ডাইন অপবাদে বেধড়ক মার প্রৌঢ় দম্পতিকে
দাসপুরের পর এ বার চন্দ্রকোনা রোড। ফের জানগুরুর নিদান মেনে গ্রামে সালিশি সভা বসিয়ে ডাইন অপবাদ দিয়ে মারধর করা হল এক দম্পতিকে। রবিবার চন্দ্রকোনা রোডের বেনাচাপড়া সংলগ্ন ফতেশিংপুর গ্রামের আদিবাসী পাড়ায় ঘটনাটি ঘটে। গুরুতর জখম প্রৌঢ়া লক্ষ্মী মুর্মুর চিকিৎসা চলছে চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালে। লক্ষ্মীদেবীর স্বামী শম্ভুবাবুকে অবশ্য সোমবার প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। রবিবার রাতেই লক্ষ্মীদেবীর এক আত্মীয় অশোক মাণ্ডি গ্রামের মোড়লদের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তবে এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি।
সোমবার চন্দ্রকোনা হাসপাতালে লক্ষ্মীদেবীকে দেখতে এসেছিলেন গড়বেতা ৩ ব্লকের বিডিও সুশোভন মণ্ডল। বিডিও বলেন, “অভিযুক্তদের ধরতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি। কিছুদিনের মধ্যেই ওই গ্রামে সচেতনতা শিবির করা হবে।” চন্দ্রকোনা রোড ফাঁড়ির আইসি স্বরাজ রায়চৌধুরীর বক্তব্য, “অভিযুক্তদের সন্ধানে তল্লাশি শুরু হয়েছে। এলাকায় উত্তেজনা থাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে।”
লক্ষ্মীদেবীকে দেখতে হাসপাতালে বিডিও। —নিজস্ব চিত্র।
কয়েকমাস আগেই ডাইন অপবাদে দাসপুরের দুবরাজপুর গ্রামে তিন মহিলাকে খুন করে নদীর চরে পুঁতে দেওয়া হয়েছিল। নেতৃত্বে ছিলেন গ্রামের মোড়লরা। সেই ঘটনায় জানগুরু-সহ ২০ জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। ওই ঘটনার পর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়েই প্রশাসন এবং একাধিক সংস্থার উদ্যোগে আদিবাসী এলাকায় সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে যে অবস্থা বিশেষ বদলায়নি, এই ঘটনাই তার প্রমাণ।
ঠিক কী হয়েছিল ফতেশিংপুরে? মাস দেড়েক আগে গ্রামের বাসিন্দা গোপাল মুর্মুর ছেলে রবিলালের মৃত্যু হয়। গোপালরা শম্ভুবাবুদের দূর সম্পর্কের আত্মীয়। কিন্তু দুই পরিবারে অশান্তি চলছিল। শম্ভুবাবু বলেন, “রবিলালের মৃত্যুর পর থেকেই আমার স্ত্রীকে ডাইন বলে সন্দেহ করতে শুরু করে ওরা। এ নিয়ে একাধিক বার গ্রামে সভাও বসে। আমার স্ত্রী এ ব্যাপারে কিছুই জানে না বলে দেয়।” সম্প্রতি গোপালের নেতৃত্বে গ্রামের মোড়ল বাবলু মুর্মু, অজয় টুডুরা ঝাড়খণ্ডের এক জানগুরুর কাছে যান। শম্ভুবাবুকেও জোর করে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ। ওই জানগুরু নিদান দেয়, লক্ষ্মীদেবীই ডাইন। এরপর গত শনিবার গোপালের বাড়িতে বসে সালিশি। তিন লক্ষ টাকা জরিমানা করে মোড়লরা। লক্ষ্মীদেবীরা জানিয়ে দেন, এত টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। তখন তাঁদের গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার ফতোয়া দেওয়া হয়।
রবিবার ফের টাকা দাবি করা হয়। অসম্মত হওয়ায় শম্ভুবাবু ও লক্ষ্মীদেবীকে তাঁদের তিন ছেলে বাপি, অনিল, গণেশের সামনেই লোহার রড ও লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়। ওই দম্পতির ছেলে অনিল বলেন, “পাড়ার লোকজন তো হুমকি দিচ্ছে। পুলিশ চলে গেলে গ্রাম থেকে আমাদের তাড়িয়ে দেওয়া হবে।” অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ অবশ্য গ্রামে টহল দিচ্ছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.