কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি বন্ধে বিল লোকসভার পর রাজ্যসভাতেও পাশ হইয়াছে। অতঃপর রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের অপেক্ষা। এ ধরনের একটি আইনের জন্য দীর্ঘ কাল মহিলারা দাবি জানাইতেছিলেন, আন্দোলনও করিতেছিলেন। কর্মক্ষেত্রে পুরুষ সহকর্মী, বিশেষত কর্তৃপক্ষস্থানীয় পুরুষ উপরওয়ালা দ্বারা তাঁহারা প্রায়শ হেনস্থা হইয়া থাকেন, যে-হেনস্থাকে যৌন হয়রানি ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। অনেক মহিলা কর্মীই এই কারণে অপমানিত, বীতশ্রদ্ধ হইয়া এমনকী চাকুরি ছাড়িয়া দিতে কিংবা অন্য অফিসে বদলি লইতেও বাধ্য হন। যেখানেই নারীপুরুষ একসঙ্গে কাজ করে, সেখানেই নিয়মিত মহিলাদের এই অবাঞ্ছিত ও অবমাননাকর হয়রানির শিকার হইতে হয়। ইহা বন্ধ করিতেই আইন।
কর্মক্ষেত্র বলিতে সংগঠিত ও অসংগঠিত উভয় ক্ষেত্রের যাবতীয় সংস্থাকেই বুঝানো হইয়াছে। অর্থাৎ কেবল হাসপাতাল বা তথ্যপ্রযুক্তির অত্যাধুনিক সংস্থা নয়, ইঁটভাটার মতো যে সকল স্থানে নারীপুরুষ পাশাপাশি কাজ করিতেছে, তাহাকেও বুঝানো হইয়াছে। এমনকী গৃহ-পরিচারিকাদেরও ইহার অন্তর্ভুক্ত করা হইয়াছে। তাঁহাদের দারিদ্র ও অসহায়তার সুযোগ লইয়া অনেক সময়েই তাঁহাদের যৌন লাঞ্ছনা করা হয়। প্রস্তাবিত আইনে তাঁহাদের অন্তর্ভুক্তি যুক্তিযুক্ত। এই আইনের যথাযথ প্রয়োগ জরুরি। মহিলা কর্মীর অভিযোগকে যথোচিত গুরুত্ব না দিয়া বিষয়টি ধামা-চাপা দিবার অপচেষ্টা চলিলে হেনস্থাকারীরা উৎসাহিত হয়। লাঞ্ছনাকারী সচরাচর পুরুষ এবং কর্তৃস্থানীয় হওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষেরও অনেক সময় চেষ্টা থাকে হেনস্থাকারী পুরুষ কর্মীটিকে আড়াল করার। এ জন্যই দেখা যায়, যৌন হয়রানি একটি নিয়মিত ব্যাধি হইলেও এ যাবৎ এই কারণে শাস্তি পাওয়ার ঘটনা আঙুলে গোনা যায়। ভবিষ্যতে এ ভাবে হয়রানিকে প্রশ্রয় দিলে কড়া শাস্তি ও জরিমানার বিধান বিলটিতে রহিয়াছে।
রাজ্যসভার প্রাক্তন চেয়ারপার্সন নাজমা হেপতুল্লা যেমন বলিয়াছেন, মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করিতে মোট ৪৮টি আইন রহিয়াছে। বর্তমান আইনটি ৪৯তম। তথাপি মহিলারা যে আজও ভারতীয় সমাজে সুরক্ষিত নন, তাহার কারণ আইনের প্রয়োগে শৈথিল্য, গড়িমসি, ঔদাসীন্য। এবং সেই ঔদাসীন্য যে ইচ্ছাকৃত, তাহা মনে করার সঙ্গত কারণ আছে। পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষ, বিচারবিভাগ, বিচারের কাঠগড়ায় অভিযুক্তকে টানিয়া আনার ভারপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ—সকলের তৎপরতা ছাড়া এ ধরনের আইন সুষ্ঠুভাবে প্রযুক্ত হইতে পারে না। যেমন কোনও মহিলা কর্মীর আনা যৌন হয়রানির অভিযোগের তদন্তে অফিস-কর্তৃপক্ষ যদি তৎপর না হয়, নিরপেক্ষ না থাকে, তবে কেবল যে সেই নির্দিষ্ট অভিযোগটির সুরাহা হয় না, তাহা নহে, হয়রানির শিকার অন্য মহিলারাও অভিযোগ করিতে প্রাণিত হন না, অথচ হেনস্থাকারীরা যৎপরোনাস্তি উদ্দীপিত হইয়া থাকে। আইন একাই অতএব পর্যাপ্ত নহে, চাই সমাজের সার্বিক সচেতনতা। তাহা মিলিবে কি? |