উল্টোডাঙা উড়ালপুলে দুর্ঘটনার পরে নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সোমবার জানান, কেএমডিএ এলাকার সব সেতু ও উড়ালপুলে যানবাহনের গতির ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়া হবে। নিয়মকানুন কঠোর করা হবে পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রেও।
পুরমন্ত্রী জানান, কেএমডিএ-র অধীনে যে-সব উড়ালপুল রয়েছে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকেরা শীঘ্রই সেগুলির স্বাস্থ্যের হাল খতিয়ে দেখবেন। তার পরে ওই সব উড়ালপুলের নজরদারির দায়িত্ব দেওয়া হবে বেসরকারি সংস্থাকে।
উড়ালপুল বা সেতুতে যানবাহনের গতির ঊর্ধ্বসীমা কী হবে? ফিরহাদ জানান, সেতু ও উড়ালপুলে গাড়ির গতি কোনও ভাবেই ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটারের বেশি হবে না। আর কোনও লরি ২০ টনের বেশি পণ্য নিয়ে সেগুলিতে উঠতে পারবে না।
কিন্তু মন্ত্রীর এই সব ঘোষণার বাস্তব প্রয়োগ নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। অভিজ্ঞতা বলছে, যে-কোনও দুর্ঘটনার পরেই সরকার নানা রকম বিধিনিষেধের কথা ঘোষণা করে। কিন্তু কয়েক দিন যেতে না-যেতেই পরিস্থিতি আবার আগের মতো হয়ে দাঁড়ায়। যে-ভিআইপি রোডের উপরে রবিবার উড়ালপুল ভেঙে পড়েছে, তার থেকে কিছু দূরেই কেষ্টপুরে ২০০৮ সালে বাগজোলা খালে বাস পড়ে ২০ জনের মৃত্যু হয়। বেপরোয়া ভাবে বাস চালাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন চালক। তার জেরে খালে পড়ে যায় যাত্রী বোঝাই বাস। তৎকালীন রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছিল, ভিআইপি রোডে গাড়ির গতি পরীক্ষার যন্ত্র বসানো হবে। রাস্তার ধারের স্তম্ভে গাড়ির সর্বোচ্চ গতি লিখে দেওয়া হবে। বিপজ্জনক ভাবে গাড়ি চলছে কি না, নজর রাখবে ট্রাফিক পুলিশ।
এ দিনও পুরমন্ত্রী জানিয়েছেন, উড়ালপুলে যান চলাচলের ক্ষেত্রে যে-সব নিয়ম করা হচ্ছে, তা মানা হচ্ছে কি না, পুলিশই তা দেখবে। কেষ্টপুরের দুর্ঘটনার পরেও এ-সব দেখভালের দায়িত্ব ছিল পুলিশের উপরেই। কিন্তু সেই দুর্ঘটনার পাঁচ বছর পরে ভিআইপি রোডের ছবিটা মোটেই আশাব্যঞ্জক নয়। বাসের রেষারেষিতে ছোটখাটো দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে। অফিসের ব্যস্ত সময়েও দু’-একটি জায়গা ছাড়া ট্রাফিক পুলিশের দেখা পাওয়া ভার। গাড়ির গতি মাপার যন্ত্র বসেনি এখনও। গতির ঊর্ধ্বসীমা জানিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থাটুকুও হয়নি।
পুরমন্ত্রী অবশ্য এ দিন জানান, শহরের বিভিন্ন উড়ালপুলে গাড়ির সর্বোচ্চ গতি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে-উড়ালপুলের দুর্ঘটনাকে ঘিরে মন্ত্রীর এই ঘোষণা, তার উপর দিয়েই সন্ধ্যার পরে বেপরোয়া গতিতে লরি চলাচল করত এত দিন। ওই উড়ালপুলের নিরাপত্তার দায়িত্বে যৌথ ভাবে রয়েছে কলকাতা পুলিশ ও বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ। তা সত্ত্বেও একের এক আলো চুরি হয়ে উড়ালপুলের অনেকটা অংশ অন্ধকারে পড়ে ছিল অনেক দিন। |