মহাকরণে অগ্নিকাণ্ডের পরে ‘তৎপর’ হয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যত্রতত্র স্টোভ জ্বালিয়ে রান্না বন্ধ করা, আধুনিক মানের ক্যান্টিনের ব্যবস্থার মতো অগ্নিবিধি নিয়ে পদক্ষেপ নজরে পড়েছিল মহাকরণ, নবমহাকরণের মতো সরকারি স্থলে। কলকাতার অফিসপাড়ার তৎপরতা দ্বিতীয় বিবাদী বাগ, সল্টলেকের অফিসপাড়ায় অমিল। এখানে সাবেক মহাকরণের অন্দরের ছবিটাই বর্তমান।
আগুন লাগার বিভিন্ন উপকরণ যত্রতত্র ভাবেই চোখের সামনে ছড়িয়ে রয়েছে। প্রতিরোধক ব্যবস্থা বলতে অফিসগুলিতে কেবলমাত্র কয়েকটি ফায়ার এক্সটিংগুইশার। সূর্য সেন মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের পরে তাই সল্টলেকের সরকারি ভবনগুলির অগ্নিবিধি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিকাশ ভবনের একতলায় স্টোভ জ্বালিয়ে বিভিন্ন খাবার তৈরির আয়োজন চলছে। সেখানেই সার দিয়ে অপেক্ষায় কর্মচারী থেকে ভবনে যাতায়াত করা অসংখ্য মানুষ। অদূরেই সরকারি দফতর। লোহা ও অ্যালুমিনিয়ামের খোলা তাকে জমে থাকা সরকারি নথির স্তূপ। কয়েকটি ফায়ার এক্সটিংগুইশার চোখে পড়লেও সেগুলি যে বেশ পুরনো, তা সহজেই অনুমেয়। এখানেই শেষ নয়, বিকাশ ভবনের কয়েকটি তলে সিঁড়ির তলায় দেখা গেল পরিত্যক্ত কাঠের চেয়ার, টেবিল-সহ বিভিন্ন সামগ্রীর স্তূপ। |
জলসম্পদ ভবনের অফিসে দাহ্য জিনিসের স্তূপ। |
পাশেই জলসম্পদ ভবনে চলছে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ। সেখানে একতলায় অনেকটা জায়গা জুড়ে ক্যান্টিন। কিন্তু পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। পাশের ঘরেই অফিসে ব্যবহৃত পরিত্যক্ত সামগ্রী থেকে ইমারতি দ্রব্যের স্তূপ। রয়েছে দাহ্য পদার্থও। তার পাশে দু’টি ফায়ার এক্সটিংগুইশার। যার একটির মেয়াদ ফুরিয়েছে। কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রাথমিক ব্যবস্থার জন্য লাগানো ওই যন্ত্রটির মেয়াদ গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল, তার পরেও তিন মাস ব্যবহার করা যায়।
পূর্ত ভবনের দৃশ্যটা একই। বিভিন্ন তলেই অস্থায়ী খাবারের দোকান। স্টোভ জ্বালিয়ে চলছে নানা রকম রান্নার আয়োজন। কর্মচারীদের কাছ থেকে আসছে খাবারের অর্ডার। সে অনুযায়ী রকমারি খাবারও সরবরাহ করা হচ্ছে।
আমরি অগ্নিকাণ্ডের পরে সরকারি বহুতলগুলিতে জলাধার, পৃথক জল সরবরাহের ব্যবস্থা, হিট ও স্মোক ডিটেক্টর, স্প্রিঙ্কলার, ফায়ার অ্যালার্ম, ফায়ার এক্সটিংগুইশার-সহ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছিল দমকল দফতর। এমনকী, এক জন ফায়ার অফিসারের অধীনে প্রয়োজন অনুযায়ী ৬-৭ জন ফায়ার ফাইটার রাখা ও কর্মীদের নিয়ে মহড়া দেওয়ার পরিকল্পনার কথাও বলা হয়।
কিন্তু মহাকরণের মতো ব্যবস্থা কেন হল না সল্টলেকে? পূর্ত দফতরের এক উচ্চপদস্থ কর্তার কথায়, “কয়েকটি ফায়ার এক্সটিংগুইশার ছাড়া বিশেষ কিছু হয়নি। তেমন কোনও নির্দেশিকার কথা জানা নেই। অস্থায়ী দোকান সম্পর্কে কোনও আলোচনাও হয়নি।”
|
বিকাশ ভবনে পুরনো অগ্নি-নিরোধক যন্ত্র। সোমবার, সল্টলেকে। |
তৃণমূল সমর্থিত স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশনের সভাপতি মনোজ চক্রবর্তী বলেন, “দ্বিতীয় বিবাদী বাগ সল্টলেকের অফিসপাড়ায় লক্ষাধিক কর্মচারী যুক্ত। একাধিক মন্ত্রীর দফতরও এখানে। আগে বামেরা কিছুই করে যায়নি। জায়গাটি কার্যত জতুগৃহ হয়ে রয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা এই বিষয়ে আন্দোলনও করেছি। মহাকরণে যদি ব্যবস্থা হতে পারে, এখানে নয় কেন? পর্যাপ্ত ব্যবস্থার জন্য আবেদনও করা হয়েছে।”
দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান বলেন, “অভিযোগ ঠিক নয়। ব্যবস্থা নিতে আগেই নির্দেশ পাঠানো হয়েছিল। কিছু পদক্ষেপও হয়েছে। অফিস বিল্ডিংগুলিতে জলাধার ও হাইপ্রেশার পাম্প রয়েছে। ফায়ার এক্সটিংগুইশারও রয়েছে। তবে অন্যান্য ব্যবস্থা কিংবা অগ্নিবিধি না মানা নিয়ে অভিযোগ খতিয়ে দেখছি।”
পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম অবশ্য সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, “অগ্নিবিধি মেনে ব্যবস্থা সর্বত্র এখনও হয়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।”
ব্যতিক্রম জলসম্পদ ভবন। দায়িত্বরত সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কিছু কাজ আগেই হয়েছিল। তা পর্যাপ্ত নয়। তাই বিশেষজ্ঞকে দিয়ে পৃথক পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ব্যয় হবে ১ কোটি টাকা। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা পুরোপুরি কার্যকর করা হবে। পাশাপাশি, ১ কোটি ৭৩ লক্ষ টাকা দিয়ে একটি পৃথক জরুরি প্রবেশ ও নিষ্ক্রমণের পথ তৈরি হচ্ছে।”
|