রাস্তা তৈরির কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন গ্রামবাসীরা। ঠিকাদার ও তাঁর সঙ্গীদের সঙ্গে এই নিয়ে সংঘাতের জেরে শেষ পর্যন্ত খুন হয়ে গেলেন এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলা। তাঁকে গুলি করার অভিযোগে গ্রেফতার হলেন শেখ এনাতুল্লা নামে এক কংগ্রেস কর্মী। মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দোপাধ্যায় বলেন, “রাস্তার কাজ নিয়ে দু’পক্ষের বিরোধের জেরে এক নিরীহ মহিলাকে গুলি করে খুন করা হয়েছে। মোট ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” ওই মহিলার নাম গাজলি বিবি (৩৫)। সোমবার সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ মালদহের রতুয়া থানার বিলাইমারির খাকছাবোনা গ্রামে নিজের বাড়ির সামনে তিনি তখন কল থেকে জল তুলতে যাচ্ছিলেন। অভিযোগ, দিন কয়েক আগের একটি গণ্ডগোলে আহত এনাতুল্লা এই দিন তাঁর বাড়ির সামনে গিয়েই মাস্কেট থেকে এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়ছিলেন। তখনই চার সন্তানের মা গাজলি বিবির বুকে গুলি লাগে। তারপরেই সিপিএম ও তৃণমূল উভয়েই গাজলি বিবিকে দলীয় সমর্থক বলে দাবি করে। |
অভিযুক্তেরা স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায়ের ছেলে সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলে সিপিএম এবং তৃণমূলের অভিযোগ। সব্যসাচী মালদহ জেলা কংগ্রেসের অন্যতম সম্পাদক। গাজলি বিবির স্বামী আইনাল হক সব্যসাচীবাবু সহ ২১ জনের বিরুদ্ধে রতুয়া থানায় অভিযোগ করেছেন। বিব্রত সমরবাবুর দাবি, “আমাদের বদনাম করতে সিপিএম, তৃণমূল অপপ্রচার চালাচ্ছে।” সব্যসাচীর অভিযোগ, “শেখ এনাতুল্লা কংগ্রেস কর্মী। দিন কয়েক আগে তাঁকে মারধর করেছিল তৃণমূল ও সিপিএম কর্মীরা। পুলিশ যদি সেই ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার করত, তবে আজকে আর গণ্ডগোল হত না।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনা প্রকল্পে মহানন্দাটোলা থেকে বিলাইমারি পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার রাস্তার অনুমোদন হয় ২০০৬ সালে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে টেন্ডার না হওয়ায় সেই রাস্তার কাজ শুরু করা যায়নি। ২০১২ সালে মহানন্দাটোলা পঞ্চায়েত এলাকায় কাজ শুরু হয়। বিলাইমারি পঞ্চায়েত এলাকায় ২৪ ফেব্রুয়ারি সেই কাজ শুরুর কথা ছিল। তবে সে দিন সেখানে সিপিএম, তৃণমূল, আরএসপি-র কর্মী, সমর্থকেরা কাজে বাধা দেন বলে অভিযোগ। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দাও। তাঁদের দাবি, কাজের যে সব উপকরণ লাগবে তার বিবরণ ও তার ব্যবহারবিধি নিয়ে সরকারি নির্দেশিকা প্রকাশ্যে জানাতে হবে। তাঁদের মধ্যে গাজলি বিবিও ছিলেন। ওই সময়ে হাতাহাতিও হয়। তখনই জখম হন শেখ এনাতুল্লা। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। ঠিকাদার সংস্থার অভিযোগ, এলাকার বাসিন্দাদের সামনে রেখে
আসলে তাঁদের উপরে চাপ বাড়িয়ে বালি-পাথর ও শ্রমিক সরবরাহের বরাত আদায়ের চেষ্টাই করেছিলেন স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি, যাঁদের আড়াল থেকে মদত দিচ্ছে কয়েকটি রাজনৈতিক দলও।
এই অবস্থায় রবিবার রাতে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান এনাতুল্লা। রাতে এলাকায় ফিরে তিনি শূন্যে কয়েক রাউন্ড গুলি চালিয়েছেন বলে অভিযোগ। তারপরে এদিন সকালে ১৫-২০ সঙ্গীকে নিয়ে কয়েকজন তৃণমূল সমর্থকের বাড়ি লক্ষ্য করে এনাতুল্লা এলোপাথাড়ি গুলি চালাচ্ছিলেন। সেখানেই বাড়ি গাজলি বিবির। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, কমপক্ষে ৫০ রাউন্ড গুলি চালিয়েছে হামলাকারীরা। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে হামলা চললেও নদী পেরিয়ে পুলিশ পৌঁছতে তিন ঘন্টা লেগে যায়। শেষ পর্যন্ত পাশের গ্রাম থেকে পুলিশ এনাতুল্লাকে গ্রেফতার করে। ধৃতদের গ্রেফতারের পরে পুলিশের গাড়ি ঘিরে অভিযুক্তদের কড়া শান্তির দাবিতে বিক্ষোভ জানান গ্রামবাসীরা।
দুষ্কৃতীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব বলেন, ‘‘সারা রাজ্যেই আইন-শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। সিপিএম কর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন। বারবার বলা সত্ত্বেও রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব কোনও ব্যবস্থাই নিচ্ছেন না।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের নারী ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী সবিত্রী মিত্রেরও দাবি, “আমাদের মহিলা কর্মীকে কংগ্রেস বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায়ের ছেলের মদতপুষ্ট দুষ্কৃতীরা খুন করছে।” মালদহ জেলা কংগ্রেস সভাপতি আবু হাসেম খান চৌধুরীর মত, যে অন্যায় করবে, সে যে দলেরই হোক না কেন, তার শাস্তি হওয়া উচিত। |