সকাল সাড়ে ন’টা। শ্রীভূমির কাছে যানজটে থমকে গাড়ি। গাড়ির কাচে লেখা ‘মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী’। ভিতরে দুই পরীক্ষার্থী। সামনে খোলা খাতার দিকে নয়, উৎকণ্ঠিত মুখে বাইরের দিকে তাকিয়ে দু’জনেই। উৎকণ্ঠা স্পষ্ট তাদের অভিভাবকের চোখে-মুখেও। সামনে যতদূর দেখা যায় শুধু সার দিয়ে দাঁড়ানো গাড়ি। ভিতরে বসা পরীক্ষার্থী শৌনক পাণ্ডা জানাল, সোমবার তাদের অঙ্ক পরীক্ষা। সিট পড়েছে সেন্ট লরেন্স স্কুলে। বাগুইআটি থেকে ভিআইপি রোড ধরে বাঙুর পর্যন্ত এসেই যানজটে আটকে যেতে হয়েছে। শৌনকের অভিভাবক বললেন, “উল্টোডাঙার সেতু ভেঙে পড়ার পরে যানজটের আশঙ্কায় অন্য দিনের চেয়ে অনেক আগে বেরিয়েছিলাম।” তাঁর প্রশ্ন, “আর কত তাড়াতাড়ি বেরোব? যে ভাবে গাড়ি এগোচ্ছে, তাতে উল্টোডাঙা পৌঁছতেই তো এক ঘণ্টা লেগে যাবে মনে হচ্ছে!”
সকাল দশটা পনেরো। লেকটাউন থেকে ভিআইপি রোড ধরে ইএম বাইপাসে যেতে হাডকোর মোড় এড়িয়ে যাওয়ার পুরনো রাস্তা অর্থাৎ স্লিপ রোডের পুরোটাই জট পাকিয়ে রয়েছে। |
উড়ালপুল ভেঙে পড়ার পরে বাইপাসমুখী অধিকাংশ গাড়ির এখন এই রাস্তাটাই ভরসা। তুমুল যানজটের মধ্যেই আবার বাঁ দিকে ভেঙে পড়া উড়ালপুলের অংশ দেখতে অনেকে গাড়ি থামিয়ে দিচ্ছেন। ফলে গাড়ির গতি আরও আস্তে হয়ে যাচ্ছে। পিছন থেকে সাইরেন বাজিয়ে চলেছে অ্যাম্বুল্যান্স। সামনের গাড়ি ভাঙা উড়ালপুল দেখতেই ব্যস্ত। শেষমেশ পুলিশের তাড়া খেয়ে হুঁশ ফিরল চালকের। কিন্তু সামনেই বা এগোনোর জায়গা কোথায়? সল্টলেকে ঢোকার মুখে সরু রাস্তায় তখন যানজট সামলাতে হিমশিম পুলিশ। বাইপাসমুখী কিছু ছোট গাড়ি সল্টলেকের এএ ব্লক দিয়ে ঘুরিয়েও সামাল দেওয়া দায়। ব্লকের রাস্তাতেও যানজট দেখে এক বাসিন্দার ক্ষোভ, “এ রকম কতদিন চলবে কে জানে!’’
সকাল সাড়ে দশটা। উল্টোডাঙা স্টেশনের কাছে অটোর লম্বা লাইন। যাঁরা ট্রেনে এসে সল্টলেকের বিভিন্ন অফিসে যান, তাঁদের বেশির ভাগকেই দাঁড়াতে হচ্ছে কুড়ি-পঁচিশ মিনিট। কারণ হাডকোর মোড়ে যানজটে ফেঁসে অধিকাংশ অটোরই স্টেশনে আসতে দেরি হচ্ছে। বহুক্ষণ পরে অটো এলে লাইন ভেঙে অফিসযাত্রীরা ঝাঁপিয়ে পড়ছেন তার উপরে। এক অফিসযাত্রী বলেন, “বাসে যাওয়ার উপায় নেই। হাডকোর মোড়ে বাসগুলো যানজটে দীর্ঘক্ষণ আটকাচ্ছে। অটো তবু গলির রাস্তা দিয়ে চলে যায়।” অটোচালকেরা অবশ্য জানাচ্ছেন, গলির রাস্তা ধরে এ দিন লাভ হয়নি। কারণ, হাডকোর মোড় ধরে সল্টলেকে ঢোকার দু’টি রাস্তার সামনেই লম্বা গাড়ির লাইন।
ভিআইপি রোড, উল্টোডাঙায় অফিসটাইমের ঘণ্টাতিনেক এ ভাবেই নাকাল হয়েছেন নিত্যযাত্রীরা। পরীক্ষার্থীর গাড়ি থেকে অ্যাম্বুল্যান্স, স্কুলের পুলকার থেকে অফিসযাত্রীদের চার্টাড বাস রেহাই পায়নি কেউই। অবস্থা সামাল দিতে কলকাতা পুলিশের সঙ্গে পথে নামে বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশও। উল্টোডাঙার গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলিতে পুলিশ থাকলেও গাড়ির গতি ছিল খুব কম। উড়ালপুলের বাইপাস থেকে ভিআইপি রোডমুখী রাস্তা ঠিক থাকলেও ওই পথে গাড়ি কমই চলেছে। ফলে বাইপাস থেকে অধিকাংশ গাড়িই ভিআইপি রোড ধরতে হাডকোর মোড় পেরিয়েছে। এর জেরে গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায় পাল্লা দিয়ে বেড়েছে যানজটও। |
গাড়িতে বসে উৎকণ্ঠার অপেক্ষা এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর। সোমবার, উল্টোডাঙা মোড়ে। |
পুলিশের মতে, ওই এলাকায় যানজট হয় মূলত দু’টি কারণে। এক দিকে, ভিআইপি রোডে যানজট দেখে বহু গাড়ি, বিশেষত অটো শ্রীভূমির সার্ভিস রোড ধরে এসে দক্ষিণদাঁড়ির মোড় থেকে ভিআইপি রোডে উঠতে যাচ্ছে। ফলে ভিআইপি রোডের দু’দিকেই আটকে যাচ্ছে গাড়ি। আবার, এখন যে রাস্তা ধরে গাড়ি ভিআইপি রোড থেকে বাইপাসে উঠছে, সেটি নানা কারণে সরু হয়ে যাওয়ায় গাড়ি এগোতেই পারছে না। এ দিন বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের এসিপি (ট্রাফিক) সমরেন্দ্রনাথ দাস বলেন, “উড়ালপুল চালুর পরে ভিআইপি রোড থেকে বাইপাসে যাওয়ার পুরনো রাস্তায় গাড়ি খুব কম চলত। সেই সুযোগে এলাকাবাসীরা রাস্তার উপরেই গুমটি বা রিকশা স্ট্যান্ড বানিয়ে ফেলেছেন। রবিবার থেকেই সে সব সরিয়ে ফেলা শুরু হয়েছে। দক্ষিণদাঁড়ি দিয়ে ভিআইপি রোডে গাড়ি ঢোকাও বন্ধ। আশা করা যায়, এই সমস্যা পরের দিন থেকে অনেকটাই কমে যাবে।” সোমবার দুপুরের দিকে যানজট কিছুটা কমলেও সন্ধ্যার দিকে ফের তা বাড়ে।
অন্য দিকে, এ দিন চিংড়িহাটা মোড় থেকে কৈখালির হলদিরাম মোড়— সর্বত্রই রাস্তার ধারে পোস্টার লাগায় কলকাতা পুলিশ। তাতে লেখা: ‘ভিআইপি মোড়ের যানজট এড়াতে হলদিরাম মোড় থেকে নিউ টাউনের রাস্তা ব্যবহার করুন।’
কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ আদক এ দিন বলেন, “শুধু পোস্টারই নয়, চিংড়িহাটা মোড়ে দাঁড়িয়ে পুলিশও গাড়ির চালকদের অনুরোধ করেছে নিউ টাউনের রাস্তা ব্যবহার করতে। সব মিলিয়ে প্রচুর গাড়ি ওই পথ ধরে।”
|