|
|
|
|
খড়্গপুর পুরসভা |
কাটল জট, উন্নয়ন প্রকল্প জমা কংগ্রেসের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • খড়্গপুর |
বরাদ্দ অর্থে ঠিক কী কাজ হবে, সেই প্রকল্প জমা দিচ্ছিলেন না কংগ্রেস কাউন্সিলররা। ফলে, কংগ্রেসের দখলে থাকা ওয়ার্ডগুলিতে উন্নয়ন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। অবশেষে জট কাটল। প্রকল্প জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন খড়্গপুর পুরসভার কংগ্রেস কাউন্সিলররা।
গত বছর অক্টোবরে বোর্ড মিটিংয়ে আলোচনার পর ওয়ার্ড-ভিত্তিক উন্নয়নের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়। কংগ্রেস-বিজেপি বাদে তৃণমূল ও বামফ্রন্টের ১৯ জন কাউন্সিলর প্রকল্প জমা দিয়েছিলেন। সেই মতো টেন্ডারও হয়েছে। তার এতদিন পর কেন কংগ্রেস শিবিরের ১৬ জন কাউন্সিলর প্রকল্প জমা দিচ্ছেন? প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা কংগ্রেস কাউন্সিলর রবিশঙ্কর পাণ্ডের যুক্তি, “মানুষের কাছে আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। সেই কথা মাথায় রেখেই প্রকল্প জমা দিচ্ছি।” এই প্রসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত পুরপ্রধান তুষার চৌধুরীর কটাক্ষ, “এত দিন পর দায়বদ্ধতার কথা মনে পড়ল! আগে ওদের অবস্থান ছিল, জলে নামব কিন্তু চুল ভেজাব না। শেষমেশ সেই বিষাক্ত জলেই চুল ভেজাতে হল!”
রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, দলের বাইরে-ভিতরে চাপে পড়েই শেষমেশ নিজেদের অবস্থান থেকে সরে এসে ওয়ার্ড উন্নয়নে বরাদ্দ অর্থের জন্য প্রকল্প জমা দিতে বাধ্য হলেন কংগ্রেস কাউন্সিলররা। রেলশহর খড়্গপুরে কংগ্রেস-তৃণমূলের চাপানউতোর নতুন কিছু নয়। তবে এই চাপানউতোরে শহর উন্নয়ন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দিয়েছিল। বোর্ড মিটিংয়ে যোগ দিচ্ছিলেন না কংগ্রেস শিবিরের ১৫ জন কাউন্সিলর এবং বিজেপির ১ জন কাউন্সিলর। গত বছরের ১৮ অক্টোবর পুরবোর্ডের এক বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে শহরের ৩৫টি ওয়ার্ডের উন্নয়নের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়। সবমিলিয়ে বরাদ্দ হয় ৫ কোটি ৫৪ লক্ষ ৯৩৭ টাকা। খড়্গপুরের ওয়ার্ডগুলো ৩টি ভাগে বিভক্ত। জনসংখ্যা অনুযায়ী এই ভাগ। যেমন, যে ওয়ার্ডগুলোর জনসংখ্যা বেশি, সেগুলি ‘এ’ ক্যাটাগরির। তারপর ‘বি’ ও ‘সি’ ক্যাটাগরির ওয়ার্ড রয়েছে। পুরসভা সূত্রে খবর, ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে ২২টি ওয়ার্ড। ‘বি’তে ৪টি ও ‘সি’তে ৯টি ওয়ার্ড রয়েছে। বোর্ড মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ‘এ’ ক্যাটাগরির ওয়ার্ডগুলোর জন্য বরাদ্দ হয় প্রায় সাড়ে ১৫ লক্ষ টাকা। ‘বি’ ক্যাটাগরির ওয়ার্ডগুলোর জন্য সাড়ে ১১ লক্ষ টাকা। আর ‘সি’ ক্যাটাগরির ওয়ার্ডগুলোর জন্য প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা।
তবে অর্থ বরাদ্দ হলেও শহরের সার্বিক উন্নয়ন হবে কি না, সেই প্রশ্ন ঘুরেফিরে আসে। কারণ, কংগ্রেস কাউন্সিলররা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, বরাদ্দ অর্থে নিজেদের ওয়ার্ডে কাজ করবেন না। একই মত ছিল বিজেপি কাউন্সিলরের। কংগ্রেস শিবির দাবি করে, যে মিটিং থেকে ওয়ার্ড উন্নয়নের জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়েছে, সেটি অবৈধ। ভারপ্রাপ্ত পুরপ্রধান অর্থ বরাদ্দ করা নিয়ে কোনও মিটিং ডাকতে পারেন না। অক্টোবরের ওই বোর্ড মিটিংয়ে কংগ্রেসের ১৪ জন, বিজেপির ১ জন ও ১ জন নির্দল (কংগ্রেস শিবিরে রয়েছেন) মিলিয়ে মোট ১৬ জন কাউন্সিলর যোগ দেননি। এই ১৬ জন কাউন্সিলরই পুরসভার সভাকক্ষে এক মিটিং করে রবিশঙ্কর পাণ্ডেকে পরবর্তী পুরপ্রধান হিসেবে নির্বাচিত করেন বলে দাবি কংগ্রেস-শিবিরের। তৃণমূলের অবশ্য বক্তব্য, মিটিংটি অবৈধ। এ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলাও চলছে। শুরুতে কংগ্রেসের অবস্থান ছিল, মামলার রায় না- বেরোনো পর্যন্ত দলীয় কাউন্সিলররা প্রকল্প জমা দেবেন না। তবে পরিস্থিতি দেখে তাদের সেই অবস্থান থেকে পিছিয়ে আসতে হল।
পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, কংগ্রেসের দুই কাউন্সিলর এবং বিজেপি কাউন্সিলর এক সময় তাঁদের প্রকল্প জমা দিয়েছিলেন। তবে পরে তা তুলে নেন। ভারপ্রাপ্ত পুরপ্রধান বলেন, “কেন তিন কাউন্সিলর প্রকল্প জমা দিয়ে তুলে নিয়েছিলেন, তা বুঝতে পারিনি। আমাদের কাছে সমস্ত কাগজপত্রও রয়েছে।” দাবি উড়িয়ে রবিশঙ্করবাবু বলেন, “আমাদের কেউ প্রকল্প জমা দেননি।” সোমবার খড়্গপুর পুরসভায় ১৬ জন কাউন্সিলর প্রকল্প জমা দেন। তুষারবাবুর কথায়, “শহর উন্নয়নে আমরা রাজনীতি চাই না। এতদিনে ওঁদের বোধোদয় হয়েছে। তাও ভাল!” তাঁর দাবি, “ইতিমধ্যে অবশ্য সেন্ট্রাল ফান্ডের ১ কোটি ১৭ লক্ষ টাকায় বিভিন্ন ওয়ার্ডে উন্নয়নমূলক কাজ শুরু হয়েছে।” এরপর কী তাহলে বোর্ড মিটিংয়েও যোগ দেবেন কংগ্রেস কাউন্সিলররা। প্রাক্তন পুরপ্রধান বলেন, “বোর্ড মিটিংয়ে যোগ দেবো না, একথা তো আমরা কখনও বলিনি। শুধু বলেছি, অর্থ বরাদ্দ নিয়ে বোর্ড মিটিং হলে সেই মিটিংয়ে আমরা যোগ দেব না। ফলে, কী কী বিষয় নিয়ে আগামী দিনে মিটিং ডাকা হবে, তার উপরই নির্ভর করছে সেই মিটিংয়ে আমরা যোগ দেব কি দেব না।”
কংগ্রেস শিবিরের অবস্থান বদলে উন্নয়ন-জট কাটল, তবে পুর-জট সেই রয়েই গেল! |
|
|
|
|
|