তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়ার পরে কংগ্রেসের দীপা দাশমুন্সির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ সোমবার নয়াদিল্লিতে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী দীপার সঙ্গে বৈঠক করলেন। পরে দীপার সঙ্গে গিয়ে রেলমন্ত্রী পবন বনসলের সঙ্গে বৈঠক করেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্দের সঙ্গেও দেখা করতে চাইছেন গুরুঙ্গরা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, এ বিষয়ে দীপার সঙ্গে শিন্দের কথা হয়েছে। ৭ মার্চ শিন্দে মোর্চা নেতাদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছেও সময় চাইছেন তাঁরা।
সম্পর্কের সুসময়ে গুরুঙ্গ তৃণমূল নেত্রীকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করেছিলেন। কিন্তু এখন পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। এই দিন সেই গুরুঙ্গ রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে ‘পিতৃতুল্য’ মানুষ বলে অভিহিত করে তাঁর উপরে ‘আশা-ভরসা’ রাখার কথা ঘোষণা করেছেন। এই গোটা ঘটনা পরম্পরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি মোর্চার অনাস্থারই প্রকাশ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলগুলি। জাতীয় ও রাজ্য রাজনীতিতে দীপা ও মমতা বিপরীত মেরুর বলেই পরিচিত। |
বাগডোগরা বিমানবন্দরে রোশন গিরি। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক। |
তাই দীপার সঙ্গে দিল্লিতে গিয়ে দেখা করলে মমতার সঙ্গে মোর্চার দূরত্ব আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন তাঁরা। এর পিছনে অবশ্য নতুন কোনও রাজনীতি রয়েছে বলে মানতে রাজি নন গুরুঙ্গ। তাঁর বক্তব্য, পাহাড়ে রেল প্রকল্প সংক্রান্ত দাবিদাওয়া পেশ করতেই তাঁরা রেলমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। বনসলের কাছে মোর্চা নেতাদের দাবি, মিরিক হয়ে শিলিগুড়ি-দার্জিলিং নতুন রেললাইনের কাজ শুরু হোক। নিউ জলপাইগুড়ি-দার্জিলিং রেললাইনে ধসের কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সে বিষয়ে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। দার্জিলিং-বিজনবাড়িতে মালপত্রের পাশাপাশি যাত্রীদের জন্যও রোপওয়ে পরিষেবা চালু করা হোক। এ ছাড়া ট্রেনের ধাক্কার বন্যপ্রাণী, বিশেষ করে হাতির মৃত্যু রুখতেও ব্যবস্থা নিক রেল মন্ত্রক।
কিন্তু এখানেই থামেননি মোর্চা নেতারা। পৃথক রাজ্য গোর্খাল্যান্ডের পক্ষে যুক্তি সম্বলিত পুস্তিকাও তাঁরা বনসলের হাতে তুলে দেন।
এই দিন দিল্লি রওনা হওয়ার মুখেও গুরুঙ্গ রাজ্য সরকারকে কটাক্ষ করে বলেছেন, “যে নিজেই রাস্তায় বসে আছে তার কাছে আর কী চাওয়ার রয়েছে?
যার দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে, আমরা তার কাছেই চাইব। সে জন্য কেন্দ্রের দ্বারস্থ হয়েছি।” রাজ্য পাহাড়ে বিভাজন করতে উদ্যোগী হয়েছে বলেও ফের অভিযোগ তুলেছেন গুরুঙ্গ। তাঁর কথায়, “রাষ্ট্রপতি আমাদের কাছে বাবার মতো। রাজ্য সরকার জিটিএ চুক্তি ভঙ্গ করে লেপচা উন্নয়ন পর্ষদ গড়ে কী ভাবে বিভাজনের রাজনীতি করতে চাইছে, সেই অভিযোগ রাষ্ট্রপতিকে জানাব। পাহাড়ের জন্য বাড়তি বরাদ্দের বিষয়েও আর্জি জানাব। ওঁর পরামর্শ পেলে সেই মতো চলার চেষ্টাও করব।”মোর্চাকে পাশে পেতে চাইছে কংগ্রেসও। পাহাড়ের সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য কিছু দিন আগে কলকাতায় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। জিটিএ বিল এখনও সংসদে পাশ হয়নি। কাজেই মমতাকে পাহাড়-সমস্যার সমাধানের পাকাপাকি চেষ্টা করতে হলে কেন্দ্রীয় সরকারকে পাশে রেখেই তা করতে হবে। কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে রাজনৈতিক বোঝাপড়া না থাকলেও এ বিষয়ে কেন্দ্রকে পাশে পেতে চাইছেন মমতা। তাই রাজনীতির কারবারিরা মনে করছেন, মোর্চা নেতাদের পাশে নিয়ে কংগ্রেস নেতৃত্বও মমতাকে ‘বার্তা’ দিতে চাইছেন যে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে কেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল। |