চলতি খাতে বাণিজ্যিক লেনদেনে ঘাটতি কমাতে প্রয়োজন বিদেশি লগ্নি। তাই অন্তত এই মুহূর্তে তাকে স্বাগত জানানোর কোনও বিকল্প নেই বলে বাজেট বক্তৃতাতেই জানিয়ে দিয়েছিলেন পালানিয়প্পন চিদম্বরম। তাই এ বার সেই বিনিয়োগের খোঁজে ফের বিদেশ সফরে যাচ্ছেন তিনি। সংসদে অর্থ বিল পাশ হলেই অর্থমন্ত্রীর গন্তব্য আমেরিকা, জাপান ও কানাডা। এই একই কারণে বাজেটের ঠিক আগেও লন্ডন-ফ্রাঙ্কফুর্ট-হংকং-সিঙ্গাপুর ঘুরে এসেছিলেন তিনি। ভারতে লগ্নির ক্ষেত্রে সমস্যা বুঝতে বিদেশি সংস্থাগুলির সঙ্গে আলোচনায় বসবে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সেবি-ও।
বাজেটের পরে সোমবার শিল্পমহলের সঙ্গে বৈঠকে চিদম্বরম স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, রাজকোষ ঘাটতির থেকেও তাঁর কাছে বেশি চিন্তার কারণ চলতি খাতে বাণিজ্যিক লেনদেনে ঘাটতি (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ডেফিসিট)। গুগল প্লাসে নেট-নাগরিকদের মুখোমুখি হয়েও অর্থমন্ত্রীর দাবি, তাঁর আগে কেউ এই ঘাটতি নিয়ে মাথা ঘামাননি। তাঁর বক্তব্য, এই ঘাটতি মেটানোর মূল উপায় তিনটি (১) আমদানি কমানো (পেট্রো পণ্য বা কয়লার ক্ষেত্রে যা করা সমস্যা) (২) রফতানি বাড়ানো (ইউরোপ-সহ উন্নত দুনিয়ার বেহাল অর্থনীতির জেরে যা করা মুশকিল) অথবা (৩) দেশে ডলার আনতে বিদেশি লগ্নি টানা। বাকি দুই দাওয়াই প্রয়োগ এখনই সে ভাবে সম্ভব না-হওয়ায় আপাতত বিদেশি লগ্নির দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে তাঁকে। আর সেই কারণেই ওই ত্রিদেশীয় সফর।
শুধু বিদেশি বিনিয়োগকারী নয়। এ দেশের শিল্পপতিদের কাছেও লগ্নির জন্য আহ্বান জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তাঁর যুক্তি, টানাটানির সংসারেও কেন্দ্র বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ঘোষণা করেছে। ফিকি সভাপতি নয়না লাল কিদোয়াই, অ্যাসোচ্যামের রাজকুমার ধুত, সিআইআই-এর আদি গোদরেজদের কাছে চিদম্বরমের প্রশ্ন, “কেন হাতে টাকা থাকা সত্ত্বেও বিনিয়োগ করছে না বেসরকারি সংস্থাগুলি?” সমস্যা বুঝতে মুম্বই, কলকাতা, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদের মতো শহরে গিয়ে শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠকে বসার পরিকল্পনাও জানিয়েছেন তিনি। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিও ভাঁড়ারের বিপুল নগদ লগ্নি করছে না বলে ‘অভিযোগ’ করেছেন তিনি।
আজ অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় এসইউভি-র উপর বাড়তি ৩% কর বসানো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে গাড়ি শিল্প। তাদের যুক্তি, গ্রামে উঁচু-নিচু রাস্তার জন্য বেশি ব্যবহার হয় এ ধরনের গাড়িই। আবার নেটে সাধারণ গৃহবধূর প্রশ্ন, কেন বাড়তি কর চাপল মোবাইলে? সরকার মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণেই বা কী করছে?
অর্থমন্ত্রীর জবাব, ৯৮% এসইউভি-ই চলে ভর্তুকির ডিজেলে। তাই কর বসানোর সিদ্ধান্ত। এ জন্য গাড়ি শিল্পে সামান্য প্রভাব পড়লেও, সুদ কমলেই ফের বিক্রি বাড়বে। মূল্যবৃদ্ধি কমাতেও আরও কিছু পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
কর ফাঁকি প্রতিরোধ আইনকে (জিএএআর) কার্যত হিমঘরে পাঠিয়ে আজ বণিকসভাগুলির প্রশংসা কুড়িয়েছেন চিদম্বরম। একই সঙ্গে তাঁর ইঙ্গিত, ওই আইন ব্যবহার করে দুই বহুজাতিক সংস্থার মধ্যে হওয়া অতীতের চুক্তিতে যাতে কর না চাপে, তা নিশ্চিত করতে সচেষ্ট হবেন তিনি। আদালতের বাইরেই মিটিয়ে নিতে চাইবেন ভোডাফোনের সঙ্গে কর সংক্রান্ত জটিলতা। আশ্বাস দিয়েছেন, মরিশাসের মতো দেশ হয়ে আসা লগ্নির উপর কর চাপানোর বিষয়ে একতরফা সিদ্ধান্ত না নেওয়ারও।
বাজেটের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন সংস্থাগুলিকেও বার্তা দিতে চেয়েছিলেন চিদম্বরম। এ দিন তার কিছুটা ফল পেয়েছেন তিনি। কারণ, অর্থমন্ত্রী যে ভাবে বাজেটে ঘাটতি কমানোর কথা বলেছেন, তার প্রশংসা করেছে মুডিজ। মূল্যায়ন সংস্থাটির বক্তব্য, “বৃদ্ধির ঢিমে গতি এবং ভোট দোরগোড়ায় হওয়া সত্ত্বেও আর্থিক শৃঙ্খলায় ফেরার চেষ্টা বাস্তবসম্মত।”
ঘাটতিতে রাশ টানার বিষয়ে বাজেটে জোর দেওয়ার পর এ বার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পক্ষেও সুদ কমানো সহজ হবে বলে অর্থমন্ত্রীর ধারণা। ঘাটতি কমাতে কেন্দ্রের করা পদক্ষেপের খতিয়ান নিয়ে শুক্রবারই শীর্ষ ব্যাঙ্কের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন তিনি। |