শিলিগুড়ি পুরসভার বিরোধী দলনেতার ওয়ার্ড ৪৭ নম্বরের অবৈধ নির্মাণের অভিযোগে দু’টি বাড়ি শনিবার অভিযান চালিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। অথচ শেঠ শ্রীলাল মার্কেট, সেবক রোড, বর্ধমান রোড, চানাপট্টি এলাকায় বিভিন্ন অবৈধ নির্মাণের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন প্রশ্ন উঠলেও সে সব ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিতে পুর কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী নয় বলে অভিযোগ। তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে এ দিন তৃণমূলের ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির তরফে অভিযোগ জানানো হয় মেয়র গঙ্গোত্রী দত্তকে। ওয়ার্ডে কাউন্সিলর মুন্সি নুরুল ইসলাম নদীর চরে গরিব বাসিন্দাদের বাড়ি ভাঙতে তৎপর অথচ শহরের বাণিজ্যিক ভবনগুলির অবৈধ নির্মাণ নিয়ে যথাযথ ভাবে সরব হন না অভিযোগ তুলে সরব হন তাঁরা।
নুরুলবাবু বলেন, “এত দিন নদীর চর দখল করা নিয়ে নানা অভিযোগ উঠছিল। কিন্তু ঝাণ্ডা নিয়ে কারা দখল করে তা এ বার স্পষ্ট হল।” নুরুলবাবুর দাবি, ওয়ার্ডের আদিবাসী মহিলা সমবায় সমিতির সদস্যরা তাঁকে এ ব্যাপারে অভিযোগ জানিয়েছিলেন চামটা নদীর চর দখল করে ঘর তৈরি হচ্ছে বলে। তিনি তা পুর কর্তৃপক্ষকে জানান। এর পরেই পুরসভার তরফে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এক সময় এসএফআইয়ের যুগ্ম সম্পাদক তথা সিপিএমের জোনাল কমিটির সদস্য বাপি দাশগুপ্ত এখন তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের নেতা। এ দিন পুরসভায় অভিযোগ জানাতে যান তিনিও। তাঁর কথায়, “শহর জুড়ে অবৈধ নির্মাণ চলছে। মোটা টাকার বিনিময়ে সে সব ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। গরিব বাসিন্দাদের টাকা দেওয়ার ক্ষমতা নেই বলে তাদের ঘর ভাঙা হচ্ছে।” বাপিবাবুর দাবি, ওই জমি নদীর চরে নয়। তার নথি রয়েছে।
মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত জানান, নদীর চরে, বাঁধে বাড়ি তৈরি বেআইনি। এ ধরনের অভিযোগ পেলে তারা অবৈধ নির্মাণ ভেঙে দিচ্ছেন। তিনি বলেন, “এর আগে ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডে বাধের উপর বাড়ি তৈরির চেষ্টা করা হলেতা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডে যাদের বাড়ি ভাঙা হয়েছে তারা নদীর জায়গায় দখল করেই তা করছিলেন। তবে তাঁরা জমির উপযুক্ত নথি দেখাতে পারলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” শেঠ শ্রীলাল মার্কেটে একটি কলেজ ভবনে বিনা নকশায় বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স, বর্ধমান রোডে, সেবক রোডে একটি হোটেলের বিরুদ্ধে অবৈধ নির্মামের অভিযোগে একাধিক কাউন্সিলর সরব হলেও পুর কর্তৃপক্ষ নীরব। এদিনও মেয়র ওই সব বেআইনি নির্মাণ কবে ভাঙা হবে সে ব্যাপারে স্পষ্ট আশ্বাস দেননি।
বিল্ডিং বিভাগের মেয়র পারিষদ সঞ্জয় পাঠক জানান, নদীর চরে বাড়ি ভাঙার বিষয়টি তিনি জানেন না। তবে অবৈধ নির্মাণ নিয়ে যে অভিযোগ পৌঁছেছে সেগুলির বিরুদ্ধে তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন।” এ ধরনের আশ্বাস আড়াই মাস আগে ওই বিভাগের দায়িত্ব নেওয়ার সময় থেকেই তিনি একাধিকবার জানিয়েছেন। অথচ শহরের কোনও অবৈধ নির্মাণের বিরুদ্ধে তিনি ব্যবস্থা নেননি কেন তা নিয়ে সন্দেহ দানা বেঁধেছে। বিশেষ করে কংগ্রেস এবং তৃণমূলের নেতাদের একাংশ অবৈধ নির্মাণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ তুলে আসছেন। পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের একাংশের সঙ্গে বেআইনি লেনদেনের অভিযোগ নিয়ে একাধিকবার প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খোদ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তাতেও পরিস্থিতি পাল্টায়নি। সঞ্জয়বাবুর অবশ্য দাবি, এ ধরনের অভিযোগ ঠিক নয়। |