হন্যে হয়ে খুঁজেও গার্ডেনরিচের হাঙ্গামায় মূল অভিযুক্ত, তৃণমূল নেতা মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্নার হদিস পায়নি সিআইডি। তাঁর সন্ধান পেতে শেখ সুহান ও ইবনেকে ফের নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য তারা আর্জি জানাল আদালতে। কারণ মুন্না কোথায় লুকিয়ে আছেন, ইবনে-সুহান তা জানে বলে সিআইডি-র ধারণা। সরকারি আইনজীবী সোমবার আদালতে জানান, ওই দুই অভিযুক্ত জেরায় বলেছে, তারা তাদের নেতার (মুন্না) ডেরায় তদন্তকারীদের পৌঁছে দেবে। বিচারক তাদের জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
গার্ডেনরিচের হরিমোহন ঘোষ কলেজে ছাত্রভোটের মনোনয়নপত্র সংগ্রহকে কেন্দ্র করে ১২ ফেব্রুয়ারি ওই এলাকা রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল। দু’দলের তাণ্ডবের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান কলকাতা পুলিশের এসআই তাপস চৌধুরী। পুলিশকর্মী খুনের অভিযোগ ছাড়াও হাঙ্গামা, সরকারি কর্মীদের কাজে বাধাদান, মারধর, অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে অভিযোগ আনা হয় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে। পুলিশ-হত্যায় মূল অভিযুক্ত সুহান ও ইবনে গ্রেফতার হলেও তৃণমূলের বরো চেয়ারম্যান ইকবাল এখনও অধরা। কংগ্রেস নেতা মোক্তার আহমেদ-সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে হত্যার চেষ্টা, কর্তব্যরত পুলিশের কাজে বাধাদান, অস্ত্র এবং বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়েছে। ধরাও পড়েছেন মোক্তার।
আলিপুর আদালতে মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে এ দিন মোক্তার, তাঁর সঙ্গী মোস্তাক এবং ইবনে-সুহানকে তোলা হয়। অভিযুক্তদের আরও সাত দিন পুলিশি হাজতে রাখার আর্জি জানান সরকার পক্ষের বিশেষ আইনজীবী নবকুমার ঘোষ। তাঁর বক্তব্য ছিল, মোক্তার-মোস্তাকেরা ভুল তথ্য দিয়ে গোয়েন্দাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। তদন্তের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের হদিস দিতে পারেন বলে মোক্তারেরা গোয়েন্দাদের জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের নিয়ে কয়েকটি জায়গায় হানা দিলেও সেখানে কিছুই মেলেনি। জেরায় ওই কংগ্রেস নেতা ফের জানিয়েছেন, এ বার নিশ্চিত ভাবে কিছু তথ্যের হদিস দিতে পারবেন। সেই কারণেই তাঁদের পুলিশি হেফাজতে রাখা দরকার। নবকুমারবাবু বিচারককে বলেন, “আগেকার দিনে জেরার পদ্ধতি অন্য রকম ছিল। এখন জেরার সময় অভিযুক্তের মানবাধিকার এবং আত্মমর্যাদা রক্ষার বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হয়। তাই তদন্তকারীদের অতিরিক্ত কিছুটা সময় লাগে।”
ইবনে-সুহানদের আইনজীবী বিকাশ গুছাইত ওই দুই অভিযুক্তকে গোয়েন্দা হেফাজতে পাঠানোর আর্জির বিরোধিতা করেন। মোক্তার-মুস্তাকদের আইনজীবী তরুণ রায়চৌধুরী এবং তুলসী মুখোপাধ্যায়ও তাঁদের মক্কেলদের জামিনের আবেদন জানান। তরুণবাবুরা জানান, কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন মোক্তার। ২১ মার্চ মুম্বইয়ে দলীয় সম্মেলনে আমন্ত্রণ পেয়েছেন তিনি। তাঁর সামাজিক সম্মান রয়েছে। তদন্তকারীরা এখনও পর্যন্ত তাঁর কাছ থেকে আইনবিরুদ্ধ কোনও নথি উদ্ধার করতে পারেননি। তা ছাড়া মোক্তার ও মোস্তাক দু’জনেই অসুস্থ। তাই যে কোনও শর্তে জামিন মঞ্জুর করার আর্জি জানান ওই আইনজীবীরা।
বিচারক সুরথেশ্বর মণ্ডল সকলকেই ১৮ মার্চ পর্যন্ত জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। |