বিধানসভা উপনির্বাচনে লক্ষ্যপূরণের পালা সমাপ্ত। রাজ্যের তিন শিবিরের তিন সদ্যজয়ী বিধায়কের এ বার লক্ষ্য আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচন।
বিধায়ক হিসাবে শপথ নেওয়ার পরেই তিন জেলায় পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতিতে নেমে পড়তে চাইছেন তৃণমূল, কংগ্রেস এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের তিন বিধায়ক। ইংরেজবাজারের কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীর লক্ষ্য, মালদহে কংগ্রেসকে আরও কোণঠাসা করে পঞ্চায়েতে তৃণমূলের জমি তৈরি করা। রেজিনগরের রবিউল আলম চৌধুরীর লক্ষ্য, মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসের দুর্গে ধাক্কা আটকানো। আর নলহাটির দীপক চট্টোপাধ্যায়ের লক্ষ্য, বাম ভোটব্যাঙ্কে ধস রুখে বীরভূমে বামফ্রন্টকে পঞ্চায়েতে লড়াইয়ের জায়গায় নিয়ে যাওয়া। তিন দলের নেতৃত্বও চাইবেন তিন বিধায়ককেই পঞ্চায়েত ভোটে যথাসম্ভব কাজে লাগাতে। তৃণমূলের কৃষ্ণেন্দু, কংগ্রেসের রবিউল এবং ফ ব-র দীপক সোমবার শপথ নিয়েছেন বিধানসভার নৌসর আলি কক্ষে। এর মধ্যে কৃষ্ণেন্দু একই মেয়াদের বিধানসভায় এক বার কংগ্রেস এবং দ্বিতীয় বার তৃণমূল বিধায়ক হিসাবে শপথ নিলেন! স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই অনুষ্ঠানে ছিলেন প্রবীণ বিধায়ক, কংগ্রেসের জ্ঞানসিংহ সোহনপাল (চাচা)। পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মুখ্য সরকারি সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়েরাও উপস্থিত ছিলেন। |
সদ্যজয়ী। শপথ নেওয়ার পরে (বাঁ দিকে থেকে) দীপক চট্টোপাধ্যায়,
কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী ও রবিউল আলম চৌধুরী (পিছনের সারিতে)। —নিজস্ব চিত্র |
তবে কলকাতার বাইরে থাকায় অনুষ্ঠানে ছিলেন না বিরোধী দলনেতা সূর্যকাম্ত মিশ্র। সিপিএমের বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী আনিসুর রহমান, বামফ্রন্টের সচেতক বিশ্বনাথ কারকেরা অবশ্য ছিলেন। ছোট্ট শপথ অনুষ্ঠানের পরেই পর্যটনমন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু ছোটেন মহাকরণে। বাকি দুই বিধায়ক নিজেদের পরিষদীয় কক্ষে সতীর্থদের সঙ্গে কিছু সময় কাটিয়েছেন।
ইংরেজবাজারে কৃষ্ণেন্দুর জয়কে যতটা না তৃণমূলের, তার চেয়ে বেশি তাঁর ব্যক্তিগত ক্যারিশমার জয় বলে বর্ণনা করা হচ্ছে। যে ভাবেই দেখা হোক না কেন, আপাতত তৃণমূলের লক্ষ্য মালদহে দলের ভিত্তি বাড়িয়ে নেওয়া। কৃষ্ণেন্দু মন্ত্রী থাকায় সেই কাজে সুবিধা হবে বলে তৃণমূল শিবিরের আশা। শপথের পরে কৃষ্ণেন্দুবাবুও এ দিন বলেছেন, “এই উপনির্বাচনের ফলের প্রভাব নিশ্চিত ভাবেই পঞ্চায়েতে পড়বে। মানুষ ওদের (কংগ্রেস) কাজকর্ম, অজ্ঞতা পছন্দ করছেন না। পঞ্চায়েতেও সেটা তাঁরা বুঝিয়ে দেবেন।” লোকসভা ভোটের আগে কৃষ্ণেন্দুকে কাণ্ডারী করেই গনি খানের জেলায় আরও শিকড় বিস্তারের চেষ্টা করবে তৃণমূল।
রবিউলদের কাজ ঠিক এর উল্টো! রেজিনগরে অধীর চৌধুরীর দাপটে কংগ্রেস বিধানসভা আসন জিতলেও তৃণমূল প্রার্থী হিসাবে হুমায়ুন কবীর সেখানে প্রায় ২৩% ভোট পেয়েছেন। তৃণমূল যাতে মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসের জমিতে আরও ভাগ বসাতে না-পারে, সেই লক্ষ্যেই পঞ্চায়েতে লড়াই চালাতে হবে অধীর-বাহিনীকে। রবিউল এ দিন বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী বাদে প্রায় গোটা মন্ত্রিসভাই রেজিনগরে ছুটে গিয়েছিল! কিন্তু মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা অধীর চৌধুরীর সঙ্গে আছেন।” রেজিনগরে হাসপাতাল, রাস্তার মতো পরিষেবার কাজ তাঁর অগ্রাধিকার হবে বলে কংগ্রেস বিধায়ক জানিয়েছেন।
বাম শরিক ফ ব নলহাটি আসনটি পুনরুদ্ধার করতে পারলেও সেখানেও বামেদের ভোট কমেছে। দীপকবাবু (যিনি ২০০৬ থেকে ’১১ নলহাটির বিধায়ক ছিলেন) অবশ্য এ দিন দাবি করেছেন, “আমাদের ভোট কমেনি। কমিয়ে দেওয়া হয়েছে! পঞ্চায়েত ভোটে সেটা প্রমাণ হয়ে যাবে বলে আশা করছি।” স্পষ্ট করে না-বললেও ফ ব-র বীরভূম জেলা সম্পাদক দীপকবাবুর ইঙ্গিত ‘টাকার খেলা’র দিকেই। এখনও পর্যন্ত জেলার যা পরিস্থিতি, তাতে বোলপুর মহকুমা ছাড়া অন্যত্র বামেরা সব আসনে প্রার্থী দিয়ে লড়াই করার জায়গায় থাকবে বলে দীপকবাবুর আশা।নতুন বিধায়কদের বিধানসভায় প্রবেশের মধ্যেই জটিলতা দেখা দিচ্ছে রেজিনগরের পরাজিত বিধায়ক হুমায়ুনকে নিয়ে। উপনির্বাচনে হেরে গেলেও হুমায়ুনকে আপাতত প্রতিমন্ত্রীর কাজ চালিয়ে যেতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মন্ত্রী হুমায়ুন বিধানসভাতেও আসতে পারেন। কিন্তু নৈতিকতার প্রশ্ন তুলে সরব হতে চাইছে কংগ্রেস ও বাম শিবির। কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়া যেমন বলেছেন, “সংবিধান অনুযায়ী কোনও অনির্বাচিত ব্যক্তি ছ’মাস মন্ত্রী থাকতে পারেন। কিন্তু মানুষের রায়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েও থেকে যাওয়া নজিরবিহীন ঘটনা! মানুষ বলে দিয়েছে থাকা উচিত নয়। এ বার তাঁর (হুমায়ুন) দলনেত্রী বিচার করবেন!” বিধানসভা বিশেষজ্ঞ দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়েরও বক্তব্য, “এই রকম পরিস্থিতি কখনও হয়নি। নির্বাচিত ২৯৪ জন বিধায়ক এবং এক জন মনোনীত সদস্য ধরে অধিবেশন কক্ষে ২৯৫ জনের জন্য ব্যবস্থা আছে। ২৯৬ জন সেখানে আসবেন কী ভাবে?” প্রসঙ্গত, নবনিযুক্ত পরিষদীয় সচিবদের জায়গা দেওয়ার জন্য বিধানসভায় ট্রেজারি বেঞ্চের পরিসর বাড়াতে হচ্ছে! শিখা মিত্র-সহ শাসক দলের যে বিধায়কেরা মন্ত্রীদের পিছনে বসতেন, তাঁদের আসন পরিবর্তন হচ্ছে বলে পরিষদীয় সূত্রের খবর। |