সম্পাদকীয় ১...
অভিযান
বিবার নয়াদিল্লিতে ভারতীয় জনতা পার্টির প্রধান মুখ (এবং প্রায় নিশ্চিত ভাবে পরবর্তী নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রিত্বের দলীয় প্রার্থী) হিসাবে উঠিয়া আসিলেন নরেন্দ্র মোদী, কোনও উচ্চারিত ঘোষণা ব্যতিরেকেই। বিজেপি-র জাতীয় পরিষদের মঞ্চে যখন বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ সকল দলীয় কর্মীকে দণ্ডায়মান হইয়া নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশ্যে করতালি ও অভিনন্দন জানাইতে নির্দেশ দিলেন, সেই মুহূর্তেই অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য-বিধেয় স্পষ্ট হইল, সভার সম্মুখসারিতে উপবিষ্ট কতিপয় অপ্রসন্ন বিরুদ্ধভাবাপন্ন নেতৃমুখ অগ্রাহ্য করিয়া দলের প্রধান পুরুষ হিসাবে বৃত হইলেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী। অতঃপর যে স্বীকৃতি-ভাষণটি তিনি দিলেন, তাহাও স্পষ্ট বুঝাইয়া দিল, তাঁহার লক্ষ্য: প্রথমত নিজের দলের নেতা হইয়া ওঠা, এবং সেই কারণে দলের অন্যান্য ক্ষমতাবান নেতাদের অতিক্রম করিতে বিজেপি-র সমর্থক-সমাজের কাছে নিজের অপার গ্রহণযোগ্যতার ব্যবহার। নিজের বক্তব্যকে সযত্নে সাজাইলেন তিনি, দলীয় সমর্থকদের উদ্দীপ্ত করিতে কংগ্রেসের দুর্নীতি ও অপশাসনের কুক্ষি হইতে দেশকে উদ্ধার করিবার ব্রতের সঙ্গে মিলাইয়া দিলেন কংগ্রেসের পরিবারতন্ত্রের রাজনীতির বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ। এবং দলের অভ্যন্তরের ‘মোদী-ম্যাজিক’কে মূলধন করিয়া গুজরাতের প্রশাসনিক কৃতিত্বের বিষয়টি সুচতুর ভাবে ছুঁইয়া গিয়া ঘোষণা করিলেন আরও বড় মঞ্চে আরও বড় যুদ্ধ লড়িবার শপথমন্ত্র।
মোদীর অভিষেক-মঞ্চে যাহা ঘটিল, এক দিক দিয়া তাহা ব্যতিক্রমী ও গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত ভারতীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে দলের প্রধান মুখ কে হইবেন, কেন্দ্র বা রাজ্য নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী কে হইবেন, তাহা নির্ধারিত হয় দলের প্রধান কতিপয় নেতার সৌজন্যে। জাতীয় কংগ্রেসে সেই মহান ভার ন্যস্ত থাকে একটিমাত্র পরিবারের অন্দরমহলে, তবে অন্যান্য দলও বিশেষ ব্যতিক্রম নহে। হাতে-গোনা কিছু নেতার অঙ্গুলিহেলনে, ধ্রুপদী গোষ্ঠীতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত হয় প্রধান নেতৃমুখ। এই গোষ্ঠীতন্ত্রের আবহে গণতন্ত্রের স্থান নাই, গণ-র পছন্দকে গৌণ করিয়া মুখ্য হইয়া দাঁড়ায় গোষ্ঠীর নির্দেশ। সাড়ে ছয় দশকের ইতিহাসে মাত্র দুই একটিই ব্যতিক্রম। উনিশশো ষাটের দশকের শেষ পাদে ইন্দিরা গাঁধী। নব্বইয়ের দশকের মধ্য ভাগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুই ক্ষেত্রেই প্রবল ও প্রধান দলীয় ‘এলিট’-বর্গের মতের বিরুদ্ধে, কেবল জনপ্রিয়তার মহাপ্লাবনে ভর করিয়া উত্থিত হইয়াছিলেন এই দুই জন। ২০১৩ সালে এই ব্যতিক্রমী তালিকার ইতিহাসে যোগ হইতে চলিয়াছে আর একটি নাম: নরেন্দ্র মোদী। সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলিদের বিরোধিতায় পর্যুদস্ত না হইয়া কেবলমাত্র অসামান্য জনপ্রিয়তার জোরে সর্বাগ্রে আসিয়া দাঁড়াইলেন নরেন্দ্র মোদী। গোষ্ঠীতন্ত্র পরাজিত হইল। আসল কথা, ভুল হউক ঠিক হউক, প্রায় সকল বিজেপি-সমর্থক ও কর্মীর দৃঢ় বিশ্বাস: মোদী এমনই এক নেতা, একমাত্র নেতা, যিনি সম্পূর্ণ একার জোরেই দলকে ভোটসমুদ্র তরাইয়া দিতে পারেন। গত দশ বছর যাবৎ প্রধান বিরোধী দলের হইয়া ঘাম ঝরাইয়াছেন যাঁহারা, নরেন্দ্র মোদীই এই মুহূর্তে তাঁহাদের সর্বাপেক্ষা নিরাপদ বাজি। ধারণা সত্য কি না, তাহা অন্য প্রশ্ন, কিন্তু আপাতত ধারণাটি প্রবল।
মোদীর বক্তৃতাটিও কম তাৎপর্যপূর্ণ নয়। বিজেপিকে অন্য সব কিছু ছাড়িয়া অর্জুনের মতো পাখির চোখের দিকে, অর্থাৎ আগামী জাতীয় নির্বাচনের দিকে একাগ্র মনঃসংযোগ করিতে আহ্বান করিতেছেন যে নেতা, তিনি নিজেও যে অর্জুন-মন্ত্রে ভর দিয়া অবিসংবাদী দলীয় প্রাধান্য অর্জনের লক্ষ্যে আগাইতেছেন, তাহা স্পষ্ট। কিছু ক্ষেত্রে মনোযোগ ভ্রষ্ট হইয়াছে: কংগ্রেসের পরিবারতন্ত্রের সমালোচনার সূত্রে প্রণব মুখোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী হইলে দিব্য হইত বা লালবাহাদুর শাস্ত্রীর কিষাণ-মন্ত্রই বিজেপির উদ্দীপনা, ইত্যাদি বাক্যে সাধারণ সমর্থককে হয়তো কিছু বিভ্রান্ত করিয়াছেন। তবে শেষ পর্যন্ত ওস্তাদের মারে সব ছিদ্রই বন্ধ করিয়াছেন তিনি, দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বীদের মুখ বন্ধ করিতে বিতর্কিত গুজরাত মডেল লইয়া বিশেষ আলোচনা না করিয়া বরং উচ্চ জাতীয় স্তরে বিজেপি-র দলীয় দায় ও নিজের ব্যক্তিগত যোগ্যতার জোরালো বিজ্ঞাপনে ছক্কা হাঁকাইয়াছেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.