হায়দরাবাদ টেস্টে তৃতীয় দিনের শেষেই সিরিজ ২-০ করে ফেলার পথে ভারত। পূজারা আর মুরলী বিজয় আগের রাতে যেখানে শেষ করেছিল, এ দিন শুরু করল সেখান থেকেই। পরপর দু’টো টেস্ট সিরিজে দু’টো ডাবল সেঞ্চুরি করল পূজারা। সত্যি, আত্মবিশ্বাস যে এক জনকে কোন জায়গায় তুলে নিয়ে যেতে পারে, পূজারা তার সেরা উদাহরণ। ছেলেটা ধারাবাহিক ভাবে উন্নতি করছে। আন্তর্জাতিক স্তরে যেটা খুব জরুরি।
আমদাবাদে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ডাবল সেঞ্চুরি করার পর থেকে পূজারার খেলার ধরন অনেকটা বদলে গিয়েছে। বিজয়ের মতো স্বাভাবিক স্ট্রোকমেকারের থেকেও দ্রুত রান তুলল দেখে আমি মোটেই অবাক নই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বড় ব্যাটসম্যান হিসাবে সম্মান আদায় করার জন্য সেট হওয়ার পরে খেলাটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে শিখতে হয়। এই টেস্টে পূজারা সেটা করে দেখিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ওকে দেখে মনে হয়েছিল, বিদেশের পিচে ও ঠিক চলবে না। কিন্তু এখন ওর খেলা দেখে মনে হচ্ছে বিদেশের পিচ এবং পরিবেশে মানিয়ে নিয়ে রান করার ক্ষমতা ওর রয়েছে।
ভারতীয় পিচে তিন নম্বরে ব্যাট করার মতো সুখ নেই। মন্থর পিচে তখনও বলটা শক্ত থাকে আর ব্যাটে আসে। তুলনায় পরের দিকে ব্যাট করা অনেক কঠিন। বল যত পুরনো হয় তত নরম হয়ে যায়। বিদেশি পিচে তিন নম্বরে ব্যাট করা অন্য চ্যালেঞ্জ। শুধু টেকনিক আঁটসাঁট হলে চলে না, খারাপ বলকে শায়েস্তা করার দক্ষতাটা লাগে। এই বিভাগে পূজারা প্রচুর উন্নতি করেছে। ভবিষ্যতে ব্যাট হাতে ওর ভাল ফর্ম বিদেশ সফরে ভারতীয় দলকে ভাল করতে সাহায্য করবে।
মুরলী বিজয়ের ক্ষেত্রে আবার এই ইনিংসটা আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার ইনিংস ছিল। ২০১০-এ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করার পর থেকে ধারাবাহিক খারাপ ফর্ম ওকে টেস্ট দল থেকে ছিটকে দিয়েছিল। কিন্তু আবার সুযোগ পেয়ে ও যে ভাবে খেলল, তাতে ওর প্রতি অধিনায়ক আর নির্বাচকদের আস্থা ফিরবে। মুরলী বড় ম্যাচের প্লেয়ার। রঞ্জি আর আইপিএল ফাইনালে বড় রান করে, ইরানি ট্রফিতে ভাল খেলে। ভারতীয় দলে এ রকম মানসিকতার প্লেয়ার দরকার।
অস্ট্রেলিয়ার তরুণ ব্যাটসম্যানরা ভারতের ঘূর্ণি পিচের সঙ্গে মানিয়ে নিতে গিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়ছে। সে জন্যই শেন ওয়াটসনকে দায়িত্ব নিতে এগিয়ে আসতে হবে। ও শুধু দলে সিনিয়রই নয়, ভারতীয় পিচে খেলার অভিজ্ঞতা ওর রয়েছে। এই মুহূর্তে মিডল অর্ডারে অধিনায়ক ক্লার্কের ওর সাহায্য দরকার। খেলায় কোনও কিছুই অসম্ভব নয়। কিন্তু এই টেস্ট বাঁচাতে হলে অস্ট্রেলিয়াকে ঝুলি থেকে বিশেষ কোনও চমক টেনে বের করে আনতে হবে। কারণ আমার ধারণা, ভারত যদি ক্লার্ককে ফিরিয়ে দিতে পারে, তা হলে চার দিনের মাথাতেই এই টেস্টে যবনিকা পড়ে যাবে। ভারতীয় স্পিনাররা যে চতুর্থ দিনের পিচে বল ঘোরানোর জন্য মুখিয়ে রয়েছে! |