প্রবন্ধ ১...
রক্তকরবী: বহুরূপী
ও রবীন্দ্রনাথ
য়েক দিন আগে অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথাবার্তায় রাজনৈতিক চিন্তায় নতুনত্ব ফিরিয়ে আনা নিয়ে আলোচনার সুযোগ পেয়েছিলাম (‘সামাজিক উন্নয়নের সম্ভাবনা অনেক, অভাব যথার্থ সুচিন্তার’, ২০-০২)। চিন্তার নতুনত্বের প্রয়োজন নানা কারণে। তার মধ্যে একটি কারণ সমাজের সবচেয়ে নিচু ধাপের মানুষদের জীবনযাত্রার চূড়ান্ত দৈন্যের দিকে অনেক বেশি নজর দেওয়া। সমাজব্যবস্থায় ন্যায্যতা বৃদ্ধি করার প্রচেষ্টা করতে হলে রাজনীতি চর্চায় নতুনত্ব আনার বিশেষ দরকার। এ সব বিষয়ে অনির্বাণের সঙ্গে কথা হয়েছিল। ও বিষয়ে তার বাড়তি আরও কিছু বলার জন্য কিন্তু আমি এই চিঠিটি লিখছি না। চিঠি লেখার কারণ এই যে, ওই আলোচনার প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ‘রক্তকরবী’ বিষয়ে যা বলেছিলাম তার মধ্যে একটি ছোট ভুল ছিল। ভুলটিতে আমার বক্তব্য বদলায়নি, কিন্তু ভ্রম সংশোধন করাটা দরকার।
১৯৫৪ সালে যখন শম্ভু মিত্রের পরিচালনায় বহুরূপী ‘রক্তকরবী’ নাটকটি নতুন ভাবে অভিনয় করল, তখন নাটকটির শেষটিকে তাঁরা বদলে দিয়েছিলেন। নাটকটি শেষ হল মাস্ মুভমেন্টের আহ্বান দিয়ে, এটা ঠিকই। কিন্তু সেই প্রসঙ্গে আমি বলেছিলাম যে, সেই আহ্বানের বাক্যটি শম্ভু মিত্র যোগ করেছিলেন— সেটি আমারই স্মৃতির ভুল। ‘‘আয় রে ভাই, এবার লড়াইয়ে চল”— এই লাইনটি রবীন্দ্রনাথের নিজেরই লেখা, বহুরূপী শুধু ওই বক্তব্যটির রূপ ও তেজ অনেক বাড়াল। রবীন্দ্রনাথের ‘রক্তকরবী’তে তার পরে যে লাইনগুলি ছিল, বহুরূপীর নাটকে সেগুলির কিছু বাদ পড়ল, আর কিছু বসানো হল কয়েকটি লাইন আগে। নাটকটি শেষ করা হল ওই আহ্বানের মধ্যে দিয়ে, পিছনে মাস্ মুভমেন্টের গতিচিত্র বড় করে দেখিয়ে। এই পরিবর্তনটি আনতে শম্ভু মিত্রকে কোনও লাইন যোগ করতে হয়নি। কিছু লাইন শুধু বিয়োগ দিতে হয়েছিল। এবং ‘লড়াইয়ে চল’ এই ডাকের স্বরূপটিও বদলাতে হয়েছিল।
শিল্পী: সুমন চৌধুরী
রবীন্দ্রনাথের নাটকে এ রকম পরিবর্তন করা নিয়ে অনেকেই শম্ভু মিত্রকে সমালোচনা করেছিলেন। পঞ্চাশ দশকের বিতর্কে ‘অশোভনতা’ এবং ‘জ্যাঠামো’ দুটি শব্দেরই প্রয়োগ হয়েছিল বলে মনে পড়ে। কিন্তু মানা দরকার যে, সমাজের অত্যাচারের ও অনৈক্যের বিরোধিতা রবীন্দ্রনাথই করেছিলেন, তার থেকে শম্ভু মিত্রকে সরতে হয়নি। এবং সে যুগের রাজনীতিচিন্তায় বামপন্থীরা যে সন্ত্রাসবাদ, অর্থাৎ টেররিজম-এর বিরোধিতা করেছেন তাও রবীন্দ্রনাথের পাশে দাঁড়িয়ে। ‘চার অধ্যায়’ বইটিতে সেই বিরোধিতা আরও স্পষ্ট, কিন্তু ‘রক্তকরবী’তেও রবীন্দ্রনাথের নন্দিনী এবং তৃপ্তি মিত্রের অভিনীত নন্দিনী ও দিকে যেতে চাননি। পার্থক্যটা এল অন্য বিষয়ে। রবীন্দ্রনাথের নাটকে নন্দিনী বললেন যে, বুকের রক্ত দিয়ে কুন্দ ফুলের মালা রঙিন করবেন এবং এই কথা বলে নিজের জীবনদান করতে এগিয়ে গেলেন। অন্যরা তা মেনে নিলেন এবং ওই আত্মবিসর্জনের সৌন্দর্যের মধ্যে রবীন্দ্রনাথের নাটকটি শেষ হল, শুধু লড়াইয়ের ছোট ইঙ্গিত দিয়ে। সেটাই শম্ভু মিত্র বদলালেন। সে জায়গায় ওই লড়াইয়ের প্রয়োজনটিকে পরিণত করা হল মাস্ মুভমেন্টের আহ্বানে। সজোরে এবং সবেগে।
বহুরূপীর নাটক-সমাপ্তি নিশ্চয়ই পূর্ণ ভাবে রাবীন্দ্রিক নয়। কিন্তু রবীন্দ্রবিরোধী, এটাও বলা সহজ হবে না। বরঞ্চ রবীন্দ্রচিন্তার আশ্রয় নিয়ে অন্য একটি বার্তা যোগ করা যেতে পারে, এ রকম বড় ইঙ্গিত বহুরূপীর ‘রক্তকরবী’তে দেওয়া হল। এর মধ্যে নতুনত্ব ছিল এবং সমাজমুখী বড় রকম বক্তব্যও ছিল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.