেল। মুখ থুবড়ে কলপাড়েই পড়ে গেলেন গাজলি বিবি। মাকে কল পাড়ে পড়ে ছটফট করতে দেখে বড় মেয়ে রুলেখা ছুটে আসেন।
গুলিবিদ্ধ মাকে টানতে টানতে ঘরে নিয়ে আসেন রুলেকা। ঘরে আনার কিছু ক্ষণ পরই গাজলি বিবির দেহ নিথর হয়ে যায়। |
এ দিন বাড়িতে ঢুকেই দেখা গেল কল পাড়ে ও ঘরের মধ্যে রক্তের চাপচাপ দাগ। মায়ের দেহের রক্ত দেখিয়ে হাউ হাউ করে কেঁদে রুলেখা বিবি বলেন, “মাকে কত বলেছি রাস্তা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছো কেন? তুমি কেন প্রতিবাদ করতে যাচ্ছ। তোমার দলের লোকেরা আছে। মা কথা শোনেনি। প্রতিবাদ না করলে আজকে মা মারা যেত না।” স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেসের অঞ্চল সভাপতি মনজুর আলি এলাকার একটি বাড়ি দেখিয়ে বলেন, “ওই বাড়ি থেকেই এনাতুল্লার দলবল এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়েছে। গাজলি বিবির রান্নাঘরের বেড়ার ফুটো করে গুলি তাঁর বুকে লেগেছিল।”
নিহতের পাশের বাড়ি আবদুর রউফ। এনাতুল্লার দলবল তাঁর বাড়িতে ঢুকে লুঠপাট পালিয়েছে। গুলিতে তাঁর বাড়ির টালির ছাদ ভেঙে তছনছ হয়ে গিয়েছে। সাজিদুদ্দিনের বাড়িতেও হামলা চালিয়েছে এনাতুল্লার দলবল। তাঁর বাড়ির দেওয়ালের গুলির দাগ রয়েছে। প্রায় আধঘণ্টা ধরে এনাতুল্লার দল হামলা চালানোর পর গুলি চালাতে চালাতে গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার পরেও ভয়ে বাসিন্দারা বাইরে বেরোতে সাহস পাননি। ঘণ্টাখানেক পর গুলির শব্দ না পেয়ে ধীরে ধীরে গ্রামের বাসিন্দারা ঘর থেকে বার হতে শুরু করেন। পুলিশ গ্রামে ঢুকতেই বাসিন্দারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন।
গ্রামবাসীই বাইকে পুলিশকে বসিয়ে নিয়ে গ্রামের পর গ্রাম তল্লাশি চালিয়ে মূল অভিযুক্ত এনাতুল্লা ও তার সাত শাকরেদকে ধরে ফেলেন। |