কাজের ফাঁকেই দিনভর ‘ব্রিজ-সাফারি’
মোবাইলে ছবি উঠছে একের পর এক। বিভিন্ন দিক থেকে ভাঙা উড়ালপুলের ছবি তুলতে তুলতে কখন যে খালের ধারে চলে গিয়েছেন, সে খেয়াল নেই মধ্যবয়স্ক ওই ব্যক্তির। শেষ পর্যন্ত পাশে দাঁড়ানো এক জনের ডাকে ঘোর কাটল তাঁর “আরে দাদা, খালের জলে পড়ে যাবেন যে!”
উল্টোডাঙার ভাঙা উড়ালপুলের সামনে দিনভরের চিত্রটা ছিল এ রকমই। পাশের রাস্তা দিয়ে যাঁরাই যাচ্ছেন, তাঁরাই দাঁড়িয়ে পড়ছেন। পকেট থেকে বেরিয়ে আসছে মোবাইল। ভাঙা উড়ালপুল দেখতে আসার জন্য রীতিমতো প্রস্তুতিও নিয়েছেন কেউ কেউ। ছবি তুলেছেন দামি ক্যামেরা দিয়েও।
সোমবার সকালে অফিসের ব্যস্ত সময়ে ভিআইপি রোডের উল্টোডাঙা সংলগ্ন রাস্তায় যানজট। হাডকোর মোড় এড়িয়ে ইএম বাইপাস ধরতে সব গাড়িই যাচ্ছে স্লিপ রোড ধরে। ওই পথে যেতে যেতে বাঁ দিকে তাকালেই চোখে পড়ছে উড়ালপুলের ভাঙা অংশ। আর তখনই গাড়ির কাচ নামিয়ে একের পর এক ছবি তুলে যাচ্ছেন অত্যুৎসাহী মানুষ। আবার স্কুটার, মোটরবাইক রাস্তার উপরে দাঁড় করিয়েও অনেকে ছবি তুলেছেন মোবাইলে। পুলিশের তাড়া খেয়ে তবেই সরেছেন সেখান থেকে।
ভেঙে পড়া সেতু এখন আকর্ষণের কেন্দ্রে। উৎসুক
মানুষের ভিড় লেগেই রয়েছে সারা দিন। ছবি: প্রদীপ আদক
অফিসযাত্রী থেকে স্কুলছাত্র ভাঙা উড়ালপুল দেখার তীব্র উৎসাহ ছিল সকলের মধ্যেই। এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সঙ্গে থাকা অভিভাবকদেরও যাবতীয় উৎকণ্ঠা ভুলে ছবি তুলতে দেখা গেল। অধিকাংশ মানুষেরই চোখে-মুখে বিস্ময়। কী ভাবে ভেঙে পড়ল অত বড় সেতু? অতি উৎসাহীদের জন্যই স্লিপ রোডে সোমবার সকাল থেকে হাঁটা নিষেধ করে দিয়েছিল পুলিশ। ভিআইপি রোড সংলগ্ন ওই রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলেন পুলিশকর্মীরা। তবু পুলিশের চোখে ফাঁকি দিয়ে অনেকেই স্লিপ রোডে ঢুকে পড়েছেন। কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মী বলেন, “আর কত আটকাব বলুন তো!”
উৎসাহীদের সত্যিই আটকানো যাচ্ছিল না। পুলিশ রাস্তায় দাঁড়াতে না দিলে তাঁরা চলে যাচ্ছিলেন ভিআইপি রোডের খালের পাশে। সেখানে দাঁড়াতে না দিলে উল্টোডাঙার সেতুর নীচে। অনেকে আবার এসেছেন দল বেঁধেও। যেমন দমদমের শ্যামনগরের কয়েক জন যুবক। উড়ালপুল ভেঙে পড়ার কথা শুনে স্বচক্ষে দেখতে চলে এসেছেন। তাঁদেরই এক জন, শম্ভু মল্লিক বলেন, “গতকাল থেকে টিভিতে দেখছি ভেঙে পড়া সেতুর ছবি। কত বার যাতায়াত করেছি এই সেতু দিয়ে। সেটাই কী ভাবে ভাঙল, দেখতে এলাম। মনে হচ্ছে যেন কোনও দানব উড়ালপুলটাকে উল্টে দিয়েছে!”
ভেঙে পড়া উড়ালপুল ঘিরে দিনভর পাক খেয়েছে নানা প্রশ্ন, ঝড় উঠেছে মতামতের। কেউ বলছেন, এ যেন দানবের কীর্তি। কেউ বলছেন, ভূমিকম্প হলে এমনটা দেখা যায়। কারও আবার প্রশ্ন, কী ভাবে খুলে গেল স্তম্ভের দুটো দিক? এটা নাশকতা নয়তো? শুধু দেখাই নয়, অনেকে আবার রীতিমতো বিশেষজ্ঞের মতামতও দিয়ে ফেলছেন। কী ভাবে ওই সেতুর এক অংশ ভেঙে পড়েছে, তা নিয়ে দিনভর চলেছে নানা জল্পনা। এ দিন বিভিন্ন সময়ে উড়ালপুলটি দেখে গিয়েছেন বিশেষজ্ঞেরাও। তাঁদের কথা শোনার পরেও মতামত দিয়েছেন অনেকেই।
মোবাইলে ছবি তোলারও বিরাম নেই। সোমবার। ছবি: শৌভিক দে
উড়ালপুল লাগোয়া শ্রীকৃষ্ণ কলোনির বাসিন্দাদেরও সারাদিন ধরেই ভিড় করতে দেখা গিয়েছে আশপাশে।
ভেঙে যাওয়া সেতুর অংশের আশপাশে নিরাপত্তার কারণে দড়ি দিয়ে ব্যারিকেড করে দিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু অনেকেই সেই নিষেধ মানেননি। অফিসটাইমে ব্যারিকেডের মধ্যে যাওয়ার ব্যাপারে কড়াকড়ি করলেও পরের দিকে পুলিশও অনেকটাই শিথিল হয়ে যায়। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই উড়ালপুল ঘিরে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে।
এ দিন ওই উড়ালপুলে ই এম বাইপাস থেকে ভিআইপি রোডের দিকে যাওয়ার রাস্তায় ছোট গাড়ির চলার অনুমতি দিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু উড়ালপুলের ওই রাস্তাও যদি ভেঙে পড়ে, এই আশঙ্কায় হাডকোর মোড়ে তীব্র যানজট সত্ত্বেও অনেকেই উড়ালপুলের রাস্তা ব্যবহার করেননি। তবে যাঁরা ওই রাস্তা ব্যবহার করেছেন, তাঁদের অনেকেই থেমে গিয়েছেন উড়ালপুলের মাঝখানে। সেখান থেকে পাশে তাকালেই সবচেয়ে কাছ থেকে দেখা যাচ্ছে উড়ালপুলের ভাঙা অংশ। উড়ালপুলের মাঝখানে কোনও পুলিশি টহলও নেই। তাই নিশ্চিন্তে দেদার ছবি তুলে নিয়ে গিয়েছেন অনেকেই।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.