রাজনৈতিক টানাপোড়েনের ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের কাজ কার্যত থমকেই ছিল। এ বার প্রকল্পের কাজে সরাসরি বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠল বর্তমান শাসক দলের এক বিধায়কের দিকেই।
সল্টলেক এবং ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসে মেট্রো প্রকল্পের কাজ এগিয়ে গেলেও দত্তাবাদে দীর্ঘদিন ধরে তা থমকে রয়েছে। অভিযোগ, সোমবার সল্টলেকের দত্তাবাদে মেট্রো প্রকল্পের সমীক্ষা করতে গিয়ে তৃণমূল বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত ও স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের বাধায় প্রশাসনিক কর্তাদের ফেরত যেতে হয়।
সরকারি সূত্রের খবর, এ দিন সকালে কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন, নগরোন্নয়ন দফতর এবং বিধাননগর মহকুমা প্রশাসনের প্রতিনিধিরা দত্তাবাদে সমীক্ষায় যান। তাঁদের সঙ্গে ছিল পুলিশ বাহিনী।
এই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান সল্টলেক পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তথা রাজারহাট-নিউটাউনের বিধায়ক তৃণমূলের সব্যসাচী দত্ত। অভিযোগ, তাঁর বাধায় ফেরত চলে যান
প্রশাসনিক কর্তারা।
কেন তিনি সরকারি কাজে বাধা দিলেন?
সব্যসাচীবাবুর জবাব, “সুষ্ঠু পরিকল্পনা ছাড়া উচ্ছেদ করা যাবে না। এ ভাবে উচ্ছেদ করার চেষ্টা হলে রুখব।”
বিক্ষোভকারীদের মধ্যে অধিকাংশই স্থানীয় তৃণমূল কর্মী-সমর্থক ছিলেন বলে অভিযোগ। সব্যসাচীবাবুর অবশ্য দাবি, দলমত নির্বিশেষে মানুষ প্রতিবাদ করেছেন।
সব্যসাচীবাবুর এই ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে দলের ভিতরেই। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “সমীক্ষা মানেই উচ্ছেদ নয়। সব্যসাচীবাবুকেও তা জানিয়েছিলাম। দত্তাবাদের মানুষ চাইলে পুনর্গঠন, পুনর্বাসনের কাজ হবে। তার জন্যও সমীক্ষা দরকার।” পরে বলেন, “তবে এ দিন কী ঘটেছে জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখব।”
সব্যসাচীর ভূমিকায় ‘ক্ষুব্ধ’ স্থানীয় বিধায়ক সুজিত বসু-ও। নাম না করে তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন কাজ আটকে। আজ মেট্রোর কাজের সমীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। যাঁরা প্রতিবাদ করেছেন, তাঁদের বলার অন্য জায়গা ছিল।”
পুলিশ সূত্রের খবর, দত্তাবাদে বেঙ্গল কেমিক্যালের কাছে রেডক্রস হাসপাতাল ও একটি বাড়িতে ‘মার্কিং’ করেন ওই সমীক্ষা-দলের প্রতিনিধিরা। এর পরই কয়েকজন বাসিন্দা প্রতিবাদ শুরু করেন। তাঁদের দাবি, মেট্রো প্রকল্পের জেরে যাঁদের উচ্ছেদ করা হবে, তাঁদের পুনর্বাসন সংক্রান্ত কিছুই সরকারি ভাবে জানানো হয়নি। তাঁরা আরও দাবি তোলেন, শুধু মেট্রো প্রকল্পের জন্যই নয়, সামগ্রিক ভাবে দত্তাবাদ নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে জানাতে হবে সরকারকে। বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, বাম আমলে সমীক্ষা হলেও কাজ হয়নি।
দত্তাবাদের পরিকল্পনা নিয়ে বাসিন্দাদের কিছু জানানো হয়নি কেন, বিধাননগরের মহকুমা শাসক মলয় মুখোপাধ্যায়কে জানতে চাওয়া হলে তিনি মন্তব্য করেননি। মেট্রোর এক কর্তার দাবি,
প্রকল্পের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ তাঁদের দায়িত্ব। গোটা দত্তাবাদের দায়িত্ব তাঁদের নয়।
এলাকার সিপিএম নেতারা অবশ্য এই সমীক্ষার পক্ষেই রয়েছেন। দলের স্থানীয় নেতা প্রণব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সমীক্ষা অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু কী কারণে সমীক্ষা করা হচ্ছে,
তা সরকার স্পষ্ট করেনি। তাই বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।” |