পূজারার তবু মন খারাপ
রাজকোটের রিং রোডের বিখ্যাত বাড়িটার সামনে সকাল সাড়ে ন’টা থেকে গিজগিজে ভিড়। আবির, মিষ্টির হাঁড়ির আগাম অর্ডার দেওয়া ততক্ষণে হয়ে গিয়েছে। বিছানা থেকে উঠতে পারছেন না অরবিন্দ পূজারা। কয়েক দিন ধরে বেশ জ্বর। কিন্তু তাতে কী? ‘মেহমান-নওয়াজি’-তে কোনও ফাঁক রাখা চলবে না। ছেলের ডাবল সেঞ্চুরি-র উৎসব বলে কথা।
উপ্পলের ভিভিআইপি বক্সে বসে তখন এক মনে প্রার্থনা করে চলেছেন এক তরুণী। সদ্য বিয়ে হয়েছে। পরিচয় চাই? পূজা পূজারা। রবিবারই ফিরে যাওয়ার কথা ছিল, চেতেশ্বরের ‘বেটার হাফ’ যাননি। শুধু ডাবল সেঞ্চুরি দেখবেন বলে।
বেশি অপেক্ষা করতে হল না। ঘণ্টা দেড়েক মতো। হেলমেট খুলে ব্যাট হাতে দৌড়তে শুরু করলেন মহানায়ক। টিভি স্ক্রিনে যা দেখে রিং রোডে-র আকাশে আবিরের রং। উপ্পলের মাঠে ‘মিসেস পূজারা’র মুখে কোটি টাকার হাসি। আমদাবাদের পর এ বার হায়দরাবাদ। দু’বারই তো ডাবল সেঞ্চুরির সাক্ষী থাকলেন। তা হলে চেতেশ্বরের ‘লেডি লাক’ কাজ করছে? শুনে সলজ্জ হাসি এবং ছোট্ট উত্তর, “না, না। ক্রিকেটই ওর ধর্ম। যা করেছে, ও নিজে করেছে। আমি শুধু সাপোর্ট করি।”
যে আবেগ কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরত্বকে ছাপিয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে অরবিন্দ পূজারার গলাকেও। “কত জন যে এসে জড়িয়ে ধরল, কত জন যে দ্রাবিড়ের সঙ্গে তুলনা করে গেল, ভাবা যায় না। আমদাবাদের সময় যেটা হয়েছিল, তার চেয়ে বহু গুণ বেশি এ বার হল। আসলে টিমটার নাম অস্ট্রেলিয়া। আভিজাত্যই আলাদা,” সোমবার বিকেলে রাজকোট থেকে ফোনে বলছিলেন ‘সিনিয়র’ পূজারা। নিছকই যিনি চেতেশ্বর পূজারার বাবা নন, ছেলের ‘কোচ-মেন্টর কাম গাইড’-ও বটে। কথাটা স্বয়ং সৌরাষ্ট্র কোচ দেবু মিত্রও মানেন।

জুটিতে পাওয়া
ভারতের হয়ে দ্বিতীয় উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি পূজারা-বিজয়ের ৩৭০। এর আগে ছিল গাওস্কর-বেঙ্গসরকরের ৩৪৪ রান (’৭৮, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ইডেনে)।
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে যে কোনও উইকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের জুটি। সর্বোচ্চ লক্ষ্মণ-দ্রাবিড়ের ৩৭৬ (২০০১, ইডেন)।

ইংল্যান্ডের পর এ বার অস্ট্রেলিয়া। কোন ডাবল সেঞ্চুরিটা পূজারা-পরিবারকে বেশি আনন্দ দিল? “ইংল্যান্ডেরটা স্পেশ্যাল। কারণ ওটা প্রথম। আর অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে করা ডাবল সেঞ্চুরিটা বোঝাল, ওর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও পরপর বড় ইনিংস খেলার ক্ষমতা আছে,” বলছিলেন ‘সিনিয়র’ পূজারা। টেস্টের মাঝে রোজই ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে ফোনে। রবিবারও হয়েছে। “তবে ও কিন্তু ডাবল সেঞ্চুরি, রেকর্ড নিয়ে একটা শব্দও বলেনি। হ্যামস্ট্রিংয়ে চোটটা নিয়ে ও চিন্তায় ছিল। বলছিল, ওকে যে করে হোক নামতে হবে। টিমকে এমন জায়গায় পৌঁছে দিতে হবে, যেখান থেকে অস্ট্রেলিয়া আর ফিরতে না পারে।”
টেস্ট ইতিহাসে ভারতের হয়ে দ্বিতীয় উইকেটে সর্বোচ্চ রানের পার্টনারশিপ রেকর্ডের (আগেরটা ৩৫ বছর আগে ইডেনে গাওস্কর-বেঙ্গসরকরের) কথা যে মাথায় রাখেননি, সেটা মহানায়ক নিজেও পরিষ্কার করে দিলেন। চেতেশ্বর বলছিলেন, “রেকর্ডের কথা মাথাতেই ছিল না। আমার মাথায় শুধু দেশ থাকে। এ নিয়ে দু’টো ডাবল সেঞ্চুরি হল। তবে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে যে উইকেটে করেছিলাম, তার চেয়ে এই উইকেটটা ব্যাটিংয়ের জন্য বেশি কঠিন ছিল। ঠিক করেছিলাম, কোনও অবস্থাতেই ওদের উইকেট দেব না।”
অর্থাৎ, পড়ে থাকার মানসিকতা। যেটা ছোটবেলা থেকে ছিল। বাবার স্কুটারে চেপে রোজ স্কুল থেকে ফিরেই ছুটতেন মাঠে। সন্ধে পেরিয়ে যেত, কিন্তু প্র্যাক্টিস ছেড়ে বেরোতেন না। “ডেডিকেশন শব্দটা আমাকে শেখাতে হয়নি। ছোট থেকে এমনিই ছিল। নইলে কোনও ছেলে তেরো বছর বয়সে ট্রিপল হান্ড্রেড করতে পারে না,” বলছেন অরবিন্দ। সঙ্গে জুড়তে হবে শেখার ইচ্ছে। নইলে আর ডাবল সেঞ্চুরির পরেও আফসোস হয়? পূজারা বলে ফেলতে পারেন, “কেন যে হুক করতে গেলাম। ওটা এখনও ম্যানেজ করা শিখিনি। শিখতে হবে।”




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.