বাড়তি গ্যাস উত্তোলনের আশায় ভর করে রাজ্যে আরও ২,৫০০ কোটি টাকা লগ্নির সিদ্ধান্তেই এগোচ্ছে এসার গোষ্ঠী। আইনি বাধা কাটায় ৫০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে প্রকল্প সম্প্রসারণের কাজ শুরু হচ্ছে শীঘ্রই।
প্রকল্পে লগ্নি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি আগেই দিয়েছিল এসার গোষ্ঠী। সোমবার তারা পাকাপাকি ভাবে জানাল, পরিবেশ মন্ত্রকের ছাড়পত্র মেলায় এ রাজ্যে ‘কোল-বেড-মিথেন’ (সিবিএম) গ্যাস প্রকল্পে আরও ২,৫০০ কোটি টাকা লগ্নি করা হবে। সম্প্রতি দফায় দফায় জমি আন্দোলনের জেরে বর্ধমানের কাঁকসা ও লাউদোহা ব্লকে এসার-এর সিবিএম গ্যাস প্রকল্পের কাজ ব্যাহত হয়। অভিযোগ, সংস্থা নিজে জমি কিনলেও বাড়তি দাম চেয়ে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের মদতে আন্দোলনে নামে জমিদাতাদের একাংশ। সংস্থার কর্মীদের আটকে রাখার অভিযোগও ওঠে। স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি শেষ পর্যন্ত সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করতে হয় শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপ্যাধ্যায়, রাজ্যের মুখ্য সচিব সঞ্জয় মিত্র প্রমুখকেও।
এখনও পর্যন্ত এ রাজ্যে সিবিএম গ্যাস উত্তোলনের জন্য রানিগঞ্জে ১৩৫টি কুয়ো খনন করেছে সংস্থা। এর ৫৭টি থেকে বাণিজ্যিক ভাবে গ্যাস তোলা হচ্ছে। সংস্থা সূত্রে খবর, সব মিলিয়ে এখনও পযর্ন্ত লগ্নি হয়েছে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। এ বার রানিগঞ্জ, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ ও ওড়িশায় ৫টি নতুন ব্লকে গ্যাস উত্তোলনে পরিবেশ মন্ত্রকের ছাড়পত্র মিলেছে। এর মধ্যে এ রাজ্যের রানিগঞ্জ ব্লক বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া জেলায় ছড়িয়ে। মোট এলাকা ৫০০ বর্গ কিলোমিটার। বেশিরভাগটাই বর্ধমানে।
তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর গত বছর শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেই সংস্থার সিইও ইফতিকার নাসির আশ্বাস দেন, এ রাজ্যে তাঁরা আরও অন্তত ২,০০০ কোটি টাকা লগ্নি করবেন। হলদিয়ার ‘বেঙ্গল লিডস’-এ এসেও একই কথা বলেন তিনি। সেই হিসেব মাথায় রেখে শিল্পমন্ত্রীও রাজ্যে নতুন লগ্নির তালিকায় রেখেছিলেন এসারের সম্প্রসারণ প্রকল্পকে। এ দিন নাসের জানান, আগামী অর্থবর্ষ থেকেই ওই ব্লকে আরও ২০০টি কুয়ো খোঁড়ার কাজ শুরু হবে। কুয়ো খোঁড়া, পরিকাঠামো তৈরি ও অনুষঙ্গিক কাজে লগ্নি হবে ২,৫০০ কোটি। ভবিষ্যতে সব মিলিয়ে এই অঞ্চলে ৬৫০টি কুয়ো খোঁড়ার পরিকল্পনা তাঁদের। এখন দৈনিক ৬০ হাজার ঘন মিটার গ্যাস উত্তোলন করে সংস্থা। তাদের দাবি, শীঘ্রই তা বেড়ে ৩০ লক্ষ ঘন মিটার হবে।
প্রকল্পের কাজে সাম্প্রতিক গোলমাল সত্ত্বেও আগামী দিনে এ রাজ্যে কর্মকাণ্ড বাড়ানোর ব্যাপারে আশাবাদী সংস্থা। নাসির জানান, স্থানীয় প্রশাসন-সহ রাজ্য সরকার ও এলাকার মানুষের উপর তাঁদের আস্থা আছে। তাঁর বক্তব্য, এই প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এলাকায় সামাজিক ও আর্থিক উন্নতির দিশা দেবে। তৈরি হবে কর্মসংস্থান। সংস্থার সামাজিক দায়বদ্ধতা প্রকল্পও এলাকার উন্নতির সহায়ক হবে বলে তাঁর দাবি।
বস্তুত, এসারের এই প্রকল্পের উপর নির্ভর করছে পানাগড় শিল্প তালুকের ভবিষ্যৎও। কারণ সেখানে ম্যাটিক্স-সহ বিভিন্ন সংস্থার নানা প্রকল্প এসার-এর উপর নির্ভরশীল। যেমন, ওই সিবিএম দিয়ে সার তৈরি করবে ম্যাটিক্স। অন্যরা উৎপাদন খরচ কমাতে কয়লা, তেলের বদলে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করবে ওই গ্যাস। এসারের সিবিএম-এর উপর ভরসা রেখেই পানাগড়ে লগ্নি করার কথা ভেবেছে হিন্দুস্তান ন্যাশনাল গ্লাস-ও। |