একদিকে কেএলওদের নতুন করে সক্রিয়তা অন্য দিকে সীমান্তে উত্তেজনা। দুইয়ের মোকাবিলায় দার্জিলিং ওসিকিমের কলেজের এনসিসির সঙ্গে যুক্ত ছাত্রছাত্রীদের নাশকতা দমনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। শেখানো হচ্ছে গ্রামে কোনও সন্দেহভাজন ব্যক্তির উপস্থিতি কীভাবে টের পাওয়া যাবে। তার গতিবিধির ওপর নজরদারির কৌশলও।
জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, দার্জিলিং এবং প্রতিবেশী সিকিম রাজ্যের কলেজ ছাত্রছাত্রীদের এনসিসি প্রশিক্ষণে এ বছরই যুক্ত হয়েছে নাশকতা দমনের প্রাথমিক পাঠ। জেলা পুলিশের অভিজ্ঞতায়, প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে সর্বক্ষণের পুলিশি নজরদারি সম্ভব হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জঙ্গি গোষ্ঠী বা লিঙ্কম্যানদের উপস্থিতির খবরও সঠিক সময়ে পুলিশের কাছে পৌঁছায় না। অতীতেও কেএলও তৎপরতার সময়ে কাজ করা পুলিশ অফিসারদের অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে, গ্রামে কোনও একজন জঙ্গি লিঙ্কম্যান উপস্থিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অভিযান চালালে পুরো দলটি সর্তক হয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে। নজরদারি করতে পুলিশ কর্মীদের পাঠানো হলেও তাঁদের চিনে ফেলার ঘটনাও ঘটেছে। সে কারণেই নজরদারির কাজে কলেজ পড়ুয়াদের অচেনা মুখ ব্যবহার করা এবং গ্রামের সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগের সুবাদে কলেজ পড়ুয়ারা সহজেই সন্দেহভাজনদের সম্পর্কে
তথ্য যোগাড় করতে পারবে বলে মনে করছে জেলা পুলিশও। |
জলপাইগুড়ির রানিনগরে চলছে শিবির। ছবি তুলেছেন সন্দীপ পাল। |
এনসিসি আধিকারিক রফিকুল ইসলাম বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে, নাশকতা দমনের বিষয়টিকে সামাজিক দায়বদ্ধতা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। সেনা বাহিনীর অনুমতি নিয়ে জেলা পুলিশের সহায়তাও নেওয়া হয়েছে।” ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া রানিনগরের এনসিসির ৬১ নম্বর ব্যাটিলিয়ানের এই শিবির চলবে ৭ মার্চ পর্যন্ত। সিকিম গর্ভমেন্ট কলেজ, কোচবিহার এবিএনশিল কলেজ, দার্জিলিং সরকারি কলেজ সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন কলেজের ৪০০ ছাত্রছাত্রী অংশ নিয়েছেন। শিবিরে শেষে মোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১৩০০। সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ন্যাশেনাল ডিফেন্স আকাডেমি তথা এনডিএ থেকে আসা প্রশিক্ষকরা ছাত্র ছাত্রীদের স্বয়ংক্রিয় রাইফেল, লাইট মেশিনগান তথা এলএমজির মতো আধুনিক অস্ত্র চালানোর হাতেকলমে প্রশিক্ষণ, কম্পাস ব্যবহার করে এলাকা চিনে নেওয়ার কৌশল শেখাচ্ছেন।
গ্রামে কোনও নতুন ব্যক্তি এলে, কোন কোন বিষয় খতিয়ে দেখতে হবে তা শেখানো হয়েছে। সন্দেহভাজন ব্যক্তির নজর এড়িয়ে কীভাবে তার গতিবিধির ওপর নজরদারি চালানোর কৌশল শেখানো, গ্রামে ঘনঘন অপরিচিতদের উপস্থিতি দেখলে সেই তথ্যও সংগ্রহ করে পুলিশকে জানানো, একই সঙ্গে রেলস্টেশন, বাস স্ট্যান্ড, লোকালয় বা কোনও সেতু লাগোয়া এলাকায় মালিকানাবিহীন কোনও ব্যাগ বা বস্তু পড়ে থাকতে দেখলে প্রথমেই আশেপাশের বাসিন্দাদের দূরে সরিয়ে রাখা সহ প্রাথমিক সর্তকতামুলক ব্যবস্থার তালিম দেওয়া হচ্ছে।
শিবিরে আসা ছাত্রছাত্রীদের বেশিরভাগই আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার অসম-বাংলা অথবা বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকার। এলাকাগুলিতে নতুন করে কেএলওদের মাথাচাড়া দেওয়ার খবরে উদ্বিগ্ন জেলা পুলিশ থেকে কেন্দ্রীয় সরকার। উত্তরবঙ্গ জুড়ে একের পর এক কেএলও সদস্য অস্ত্রসহ ধরা পড়ার ঘটনায় পুলিশের আশঙ্কা, নাশকতার কোনও ঘটনা ঘটতে পারে। এনসিসি কর্তৃপক্ষ জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশকে এবিষয়ে প্রস্তাব দিতে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকদেরও শিবিরে পাঠানো হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “এনসিসি কর্তৃপক্ষ খুবই ভাল এবং সময়পযোগী উদ্যোগ নিয়েছেন। প্রশিক্ষণ দিতে জেলার দক্ষ অফিসারদের পাঠানো হয়েছে।” |