|
|
|
|
উপ্পল যখন পূজারার |
অন্ধগলি থেকে শাপমুক্তির পথে ধোনির ভারত |
রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায় • হায়দরাবাদ |
কমেন্ট্রি বক্স থেকে ভিভিএস লক্ষ্মণ উঠব-উঠব করছেন। ম্যাথু হেডেন পড়ে গেলেন সামনে। এক সময়ের বাইশ গজের ‘পুরনো বন্ধু’-র দিকে তাকিয়ে ভিভিএস বলে ফেললেন, “কী মনে হচ্ছে? ম্যাচ তো চার দিনেই শেষ হয়ে যাবে।” হেডেনের মুখটা একটু গোমড়া হল বুঝি। ছোট্ট উত্তর এল, “ঠিকই বলেছ মেট।”
অতিকায় চেহারার অজি ওপেনারের মুখ ছোট হওয়া স্বাভাবিক। দেশের এমন নির্যাতন কাঁহাতক আর সহ্য হয়! তিন-তিনটে দিন পেরিয়ে গেল, এতটুকু বিষদাঁত বেরোল না ব্যাগি গ্রিন-গর্বের। উল্টে মহাপতনের ঘণ্টা, মিনিট, সেকেন্ডের কাউন্টডাউন চলছে। হিসেব কষা চলছে, শেষ কবে পরপর দু’টেস্টে চার দিনে সাফ হয়েছে অস্ট্রেলিয়া? হায়দরাবাদ পশ্চিমবঙ্গ নয়, ঢাকের বাদ্যি শোনার তাই উপায় নেই। নইলে একটা নির্দিষ্ট বোল শোনা যেত নিশ্চিতধোনির জিততে কতক্ষণ!
হাতে পড়ে আরও দু’টো দিন। জমার খাতায় আজই অতিথিদের দু’টো উইকেট, দরের ব্যাটসম্যান বলতে পড়ে ওয়াটসন আর ক্লার্ক। পিচে সৃষ্টি হয়েছে গুচ্ছের ‘রাফ’। বল পড়ে লাফাচ্ছে, ভাল রকম টার্ন নিচ্ছে। ইনিংসে হার বাঁচাতেই অস্ট্রেলিয়ার দরকার আরও ১৯২ রানের। এই অবস্থায়, এমন পিচে মঙ্গলবার ক্লার্কদের নব্বইটা ওভার পড়ে থাকতে হবে। যার মধ্যে অন্তত সত্তর ওভার স্পিনার লেলিয়ে দেবেন ধোনি। চাই তো সারা দিনে আটটা ডেলিভারি! এত সব বিপত্তির পাঁচিল পেরোলে তবে পাঁচ দিনের কাহিনি। আর বিধিসম্মত সতর্কীকরণটাও ঝুলিয়ে ফেলা যাক: রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে কিন্তু আবার ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে। প্রথম ইনিংসটা ভাল যায়নি। কিন্তু দ্বিতীয় দফায় আপাতত দু’টোর মধ্যে দু’টো। ‘অ্যাঙ্গল’ পাল্টে সুইপের এমন লোভে ফেলছেন অস্ট্রেলীয়দের, যাতে পা দিলে কপালে দুঃখ আছে। উদাহরণ ওয়ার্নার। উদাহরণ হিউজ।
অস্ট্রেলিয়াও বুঝে গিয়েছে, আর হল না। পূজারা-বিজয়ের নির্মম শাসন শুধু টিমটার অস্থি-মজ্জা বার করে ছাড়েনি, মস্তিষ্কে-মননেও অসীম ভয় ঢুকিয়ে ছেড়েছে। যে টিম এক সময় ‘মেন্টাল ডিসইন্টিগ্রেশন’ থিওরির অন্ধ ভক্ত ছিল, তাদেরই বর্তমান প্রতিভূদের এক জন জেভিয়ার ডোহার্টি বিকেলে বলে গেলেন, “বিজয়-পূজারাই সব শেষ করে দিল। ম্যাচটা এখন যাতে ফিফথ ডে পর্যন্ত যায়, দেখতে হবে।” |
|
কর্তার ডাবল সেঞ্চুরিতে গিন্নির হাততালি। সোমবার হায়দরাবাদে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস |
শুনে আশ্চর্যই লাগবে। অদূর অতীতে যে টিম বিদেশে ০-৮ হেরেছে, দেশের মাঠে অপমানিত হয়েছে ইংরেজদের হাতে, সেই টিমই কি না আজ অত্যাচারী সম্রাটের ভূমিকায়! যতই ক্লার্কের অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাগি গ্রিন পরা ভ্রমণপিপাসু সাহেবের দল মনে হোক, যতই বাকি টিমের প্রেক্ষিতে অজি অধিনায়ককে মনে হোক বিছিন্ন দ্বীপ, দেশের মাটিতে টেস্ট জেতার পরম্পরা তো আবার ফিরে আসছে। হায়দরাবাদ টেস্ট চতুর্থ দিনে শেষ হোক কিংবা পঞ্চমে, পরের পর সিরিজ হারের অন্ধগলি থেকে অন্তত শাপমুক্তির রাস্তা খুঁজে পাচ্ছে ভারত।
পরপর দু’টো টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি হল। চিপকে এমএসডি-র পর উপ্পলে চেতেশ্বর পূজারার। ধোনি যদি ভারতীয় উইকেটকিপারদের মধ্যে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড সৃষ্টি করে থাকেন, তা হলে পূজারা-বিজয়ের ব্যাটে ইডেনে গাওস্কর-বেঙ্গসরকরের ৩৪৪ রানের রেকর্ড চূর্ণ হল। ভারতীয় ক্রিকেটের টেস্ট ইতিহাসে আজ পর্যন্ত ওটাই ছিল দ্বিতীয় উইকেটে সর্বোচ্চ পার্টনারশিপের রেকর্ড। ৩৭০ রান করে বর্তমানে যার মালিক বিজয়-পূজারা। দু’দিনে প্রায় সাত ঘণ্টা যাঁরা বাইশ গজে থাকলেন এবং ডোহার্টি-ম্যাক্সওয়েলের দশা দেখে, ‘ক্লার্ক এই দু’জনকে ব্যাট করতে দেয়নি। ওরাও ঠিক করেছে ক্লার্কদের আর নামতে দেবে না’ মার্কা টুইটের ওড়াউড়ি।
অতটা হয়নি। বিজয় ফিরলেন ১৬৭ করে। পূজারার সমাপ্তি ২০৪ রানে। ঈর্ষণীয় রেকর্ড ক্রিকেট-কিটে প্যাকিং করে। মাত্র এগারোটা টেস্ট খেলে দু-দু’টো ডাবল সেঞ্চুরি। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। খোদ রাহুল শরদ দ্রাবিড়েরও ছিল কি? তবে মৃদু খচখচানিও একটা থাকছে। বিজয় আউট হওয়ার পরপরই আবার ধস নামল। আট উইকেট চলে গেল ১১০ রানে। শেষ ছ’উইকেট মাত্র ৪৩ জুড়তে না জুড়তে। ‘ক্রিকেটদেবতা’-র কপাল খারাপ। লেগ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল সচিনের ব্যাটে আলতো চুমু খেয়ে কিপারের হাতে চলে গেল। ঠিকঠাক ‘এজ’, না ওয়েডের গ্লাভসে বল ঠিক মতো ‘ক্যারি’ করল কি না তা নিয়ে আম্পায়ার খানিকটা দ্বিধাগ্রস্ত মুহূর্ত কাটিয়ে আউট দেন সচিনকে। তবে আউটের সিদ্ধান্তে ব্যাটসম্যান যেমন বিরক্তি দেখাননি, তেমনই ফিল্ডিং দল মাঠে সঙ্গে সঙ্গে আউট না পেয়ে হইচই বাঁধায়নি।
এর পর ধোনি চালাতে গিয়ে না হয় আউট হলেন। কিন্তু বাকিরা? লিডটা ২৬৬ না হয়ে তিনশো বা সাড়ে তিনশোর হলে মানসিক চাপেই ঘাড় আরও মটকে যেত অস্ট্রেলিয়ার। যা হয়নি, হয়নি। কিন্তু যা হয়েছে, সেটাও বড় কম নয়। বিকেলের ফ্রেমটাও বেশ সুন্দর। অশ্বিনের কাঁধে হাত রেখে ফিরছেন ধোনি। মুখে চওড়া হাসি, ‘টু নিল’-এর পূবার্ভাসে। হবে না? অনেক দিন পর চেনা পৃথিবী ফিরছে তাঁর, বোধহয় মনেও পড়ে যাচ্ছে একটা বহুচর্চিত তত্ত্ব।
জীবনটা শুধুই কাঁটার নয়। সেখানে মাঝে মাঝে পদ্মের পাপড়িও থাকে!
|
অস্ট্রেলিয়া
প্রথম ইনিংস
২৩৭-৯ ডিঃ
ভারত
প্রথম ইনিংস
(আগের দিন ৩১১-১)
|
মুরলী ক কাওয়ান বো ম্যাক্সওয়েল ১৬৭
পূজারা ক ডোহার্টি বো প্যাটিনসন ২০৪
সচিন ক ওয়েড বো প্যাটিনসন ৭
কোহলি ক কাওয়ান বো ম্যাক্সওয়েল ৩৪
ধোনি ক ডোহার্টি বো ম্যাক্সওয়েল ৪৪
জাডেজা ক ও বো ম্যাক্সওয়েল ১০
অশ্বিন ক হিউজ বো ডোহার্টি ১
হরভজন ক ম্যাক্সওয়েল বো ডোহার্টি ০
ভুবনেশ্বর স্টাঃ ওয়েড বো ডোহার্টি ১০
ইশান্ত নঃআঃ ২
অতিরিক্ত ১৮
মোট ৫০৩।
পতন: ১৭, ৩৮৭, ৩৯৩, ৪০৪, ৪৬০, ৪৮৪, ৪৮৫, ৪৮৯, ৪৯১।
বোলিং: প্যাটিনসন ২৯-১১-৮০-২, সিডল ৩১-৬-৯২-১, এনরিকে ২১-৭-৪৫-০,
ডোহার্টি ৪৬.১-১৫-১৩১-৩, ম্যাক্সওয়েল ২৬-২-১২৭-৪, ওয়ার্নার ১-০-১৪-০।
|
অস্ট্রেলিয়া
দ্বিতীয় ইনিংস |
কাওয়ান ব্যাটিং ২৬
ওয়ার্নার বো অশ্বিন ২৬
হিউজ বো অশ্বিন ০
ওয়াটসন নঃআঃ ৯ অতিরিক্ত১৩ মোট ৭৪-২। পতন: ৫৬, ৫৬।
বোলিং: ভুবনেশ্বর ৬-৪-৭-০, অশ্বিন ১৫-৬-৪২-২,
হরভজন ৮-৫-১০-০,
জাডেজা ৩-২-২-০। |
|
|
|
|
|
|
|