সূর্য সেন বাজার নিয়ে কমিটি
বিপদ মাথায় ব্যবসা, জতুগৃহ সব বাজারই
শুধুমাত্র শিয়ালদহের সূর্য সেন মার্কেট নয়। অগ্নি নির্বাপণের বিন্দুমাত্র ব্যবস্থা না থাকা সত্ত্বেও শহরে দিব্যি রমরমিয়ে চলছে অসংখ্য ছোট-বড় বাজার। সূর্য সেন মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের পরে শহর জুড়ে কয়েকটি বাজারের হাল দেখে রীতিমতো চোখ কপালে পুরসভার বিশেষজ্ঞ দলের। পুরসভার এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, “কয়েকটি বাজারের হাল এত খারাপ, রিপোর্টে কী লিখব, তা বুঝতে পারছি না।” অর্থাৎ, যে কোনও দিন ওই সব বাজারেও ফের কোনও দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সোমবার থেকে এই অভিযান শুরু করা হয়েছে। ওই দলে ছিলেন পুরসভার আলো, লাইসেন্স, বাজার, জঞ্জাল অপসারণ-সহ সিইএসসি-র অফিসারেরা। এ দিন সকাল থেকে পুরসভার ১৫টি বরোর প্রায় ৩২টি বাজারে আলাদা আলাদা টিম ঘোরে। এর মধ্যে পুরসভার নিজস্ব বাজারের পাশাপাশি বেসরকারি বাজারও আছে।
মেয়র পারিষদ (বাজার) তারক সিংহ নিজেই আতঙ্কে আছেন পুরসভা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে থাকা নিউ মার্কেট নিয়ে। তারকবাবুর কথায়, “পুরো এলাকাটি যেন জতুগৃহ হয়ে রয়েছে। নিউ মার্কেটে ঢোকার সব রাস্তা আটকে গিয়েছে কিছু হকারের কারণে। তারা আবার মার্কেটের সামনে বাঁশের কাঠামো তৈরি করেছে। আর সেই কাঠামোয় ঝুলছে চামড়া, পলিথিন-সহ অতি দাহ্য সব জিনিসপত্র।” তিনি বলেন “শহরের ঐতিহ্যশালী ওই বাজারকে রক্ষা করতে হলে প্রত্যেক দলকে এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে হয়তো আরও বড় কোনও অঘটনের সামনে পড়ব আমরা।” এ দিন পুরসভার বিশেষ টিম গিয়েছিল শিয়ালদহের কোলে মার্কেটেও। ওই দলে থাকা পুরসভার এক অফিসার বলেন, “বাজারের ভিতরে আগুন জ্বেলে রান্না নিষেধ বলা হলেও কোলে মার্কেটে এখনও তা চলছে বহাল তবিয়তেই।” বেহালার এস এন রায় রোড মার্কেটের হাল দেখে আতঙ্কিত একাধিক পুর-অফিসার। তাঁদের বক্তব্য, ওই বাজারের ছাদ ভেঙে যে কোনও দিন চাপা পড়তে পারেন মানুষজন।
এ দিকে, পুরসভার নির্দেশে এখন বন্ধ আছে অগ্নিদগ্ধ সূর্য সেন মার্কেট। ওই বাজার খোলার দাবিতে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের কাছে দাবি জানান মার্কেটের একাধিক ব্যবসায়ী। সূর্য সেন মার্কেট নিয়ে এ দিন ফের বৈঠক হয় পুরসভায়। সেখানে হাজির ছিলেন রাজ্যের দমকলমন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খান, মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়, মেয়র পারিষদ (বাজার) তারক সিংহ ও পুর-কমিশনার খলিল আহমেদ। বৈঠক শেষে দমকলমন্ত্রী বলেন, “ওই বাজার খোলার আগে বিদ্যুৎ ও দমকলের সব আচরণ-বিধি মানা হয়েছে কি না, তা যাচাই করে দেখা হবে। কোনও গাফিলতি থাকলে দমকল ওই বাজার খোলার ছাড়পত্র দেবে না।” এ দিনই সূর্য সেন বাজারের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। রাজ্যের ডিজি (দমকল) দুর্গাপ্রসাদ তারানিয়ার নেতৃত্বে ৫ জনের ওই কমিটি তৈরি হয়। ওই কমিটির রিপোর্টের প্রেক্ষিতেই সেখানে দোকান খোলার সম্মতি দেওয়া হবে।
ওই বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণের আর্জি জানিয়ে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি পাঠালেন তৃণমূল সাংসদ সোমেন মিত্র। চিঠির মূল বক্তব্য— বাজারটি পুড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের জীবন-জীবিকা বিপন্ন। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী যেন তাঁর ত্রাণ তহবিল থেকে ওই ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক এবং অন্যান্য সাহায্য করেন। রবিবার সোমেনবাবু ওই পোড়া বাজার দেখতে গিয়েছিলেন।
সোমেনবাবুর স্ত্রী তথা তৃণমূল বিধায়ক শিখা মিত্রের সঙ্গে দলীয় নেতৃত্বের বিবাদ বহু দিন আগেই প্রকাশ্যে এসেছে। সেই প্রেক্ষিতে সোমেনবাবুর এ দিনের ওই চিঠি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। চিঠিতে সোমেনবাবু সূর্য সেন বাজারে আগুন লাগার খবর পেয়েই মুখ্যমন্ত্রীর ঘটনাস্থলে যাওয়া এবং বিপন্নদের সাহায্য করার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি লিখেছেন, কোনও পদাধিকারবলে তিনি ওই চিঠি লিখছেন না। কিন্তু ৪০ বছর ধরে শিয়ালদহের মানুষের ভাল-মন্দের সঙ্গে মানসিক ভাবে তিনি জড়িয়ে আছেন। এই বিপদেও তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর স্বার্থেই তাঁর এই চিঠি। সোমেনবাবু আরও লিখেছেন, ‘অন্যান্য দিক বিবেচনায় না এনে কেবল মানবিক দিক থেকেই তুমি আমার আর্জি বিবেচনা করবে, শুধু এই আশাটুকু করতে পারি।’
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.